ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পুরস্কার পেয়ে তাজউদ্দীনের পাশে ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২

পুরস্কার পেয়ে তাজউদ্দীনের পাশে ওবায়দুল কাদের

পুরস্কার পেয়ে তাজউদ্দীনের পাশে ওবায়দুল কাদের

তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদের পাশে নাম লেখালেন তিনি।

এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ৯ জন। সবচেয়ে বেশি চারবার এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। এছাড়া, তাজউদ্দীন আহমদ তিনবার, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুইবার করে এবং প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও আবদুল জলিল একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের হ্যাট্রিক সম্পর্কে দলের নেতাকর্মীদের বিশ্লেষণ, তৃতীয়বাবের মতো এই পদে নির্বাচিত হওয়ার নেপথ্যে আছে তার পরিশ্রম এবং দলীয় সভাপতির আস্থা আর বিশ্বাস। গত কয়েক বছরে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেডেট এক্সপ্রেস ওয়ে, শত সেতু, শত মহাসড়কসহ সড়ক ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, তাতে রয়েছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে ওবায়দুল কাদেরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও একনিষ্ঠতা। তৃতীয় মেয়াদে তার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়াকে দলীয় প্রধানের দেওয়ার পুরস্কার হিসেবে বর্ণনা করেছেন তারা।

ওবায়দুল কাদেরের কাজের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় দক্ষভাবে সামাল দিচ্ছেন বলেও বিভিন্ন সময়ে প্রশংসা করেছে শেখ হাসিনা।

গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেলের একটি টিউবের কাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন শেখ হাসিনা। সেখানে তার সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার একপর্যায়ে ওবায়দুল কাদেরের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের, তার মতো কর্মঠ লোক খুব কম আছে। তাকে পার্টির সেক্রেটারি করার পর আমার চাপ অনেক কমে গেছে।’

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের ২২তম কাউন্সিলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক করেছেন কাউন্সিলররা। ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর দলের ২১তম সম্মেলনে দ্বিতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে ২০১৬ সালে দলের ২৩ অক্টোবর দলের ২০তম কাউন্সিলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হন ওবায়দুল কাদের।

সভাপতি পদে পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা না থাকায় এবারও কাউন্সিল ঘিরে সবার আগ্রহ ছিল সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে মুজিব ফোর্সের কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেও ভূমিকা ছিল তার। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বিরূপ সময়ে দুই দফায় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী ওবায়দুল কাদের একসময় দৈনিক বাংলার বাণীতে কাজ করতেন।

২০০০ সালে সংস্কৃতি ও শিক্ষা সম্পাদক পদের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পান তখনকার যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কাদের। ২০০৯ সালে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হওয়ার আগে তিনি সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদেও ছিলেন।

এর আগে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলেন সে সময় দলের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কোম্পানিগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া কাদের।

শেখ হাসিনা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর ২০১৩ সালে ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তার সময়ে মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ’সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়’ করা হয়। ২০১৯ সালেও ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দ্বিতীয়বারের মতো কাদেরকে দেন শেখ হাসিনা।

ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি মেধাতালিকায় স্থান পান।

ওবায়দুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজজীবনেই রাজনীতিতে যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ওবায়দুল কাদের একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুজিব বাহিনীর কোম্পানিগঞ্জ থানার কমান্ডার ছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগাত্মক ঘটনার পর ওবায়দুল কাদের কারাবরণ করেন। আড়াই বছর তিনি কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।