ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

জান্নাতের আশায় দুই নারী সাহাবির আত্মত্যাগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

জান্নাতের আশায় দুই নারী সাহাবির আত্মত্যাগ

দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানজনক পরিণতির প্রত্যাশ্যা ঈমানেরই বহিঃপ্রকাশ। কেননা মুমিন বিশ্বাস করে, আল্লাহ পরকালে তার জন্য উত্তম প্রতিদান নির্ধারণ করে রেখেছেন। সুতরাং সে পার্থিব জীবনে সেই প্রতিদান লাভের জন্য আমল করে এবং অপেক্ষা করে। আর অপেক্ষার সময়টুকুতে আল্লাহর অনুগ্রহের প্রত্যাশা করে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অগণন জীবিকা দান করেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১২)

তবে মুমিন পার্থিব জীবনের ওপর পরকালীন জীবনকে প্রাধান্য দেয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সেসব মানুষের নিন্দা করেছেন, যারা জাগতিক জীবনকে প্রাধান্য দেয় এবং মুমিনদের চিরন্তন জান্নাত লাভে সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বরং তোমরা জাগতিক জীবনকে প্রাধান্য দাও। অথচ আখিরাতই উত্তম ও চিরস্থায়ী।’ (সুরা আ’লা, আয়াত : ১৭-১৮)

নারী সাহাবির জান্নাত লাভের আকাঙ্ক্ষা : এখানে এমন দুজন নারী সাহাবির কথা উল্লেখ করা হলো যারা পার্থিব জীবনের দুঃখ-কষ্টের ওপর পরকালীন মুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। যথা—

১. আতা ইবনে আবু রাবাহ (রা.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতি নারী দেখাব না? আমি বললাম অবশ্যই। তখন তিনি বললেন, এই কালো বর্ণের নারীটি। তিনি নবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। নবী (সা.) বললেন, তুমি যদি চাও ধৈর্যধারণ করতে পার। তোমার জন্য আছে জান্নাত। আর তুমি যদি চাও, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তোমাকে আরোগ্য করেন। নারীটি বলল, আমি ধৈর্যধারণ করব। সে বলল, সে অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়, কাজেই আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমার লজ্জাস্থান খুলে না যায়। নবী (সা.) তাঁর জন্য দোয়া করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৫২)

২. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার জ্বর নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, আপনি আমাকে আপনার একান্ত প্রিয়জনদের কাছে প্রেরণ করুন। তিনি তাঁকে আনসারদের বসতিতে পাঠান। তা তাদের ছয় দিন ছয় রাত আক্রান্ত রাখে এবং মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে। নবী (সা.) তাদের বসতিতে এলে তারা তাঁর কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেন। তাই নবী (সা.) তাদের বাড়ি বাড়ি ও ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের রোগমুক্তির জন্য দোয়া করলেন। তিনি ফিরে এলে এক আনসার মহিলা তার অনুসরণ করেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ! অবশ্যই আমি একজন আনসার মহিলা এবং আমার পিতাও একজন আনসার। অতএব, আপনি আনসারদের জন্য যেরূপ দোয়া করে এসেছেন, আমার জন্যও অনুরূপ দোয়া করুন। তিনি বলেন, তুমি কি চাও? তুমি চাইলে আমি তোমার রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি। আর যদি তুমি চাও তবে ধৈর্য ধারণ করতে পারো, তোমার জন্য হবে জান্নাত। সে বলল, বরং আমি ধৈর্য ধারণ করব, তবু জান্নাতপ্রাপ্তিকে বিঘ্নিত করব না।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫০২)। আল্লাহ সবার অন্তরে জান্নাত লাভের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে দিন। আমিন।

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

গাজীপুর কথা