ঢাকা,  বুধবার  ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কুড়িগ্রামে তিস্তার ২০টি পয়েন্টে ভাঙন

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৬ জুন ২০২১

কুড়িগ্রামে তিস্তার ২০টি পয়েন্টে ভাঙন

তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা জাহেদুল ইসলাম। বাড়ির উঠানে বসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পরামর্শ করছিলেন কোথায় যাবে। নদী বাড়ী উঠানে এসে লেগেছে। সবার চোখে মুখে বিষন্নতার ছায়া। আকাশ-মেঘলা থেমে থেমে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ও বাতাস বইছিল। নদীর পানি বাড়ছে। উজান থেকে ঘোলা পানির স্রোত নদীর তীরে আঁচড়ে পড়ছে। 

শুত্রুবার সকালে কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্ত গ্রাম রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর নাখেন্দায় ও গতিয়াসামে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। পাশেই লালমনিরহাট জেলার গকুন্ড গ্রাম ও তিস্তা সেতু। সেতুর পশ্চিম পাশে ব্লক দিয়ে পাড় বাঁধান হয়েছে। পূর্ব পাশে ফাঁকা। কোন কাজ হয়নি।

আরেক বাসিন্দা জাহেদুল ইসলাম বলেন, 'তিস্তা নদীর পূর্ব পাশে বাঁধ দেওয়া হইলে এমন ভাঙন হইতো না। দুই জেলার শেষ সীমান্ত বলে কেউ খোঁজ নেয় না। দেখেন কি অবস্থা হামার। তিস্তা নদী ভাঙতে ভাঙতে ঘরের কিনারোত আসি নাগছে। যে কোন সময় নদীর প্যাটোত যাইবে।'

জাহেদুলরা চার ভাই। পরিবারসহ সবাই এক সঙ্গে থাকে। সবাই বসে আলাপ করছে কোথায় যাবে? পাশেই বসা তার ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম, আছাদুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলাম। উভয়ে কৃষিজীবি। 

আছাদুল বলেন, চারভাই এক সাথে থাকি। হামারা যে এতো কষ্ষ্টোত পড়ছি কাইয়ো খোঁজ নিবার আইসে নাই। আগে বাড়ী আছিল নদীর পশ্চিম পাড়ে (ওপারে)। দুইবার ভাঙ্গে। গত বার এইখানে আসি উঠেছি। একে অবস্থা। খুব চিন্তা পড়ছি। নিজের জমি নাই কোটে যামু। 

স্থানীয়রা জানায়, তিস্তা নদী এখান থেকে (চর নাখেন্দা) কুড়িগ্রাম জেলায় প্রবেশ করে রাজারহাট, উলিপুর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী উপজেলায় ব্রক্ষপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে। দূরত্ব ৬৫ কি.মি। ১৬টি স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। 

এগুলো হলো গতিয়াসাম, চতুরা, বুড়িগ্রামহাট, কালীর হাট, গাবুর হেল্লা, মেদনীপুর, বিদ্যানন্দ, উলিপুর উপজেলার ঠুটাপাইকোর, দলদলিয়া, থেতরাই (গোড়াই পিয়ার) নাগরাকুরা, পশ্চিম বজরা, হোকডাঙ্গা, অজুনের পাড়, দাঁড়িয়ার পাড় ও চিলমারী কাশিম বাজারসহ ২০টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।। তিস্তা সেতু থেকে চিলমারী পর্যন্ত নদীর তীরবর্তী প্রায় ২০ কি.মি এলাকাঘুড়ে দেখা যায় ভাঙনের কান্না। নদীর পাড়ের মানুষের মধ্যে রীতিমত ভাঙনের আতংক বিরাজ করছে। তিস্তা পাড়ের মানুষ অধিকাংশ দরিদ্র, দিমজুর, ভূমিহীন ও কৃষিজীবি। অনেকে পার্শ্ববর্তী পানি উন্নয়নের বোর্ডের তীর রক্ষা বাঁধ ও আবাসনে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের একটাই কথা হামরা রিলিফ চাইনা। নদী খনন কর। ভাঙন থেকে বাঁচাও!

এখান থেকে পূর্বে একটু এগিয়ে গতিয়াসাম গ্রামে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় বিধ্বস্ত অবস্থা। ভাঙনের মুখে পড়েছে শতাধিক পরিবার। ইতিমধ্যে ২০ থেকে ২৫টি পরিবার ভাঙনের স্বীকার হয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে আছে। এখানে ৫টি আধা পাকা বাড়ী ভেঙ্গে নেয়া হয়েছে। বাড়ীর মালিক টুকু মিয়া জানায়, এক সপ্তাহ আগে বাড়ি সরিয়েছি। পাশেই ছাপড়া তুলে পরিবারের সদস্যরা বসবাস করছি। ইতিমধ্যে গ্রামের দিন মজুর ইমান আলী ও হাসেন আলী বসত ভিটা ভেঙ্গে গেছে। নিজস্ব জমি না তারও পাশেই আশ্রয় নিয়ে আছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে হোসেন আলী, আকাশ ও মিন্টু মিয়ার বাড়ী। দিনমজুর মিন্টু মিয়া দীর্ঘ দিন থেকে অসুস্থ্য। চলতে পারে না। তিনি বলেন, গরীব মানুষ বাড়ী সরাই না, খাওয়ার যোগার করি। খুব কষ্টে পড়ছি।

এসব এলাকার নদীর তীরবর্তী বসতভিটা ও ফসলী জমি, তীর রক্ষা বাঁধ, গ্রোইন, টি বাঁধ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসন, মাদ্রাসা, মসজিদ মন্দির নদীতে ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। অনেক গুলো বিলিন হয়ে গেছে। 

কালীর হাট ও বুড়িরহাট, চতুড়ায় গিয়ে দেখা যায় নদী কালির হাটে এসে লেগেছে। বুড়ির হাটে গ্রোয়নটি ভাঙ্গন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও বস্তা ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জব্বার জানায় গ্রোইটি এখন আশংকা মুক্ত নয়। পাশেই মেদনী আবাসন। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ২৪টি পরিবার ঘড় পেয়েছে। সেটিও হুমকীর মুখে। বিদ্যানন্দ ইউয়িনে গাবুরহেল্লা ক্রসবাঁধ, উলিপুর উপজেলার নাগরাকুড়া টি-বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। ঠুটাপাইকোর ও গোড়াইপিয়ারে ভাঙ্গন চলছে। 

ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকার জানায়, 'আমার ইউনিয়নে ৮টি স্থানে ভাঙন চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশরীর সাথে কথা হলে বলেন, তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনার নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমার কথা কোনদিন মহাপরিকল্পনা নিবে সেটা পরের কথা চলতি নদী ভাঙ্গনে মানুষের অবস্থা কাহিল তাক থামান।'

চিলমারী কাশিমবাজারে গিয়ে দেখা যায় চলতি মাসে ভাঙন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ পেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর কাজ করছে। ইতিমধ্যে ওই এলাকায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে পড়ায় সরিয়ে নিয়েছে। মসজিদ ডেবে গেছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ইতিমধ্যে এখানে ২২ হাজার জিও বস্তা ফেলা হয়েছে। এতে কিছুটা ভাঙন রোধ হয়েছে। আরও জিও ব্যাগ ফেলা হবে। তিস্তা অববাহিকায় ১৬টি পয়েন্টে ভাঙন অব্যাহত আছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানায়, সরকার স্থায়ী ভাবে ৮ হাজার ২'শ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে তিস্তা পাড়ের মানুষের দুঃখ থাকবে না। তবে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ আমরা করছি। উদ্ধর্তন কৃর্তপক্ষকে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এগুলো আসলেই কাজ করা যাবে। 

গাজীপুর কথা

    আরো পড়ুন