ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বঙ্গবন্ধু এক অবিনাশী আত্মা

প্রকাশিত: ১৬:২১, ১৯ মার্চ ২০২২

বঙ্গবন্ধু এক অবিনাশী আত্মা

রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন মানেই বাংলাদেশের বিশেষ কিছু। বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ; বাংলাদেশের অবিনাশী আত্মা। এমন সুদর্শন দীর্ঘকায় সুপুরুষ, চরিত্রে ব্যক্তিত্বে বীরত্বে বাঙালি নেতা পৃথিবীতে অতীতে কখনও আসেননি। ভবিষ্যতেও আর আসবেন বলে মনে হয় না। হাজার বছরে এমন মহানায়কের আবির্ভাব ঘটে না রাজনীতিতে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজ শুভ জন্মদিন। উৎসবমুখর মহা আনন্দের-মহোৎসবের এদিনে তার স্মৃতির প্রতি জাতির আবেগমথিত হৃদয়ের অতল গভীর থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। বিশ্ব রাজনীতিকে কাঁপিয়ে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার মোহনবাঁশিতে জাদুকরী সুর তিনি তুলেছিলেন। একটি জাতিকে তিনি এক মোহনায় মিলিত করে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ডাক। ’৭১-এর সেই ৭ মার্চ ১৮ মিনিটের ভাষণে কী আবেগ, কী ভাষার জাদু, কী যুক্তি আর যুদ্ধের রণকৌশল!
রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন মানেই বাংলাদেশের বিশেষ কিছু। বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ; বাংলাদেশের অবিনাশী আত্মা। এমন সুদর্শন দীর্ঘকায় সুপুরুষ, চরিত্রে ব্যক্তিত্বে বীরত্বে বাঙালি নেতা পৃথিবীতে অতীতে কখনও আসেননি। ভবিষ্যতেও আর আসবেন বলে মনে হয় না। হাজার বছরে এমন মহানায়কের আবির্ভাব ঘটে না রাজনীতিতে।
মহামানব জন্মেছিলেন টুঙ্গিপাড়ার শ্যামলছায়া গাঁয়ে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। ছেলেবেলায় বাবা-মা ডাকতেন ‘খোকা’ বলে। কিশোর বয়সেই মানুষের প্রতি অগাধ মায়া-মমতা। গরিবের পাশে দাঁড়ানো চরিত্রে দেখা যায়। অন্যায়ের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ানোর। মা আদরে প্রশ্রয় দিতেন। বাবা চাইতেন লেখাপড়া করবে। ব্যারিস্টার হবে। ছেলে অল্প বয়সেই পাঠ নিলেন রাজনীতিতে। কলকাতায় পাঠানো হলো পড়াশোনায়। সেখানেই ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয়। নেতৃত্বে সাহসে সাংগঠনিক ক্যারিশমায় রাজপথের প্রতিবাদে নজর কাড়লেন সবার। তরুণদের মুজিব ভাই হতে থাকলেন। তারপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়ালেন। স্নেহ-সান্নিধ্য পেলেন মহাত্মা গান্ধীর, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও পরে মওলানা ভাসানীর।
শেরেবাংলা সম্পর্কে দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও তার নেতা হলেন সোহরাওয়ার্দী। একজন আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ হিসেবে সততা, সাহস-নীতি ও আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে, দেশ ও মানুষের প্রতি গভীর মমতা নিয়ে তিনি রাজনীতির মঞ্চে নিজের আবির্ভাব ঘটালেন। সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রটি জিন্নাহ ইসলাম মুসলমান পাকিস্তান- এ চার অনুভূতি নিয়ে জন্ম নিলে শেখ মুজিবুর রহমান এটাকে মেনে নেননি।
এক বছর না যেতেই তিনি ’৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি রুমে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করলেন। পরের বছরই আওয়ামী লীগের জন্ম। কারাগারে বসে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও কর্মীদরদি মন আর সাংগঠনিক শক্তিতে তিনিই হলেন দলের প্রাণ-মধ্যমণি। ভাসানী বেরিয়ে গেলেন। সোহরাওয়ার্দীর আকস্মিক মৃত্যু, পাকিস্তানি শাসকদের কঠিন দুঃশাসন, তাদের প্রতাপশালী তাঁবেদার রাজনৈতিক শক্তি, সব প্রতিকূলতা তাকে রুখে দাঁড়াতে পারেনি। ভাষা আন্দোলনের সিঁড়িপথে জেল-জুলুম সয়ে একটি জাতিকে ছয় দফা থেকে স্বাধিকার-স্বাধীনতার পথে তিনি জাগালেন।
’৬৯ সালে ৩৮ মাসের কারাশৃঙ্খল ভেঙে তিনি গণ-অভ্যুত্থানে বের হলেন যখন তখন জাতির অবিসংবাদিত নেতাই নন, নয়নের মণি বঙ্গবন্ধু হয়ে গেলেন। তিনিই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন র্দুর্ধষ সাহসে লড়েছেন এবং সব পরিকল্পনায় কোথাও ভুল না করে সফল হয়েছেন। কোনো আলোচনার পথে নয়, কোনো গোপন রাজনীতির অন্ধকার পথেও নয়, প্রকাশ্য দিবালোকে জনগণের মাঝখানে দাঁড়িয়ে জনগণকে নিয়ে অকুতোভয় এক দুঃসাহসী নেতা হিসেবে এ বিপ্লবের বিরল ইতিহাস গড়েছেন। ’৭০-এর নির্বাচনে তিনি ঐক্য গড়েননি, নিজের ইমেজে দলকে নিরঙ্কুশ বিজয়ে জাতির নির্বাচিত একক নেতার উচ্চতায়ই বসাননি, স্বাধীনতার অগ্নিগর্ভ বাংলায় জাতিকে এক মোহনায় মিলিত করেছেন।
ত্যাগের কোনো বিকল্প নেই। তার পরিকল্পনায় মুক্তিযুদ্ধে কত রক্ত আর লড়াইয়ে বিজয়ী আমরা। ৫৫ বছরের জীবনে ৫০ বছরেই তিনি জাতির পিতা হলেন। একজন মহান নেতা এমনি হয় না। ৫০ বছরের ১৩ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। ফাঁসির রশি বার বার সামনে এসেছে, কবর খোঁড়া হয়েছে, আপস তার চরিত্রে ছিল না। দেশটাই বাড়ি, জনগণই তার পরিবার। এমন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা ও বিশ্বের তাবৎ শোষিত মানুষের হয়ে তেজোদীপ্ত ভরাট কণ্ঠের তেজস্বী ভাষণ ও কোমল হৃদয়ের উদার গণতান্ত্রিক নেতা বিশ্বরাজনীতিতে আসবেন না। ’৭১-এর মার্চে পাকিস্তানি শাসকদের অস্ত্রের শাসনকে অচল করে দিয়ে গোটা দেশে ক্ষমতায় না গিয়ে প্রতিটি নির্দেশ জনগণের মাঝে কার্যকর করে তিনিই বলতে পেরেছিলেন, আমিই রাষ্ট্র।
এই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশের আদর্শ। বাংলাদেশের আরেক নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানেই সৎ নির্লোভ চরিত্রে দেশ ও মানুষকে, জনগণের স্বার্থকে হৃদয়ের ভালোবাসায় ধারণ করে মানবকল্যাণে নিবেদিত করা। একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত মানবিক উন্নত আধুনিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ।
এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সত্যকে আড়াল করতে যে-যার মতো লজ্জাজনকভাবে মিথ্যাচার করেছেন। ইতিহাস বিকৃতির নির্লজ্জ বেহায়াপনায় যার যার মতোন বলেছেন ও লিখেছেন কিন্তু পাকিস্তানের গোয়েন্দা নথি থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে অবস্থান নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন প্রশাসনের অবমুক্ত দলিল, পরাজিত শক্তির লেখা বইসহ সবখানে বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার একমাত্র স্তম্ভ। গৌরবের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে পাশে থাকা ভারতের নথিপত্র থেকে পশ্চিমা গণমাধ্যমে মূল সত্য এখনও বহাল।
সব সূত্র বলছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেন এবং সে লক্ষ্য অর্জনে সফলতা-দক্ষতার সঙ্গে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম দুর্ধর্ষ এক সাহসী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা, মহানায়ক ঘোষক এবং মুক্তিযুদ্ধ তার ডাকেই সংঘটিত হয়েছে। সবকিছুর মূলে ছিল তারই পরিকল্পনা এবং নির্দেশ।
সমাজ ও রাজনীতি ‘নেতা’ বা ‘নায়ক’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে নিতে পারেন অনেকেই। মাঝে মাঝে অসাধারণ ক্যারিশমা-সম্পন্নরা ‘বড় নেতা’ অথবা ‘মহানায়কের’ আখ্যায়ও ভূষিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। তবে তারা প্রায় সবাই সমসাময়িক কালের নেতা, চলতি পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষাপটের নায়ক।
‘ইতিহাসের নায়ক’ হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ সব কালে, সব যুগে সৃষ্টি হয় না। যুগ-যুগান্তরের পরিক্রমায় হাতেগোনা এক-আধজনই শুধু ‘ইতিহাসের নায়ক’ হয়ে উঠতে পারেন। ইতিহাস তার আপন তাগিদেই ‘নায়কের’ উদ্ভব ঘটায়, আর সেই ‘নায়ক’ই হয়ে ওঠেন ইতিহাস রচনার প্রধান কারিগর ও স্থপতি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন তেমনই একজন কালজয়ী পুরুষ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী খুনি স্বৈরশাসকরা স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারার বিকৃত ইতিহাস ও মূল্যবোধের বিস্তার ঘটানোর পাঁয়তারা চালায়। খুনিরা ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক-স্বৈরাচার তিন দশক ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ভুল ইতিহাস শেখানোর অপচেষ্টা চালায়। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তার চেতনা ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির দূত- স্বাধীনতা ও শান্তির প্রতীক।
বাংলা ও বাঙালি যত দিন থাকবে, তিনি একইভাবে প্রোজ্জ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে, প্রতিটি মুক্তিকামী, শান্তিকামী, মানবতাবাদীর হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে- পথ দেখাবে। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে।


ড. কাজী এরতেজা হাসান
১৭ মার্চ, ২০২২

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন