উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে লালমনিহাটে তিস্তার পানি।
শুক্রবার রাতে বিষয়টি ডেইলি বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার তিস্তার পানি দুই দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২ ও ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানের এই পানির ঢল সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। ফলে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এতে শুক্রবার নতুন করে আরো ৩০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মসিউর রহমান মামুন ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, তিনদিনের বন্যায় চেয়ে আজ শুক্রবার উজানের ঢলের গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলাকার নিচু ও উচু স্থানে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। চরাঞ্চলের গ্রাম গুলোর ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এরইমধ্যে তার এলাকার ৮ হাজার পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলার গড্ডিমারী পুরো ইউনিয়নটি একেবারে তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়িতে পানি আর পানি। হুমকীর মুখে পড়েছে সেখানকার রাস্তাগুলো। রাস্তার উপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় এলাকাবাসী বালির বস্তা দিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্ট করছে।
উপজেলার সানিয়াজান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ৯নং ওয়ার্ডের পারসেক সুন্দর, ৭নং ওয়ার্ডের নিজ সেক সুন্দর, ৩নং ওয়ার্ডের আরাজি সেক সুন্দর, ৮নং ওয়ার্ড ও ৬নং ওয়ার্ড চরে প্রায় আড়াই শতআধক পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। সানিয়াজান আরাজি এলাকায় তিস্তা নদীর ডান তীরের প্রধান বাঁধের অদুরে ইউনিয়ন পরিষদের মাটির বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধের উপর দিয়ে তিস্তা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় ৩নং ওয়ার্ডের আরাজি সেক সুন্দর গ্রামের বসত ঘর ও আবাদী জমিগুলো সম্পুর্ন ভাবে তলিয়ে গেছে। এই বাঁধটি বিধ্বস্থ্য হলে এলাকাটি বিলিন হবার ধারণাও করছেন এলাকাবাসী।
সিংগিমারী ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, এই ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি বয়ে যাচ্ছে। নদী সংলগ্ন বসবাসরত পরিবারগুলো সতর্কাবস্থায় থাকার জন্য বলা হয়েছে। তিস্তার বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এরইমধ্যে দুই সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি বাড়ির উঠানে হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা কবলিত পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করলেও এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের কোন সদস্য সরকারি ভাবে ত্রাণ সহায়তা পাননি।
হাতীবান্ধা উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, তার উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন তিস্তা নদীর অববাহিকায়। তিস্তায় সামান্য পানি বাড়লেই ওইসব ইউনিয়নের পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়েন। পানিবন্দীদের তালিকা জেলা অফিসে পাঠানো হয়েছে। এরইমধ্যে ত্রাণ বরাদ্দ এসেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, পানিবন্দী লোকজনের ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ৬৮ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রান সামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, উজানের ঢল ও বৃষ্টিাপাতের কারনে আমরা সর্তকাবস্থায় রয়েছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
গাজীপুর কথা