ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মাঘের মধ্যভাগে শীতে কাঁপছে সারাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৯ জানুয়ারি ২০২২

মাঘের মধ্যভাগে শীতে কাঁপছে সারাদেশ

এ বছর প্রায় পুরো মৌসুম স্বাভাবিক শীতের জন্য অপেক্ষা করেছে দেশ। শেষ পর্যন্ত মাঘের মধ্যভাগে এসে দেখা মিলেছে সেই শীতের। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির রেশ কাটতেই গত বৃহস্পতিবার থেকে শীতে কাঁপছে সারাদেশ। শহর-নগরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে সেই কাঁপুনি প্রাকৃতিক কারণেই বেশি। গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষের জন্য তা বয়ে এনেছে বাড়তি কষ্ট ও দুর্ভোগ। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বেশকিছু এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমবে। ফলে নতুন আরও কিছু এলাকা শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়তে পারে।
গতকাল সারাদেশের মধ্যে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সব জেলা ছাড়াও গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

দেশের প্রায় সব এলাকার আকাশ ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে। সূর্য উঠলেও অনেক এলাকাতেই রোদের কিরণ পৌঁছাচ্ছে না।
বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে চলে এলে মৃদু; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে ধরা হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, আজ শনিবার রাতের তাপমাত্রা আরও কমবে। পরবর্তী এক থেকে দু'দিন তাপমাত্রা একই রকম থাকবে। তবে সোম বা মঙ্গলবার থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আবার বাড়বে। ফেব্রুয়ারির ৪ বা ৫ তারিখে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তখন তাপমাত্রা আবার কমবে। তবে তা শুধু রাতের বেলায়। সে সময় আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে।

দেশের বেশিরভাগ এলাকায় শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। রংপুর শহরের তুলনায় তিস্তার চর এলাকায় শীতের প্রকোপ বেশি। শীতে জবুথবু জনজীবনে আরও বেশি আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠান্ডাজনিত নানা রোগব্যাধি, আছে কভিড ভীতিও। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নগরবাসী কেউ বাড়ির বাইরে আসছেন না। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুররা। উত্তরের জেলাগুলোতে সরকারি, বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় 'অপ্রতুল' বলেও দাবি করছেন কেউ কেউ। তবে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা বলেছেন, সরকারের ত্রাণ ভান্ডার থেকে আসা শীতবস্ত্র পর্যাপ্ত রয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে এগিয়ে আসছেন।

কুড়িগ্রামের রাজারহাটের কৃষি ও সিনপটিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান সমকালকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় অর্ধেক কমে শুক্রবার সকাল ৯টায় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে।

রংপুর আবহাওয়া কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে শীত পৌষের শুরুতে অনুভূত হওয়ার কথা ছিল, সেটি মাঘের মধ্যবর্তী সময়ে অনুভূত হচ্ছে। কয়েক দিন শীতের তীব্রতা থাকতে পারে।
এদিকে তিন দিন টানা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে শুরু হয়েছে মাঝারি পর্যায়ের শৈত্যপ্রবাহ। শুক্রবার সকালে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ওই জেলায়।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) পুলক জানান, বৃহস্পতিবার ৫৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫৫ জন ভর্তি হয়েছেন। রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। ঠান্ডায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান তিনি।
চলতি মৌসুমে ২০ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গায় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সে সময় তিন দিন গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও বরিশাল অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ ছিল। ২০২১ জানুয়ারিতে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে পারদ নামে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা দেশের সব রেকর্ড ভেঙে ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গিয়েছিল। এর আগে ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি সৈয়দপুরের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন