ঢাকা,  মঙ্গলবার  ২৩ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শ্রীপুরের জৈনা বাজার সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২৫ জুন ২০২২

শ্রীপুরের জৈনা বাজার সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট

শ্রীপুরে কাঁঠালের হাট

উপজেলা প্রশাসন চত্বরে তৈরি করা হয়েছে বিশাল কাঁঠালের ভাস্কর্য। অফিশিয়াল স্লোগান ‘সবুজে শ্যামলে শ্রীপুর, মিষ্টি কাঁঠালে ভরপুর।

গাজীপুরের শ্রীপুরের কাঁঠালের আলাদা পরিচিতি আছে দেশজুড়ে। শুধু কাঁঠাল বিক্রির জন্য এখানে জমে বড় বাজার। এখানে যে শুধু রেকর্ড পরিমাণ কাঁঠাল হয়, তা নয় এখানকার কাঁঠাল রপ্তানি হয় বিদেশেও। তাই জেলা প্রশাসন কাঁঠালকে শ্রীপুরের ব্র্যান্ডিং করেছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহা সড়কের গাজীপুরের শেষ সিমান্ত এলাকার শ্রীপুর উপজেলার জৈনা প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও জমে উঠেছে কাঁঠালে বিশাল হাট। এই উপজেলা এখন কাঁঠালে সয়লাব। গ্রাম কিংবা শহর, সবখানেই কাঁঠাল বেচাকেনার ধুম। 
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর এই অঞ্চলে গড়ে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়। খাজা, গালা ও দুরসা- এই তিন জাতের কাঁঠাল এখানে উৎপাদন হয় প্রচুর পরিমাণে। এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে খাজা জাতের কাঁঠাল রপ্তানি করা হয়েছে। আরও রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। শ্রীপুরের জৈনা বাজার এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর কাঁঠাল বিপণনে বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল বাগান মালিকদের। এ বছর কাঁঠাল উৎপাদন ভালো হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে বাগান মালিকেরা আশা করছেন।
সম্প্রতি শ্রীপুরের গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা, মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া, তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ি, রাজাবাড়ি ইউনিয়নের রাজাবাড়ি বাজার, ছাতির বাজার, শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া ও চন্নাপাড়া ধনুয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাঁঠাল নিয়ে একধরনের ব্যস্ততা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে ঘুরে ঘুরে একদল ক্রেতা কাঁঠাল কিনছেন। সেগুলো স্তুপ করে রাখা হয়েছে সড়কের পাশে। আরেক দল ক্রেতা তাঁদের কাছ থেকে কাঁঠাল পাইকারি কিনে নিচ্ছেন। ভ্যানগাড়িতে তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে পাইকারি বাজারে। এরপর বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে আড়তদারদের মাধ্যমে। আর আড়তদারদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বড় বড় পাইকারেরা সেগুলো কিনে নিচ্ছেন।

জৈনাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বিশাল জায়গাজুড়ে কাঁঠালের পাইকারি বাজার বসেছে। বাজারে বড় বড় আড়তদারের কাছ থেকে পাইকারি দরে কাঁঠাল কিনে সেগুলো ট্রাকে তোলা হচ্ছে। অপর দিকে সড়কের পাশে শত শত রিক্সা, মিনি ট্রাক, পিক-আপ ও ভ্যানগাড়িতে কাঁঠাল ভর্তি করে বিক্রির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন লোকজন। তাঁরা মূলত স্থানীয় পাইকার। একেকটি ভ্যানগাড়িতে মাঝারি আকারের ২০ থেকে ৫০টি কাঁঠাল ধরে। বড় পাইকারেরা ভ্যানগাড়িতে থাকা কাঁঠালগুলোর আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করে দর–কষাকষি করছেন।

কাঁঠালের এই পাইকারি হাটকে কেন্দ্র করে চার মাস ধরে দুই থেকে আড়াই শ’ মানুষের কর্মসংস্থান হয় বলে দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন আড়তদার রতন মিয়া  ও খলিল মিয়া বলেন, কেউ মাঠপর্যায়ে কাঁঠাল কেনে, কেউ আবার সেগুলো ভ্যানগাড়িতে ভর্তি করে। অনেকেই চুক্তিভিত্তিক কাঁঠাল কেনার কাজে নিয়োজিত। এ ছারা বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকারদের কাঁঠাল ট্রাকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচুর শ্রমিক কাজ করেন এখানে।

রাজাবাড়ি এলাকার মোসলেম উদ্দিন বলেন, তাঁর ৬০টি কাঁঠালগাছ এবার ১ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। ছোট অবস্থায় পাইকারেরা গাছ ধরে কাঁঠাল কিনে নেন। পুরো মৌসুমজুড়ে সুবিধামতো সময়ে গাছ থেকে কাঁঠাল কেটে বিক্রি করেন তাঁরা।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এস এম মূয়ীদুল হাসান বলেন, এ বছর প্রচুর কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে শ্রীপুরের কাঁঠাল বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে। প্রতিদিন জৈনাবাজার থেকে পাইকারদের হাত হয়ে শ্রীপুরের কাঁঠাল যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলাতে।