ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শ্রীপুরের জৈনা বাজারে জমে উঠেছে কাঁঠাল বেচাকেনা

প্রকাশিত: ১১:১৭, ২২ জুন ২০২২

শ্রীপুরের জৈনা বাজারে জমে উঠেছে কাঁঠাল বেচাকেনা

জমে উঠেছে কাঁঠাল বেচাকেনা

গাজীপুরকে বলা হয় কাঁঠালের রাজধানী। স্বাদ, মিষ্ট, ঘ্রাণ ও আকারের দিক থেকে এই জেলার  কাঁঠালের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। বলা যায়, ধানের পর এটি এই জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল। গাজীপুরের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে এখন পাকা কাঁঠালের মিষ্টি ঘ্রাণ। এই কাঁঠাল বিক্রির হাট শ্রীপুরের জৈনা বাজার। এটিই দেশের  সর্ববৃহৎ কাঁঠালের হাট। তাই  দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন পাইকাররা এখানে আসেন কাঁঠাল কিনতে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর এই অঞ্চলে গড়ে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদন হয়। খাজা, গালা ও দুরসা—এই তিন জাতের কাঁঠাল এখানে উৎপাদন হয় প্রচুর পরিমাণে। এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ‘খাজা’ জাতের কাঁঠাল রপ্তানি করা হয়েছে।

গাজীপুর শ্রীপুর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন জৈনা বাজার। প্রতিবছর মতো এবারও বাজারে জমে উঠেছে কাঁঠালের হাট। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন বিক্রেতারা সাইকেলে, রিকশা-ভ্যান ও ট্রাক রিজার্ভ করে কাঁঠালসহ অন্য মৌসুমি ফল আনেন এ হাটে বিক্রি করার জন্য। এ বাজার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বিশাল জায়গাজুড়ে কাঁঠালের পাইকারি বাজার বসেছে। বাজারে বড় বড় আড়তদারের কাছ থেকে পাইকারি দরে কাঁঠাল কিনে সেগুলো ট্রাকে তুলছেন ক্রেতারা। অপর দিকে সড়কের পাশে শত শত ভ্যানগাড়িতে কাঁঠাল ভর্তি করে বিক্রির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। তারা মূলত স্থানীয় পাইকার। একেকটি ভ্যানগাড়িতে মাঝারি আকারের ২০ থেকে ৫০টি কাঁঠাল ধরে। বড় পাইকাররা ভ্যানগাড়িতে থাকা কাঁঠালগুলোর আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করে দর–কষাকষি করছেন। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ অতিরিক্ত খাজনা দিতে হয় তাদের। প্রতি কাঁঠাল লেভার খরচসহ ৭ টাকা নেয় ইজারাদার। 

নোয়াখালী থেকে কাঁঠাল কিনতে এসেছেন আতিকুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘৪০ বছর বছর ধরে এই হাট থেকে কাঁঠাল নেই আমি। আমি একজন ব্যবসায়ী, দেশের বিভিন্ন হাট থেকে কাঁঠাল কিনে থাকি। কিন্তু গাজীপুরের কাঁঠাল বেশি সুস্বাদু এবং চাহিদা বেশি। এটিই দেশের সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট। এখানে কাঁঠালের দামও কম কিন্তু খাজনা, লেভার ও পরিবহন খরচ মিলিয়ে দাম বেড়ে যায়।’

গাজীপুর ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ইয়াজউদ্দীন বলেন, আমাদের প্রত্যেকের বাড়ি কাঁঠাল গাছ আছে। এই কাঁঠাল গাছ আমরা কিনে ফেলি। পরে গাছের কাঁঠাল হাটে এনে পাইকারি দরে বিক্রি করি।’

লক্ষীপুর থেকে কাঁঠাল কিনতে আসা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে দুদিন আসি কাঁঠাল কিনতে। এখানকার কাঁঠাল সবচেয়ে ভালো, চাহিদাও বেশি। ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ পিচ কাঁঠাল কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যাই। এখান কাঁঠালের সাইজ অনুযায়ী দাম ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।’

জৈনা বাজারের আড়তদার আব্দুল বারী বলেন, ‘কাঁঠালের এই পাইকারি বাজারকে কেন্দ্র করে চার মাস ধরে দুই থেকে আড়াই শ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কাঁঠাল ওঠানামা করেন তারা। এই হাটের সুনাম সারা দেশে। এজন্যই দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে কাঁঠাল কিনতে এখানে ছুটে আসেন ক্রেতারা।’ 

জৈনা বাজারের পুরাতন আড়তদার ইসলাম উদ্দীন মেম্বার বলেন, ‘১৯৮৫ সাল থেকে এখানে আড়তদারি করি।  নোয়াখালী, চিটাগাং, ফেনি, চাঁদপুর, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁঠালের জন্য পাইকাররা আসেন। কম দামে ভালো মানের কাঁঠাল পাওয়া যায় এই ঐতিহ্যবাহী হাটে।’