ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

স্যার কে জি গুপ্তের সমাধি....!!

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ২৮ মার্চ ২০২২

স্যার কে জি গুপ্তের সমাধি....!!

কাল দুপুরের গরমটা কেমন জানি অসহ্য লাগছিল। সিএনজি থেকে কাওরাইদ বাজারে নেমে ভীষণ পিপাসা জেগেছিল। ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে কাওরাইদ বাজার পর্যন্ত যেতে কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল। 

যাক সে কথা, কাওরাইদ বাজারে ছিলাম। সেখানে একটি দোকানে বসে পানি খাচ্ছি আর চারদিকে দেখছি আর ভাবছি কাকে জিজ্ঞেস করবো স্যার কে জি গুপ্তের সমাধির বিষয়ে। সামনে বসা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম। উনি সাথে সাথে বলে উঠলেন "আপনার পেছনের বাউন্ডারির ভিতরেই রয়েছে। কিন্তু আপনার পরিচয় কি?  কেন খুজছেন সমাধি "। আমি সংক্ষেপে আমার উদ্দেশ্য ও বিধেয় বর্ননা করলাম। উনি উপযাজক হয়ে পথ দেখালেন " আসুন আমি নিয়ে যাচ্ছি "। যেতে যেতে ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন " আপা আপনি কোন ধর্মের?  "। এই প্রশ্ন আমার জন্য নতুন নয়। আমি এখন উচ্ছ্বাসের সাথেই যে কোন প্রশ্নের উত্তর দেই। 

ভিতরে গিয়ে খুশিতে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। 
শুধু স্যার কে জি গুপ্তের সমাধি নয়, এখানে তো পুরো একটি সমাধি ক্ষেত্র। আমি দেখতে গিয়েছিলাম শুধু কে জি গুপ্তের সমাধি। এখানে যে একটি সিমেট্রি আছে সেটি আমার জানা ছিল না। 

সমাধি ক্ষেত্রটি ব্রাহ্ম সমাজের একটি সমাধিভুমি। যেখানে কে জি গুপ্ত ছাড়াও রয়েছেন ব্রাক্ষ সমাজের আরও নানা মনীষীদের সমাধি। 

স্যার কে জি গুপ্ত কে ছিলেন ?  
স্যার কে জি গুপ্ত ছিলেন প্রথম ভারতীয় নাইট ও ষষ্ঠ আইসিএস অফিসার, এবং কাওরাইদের গুপ্ত এস্টেট জমিদারির উত্তর পুরুষ। 

কৃঞ্চগোবিন্দের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢাকার পোগজ স্কুলে। পরে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৬৭ সালে প্রবেশিকা এবং ১৮৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই বছর তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে ব্রিটেন যান। তিনি লিংকন্স ইন থেকে বার-এট-ল’ সম্পন্ন করেন। ১৮৭১ সালে তিনি আইসিএস (Indian Civil Service) উত্তীর্ণ হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনে যোগদানের মাধ্যমে কে.জি গুপ্ত কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি দীর্ঘ কর্মজীবনে মহকুমা প্রশাসক, জেলা প্রশাসক, আবগারি কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার, বোর্ড অব রেভিনিউ-এর সদস্যসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ব্রিটিশ-ভারতে ভাইসরয়ের ইন্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত করে। তিনি ছিলেন এ পদে প্রথম ভারতীয়। 

 ১৮৬৯ সালে তিনি ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ১৩০০ বঙ্গাব্দে তিনি নিজ জমিদারি এস্টেট কাওরাইদে ব্রাহ্মমন্দির নির্মাণ করেন। ১৮৭১ সালে ঢাকায় রামমোহন রায় লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি এবং তাঁর পিতা কালীনারায়ণ গুপ্ত ছিলেন ঢাকা ও ময়মনসিংহে ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি ১৯১৯ সালে নিজ এলাকা পাঁচদোনাতে ‘স্যার কে.জি গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়’ এবং কাওরাইদে ‘কালীনারায়ণ গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন।

কে.জি গুপ্ত তাঁর কর্মকান্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ‘কে.সি.এস.আই’ (Knight Commander of the Star of India) উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ছিলেন এ উপাধি প্রাপ্ত প্রথম ভারতীয়। ১৯২৬ সালের ২৯ মার্চ স্যার কে.জি গুপ্তর মৃত্যু হয়। তাঁর নামানুসারে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে ‘কে.জি গুপ্ত লেন’।  

এই সমাধিভুমিতে আরও রয়েছে কে জি গুপ্তের পত্নী, বাবা জমিদার কালি নারায়ন, পবিত্র কোরানের অনুবাদক ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের বোন, অতুল প্রাসাদ সেনের সমাধি। 

এখানে একটি ব্রাক্ষ মন্দিরও রয়েছে। যদিও বহুদিন সংস্কার করা হয় না। কিছুটা জীর্ন। কথা হলো এখানকার ব্রাক্ষ সমাজের প্রতিনিধি ঝর্না আপার সাথে। কথায় কথায় জানলাম ঢাকার ব্রাক্ষ সমাজের বর্তমান প্রতিনিধি রনবীর দাদার বোন উনি। আমার ট্রাভেল ডকুমেন্টারি " হরিপ্রভা তাকেদা "করতে গিয়ে রনবীন দাদার অনেক সাহায্য নিয়েছি। 

সিমেট্রি দেখবার পর সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে গিয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজন, ঝর্না আপা সবাই খুব সাহায্য করেছে। অথচ কারো সাথেই যোগাযোগ করে যাইনি। যে ভদ্রলোক প্রথম পথ দেখিয়েছিলেন উনার নাম মামুন। 

দুপুরে রনবীর দাদার চাপাচাপিতে ঝর্না আপার আথিতেয়তা গ্রহন করতে হয়েছে। ৬৪ জেলার কোনায় কোনায় এরকম কত শত ঝর্না আপা, মামুন ভাই আর রনবীর দাদার সাহায্য ও আথিতেয়তা নিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। 

আমাকে ভ্রমণের সময় যখন কেউ জিজ্ঞেস করে " আপা আপনার দেশের বাড়ি কোথায়  "। আমার বলতে ইচ্ছা করে, পুরো বাংলাদেশ আমার বাড়ি। এরকমই তো হবার কথা, তাই না?

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন