ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

জাহাঙ্গীরে ক্ষুব্ধ আ.লীগ, আজমতে একাট্টা গাজীপুর

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ১৯ মে ২০২৩

জাহাঙ্গীরে ক্ষুব্ধ আ.লীগ, আজমতে একাট্টা গাজীপুর

ফাইল ছবি

আস্তে আস্তে জাহাঙ্গীরের মুখোশ উন্মোচন হচ্ছে। গতকাল রাতে জাহাঙ্গীর গাজীপুরের জামাতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, জামাতের সমর্থন চেয়েছেন এবং তিনি জামাতেরই একজন—এরকম মন্তব্য করেছেন। এসময় জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনও উপস্থিত ছিলেন। জামাতের অন্তত বিশজন নেতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছে দ্রুত এই খবর পৌঁছে যায়। এই খবরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ। এমনকি যে সমস্ত কর্মীরা গোপনে গোপনে জাহাঙ্গীরের প্রতি সহানুভূতি দেখাতেন তারাও জাহাঙ্গীরের ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন। শুধুমাত্র ভোটে জেতার জন্য এরকম আদর্শহীন রাজনীতির ব্যাপারে আওয়ামী লীগের লোকজন ঘৃণা জানিয়েছে। 

শুধু তাই নয়, কদিন আগে আহসানউল্লাহ মাস্টারের খুনীদের সঙ্গেও জাহাঙ্গীরের বৈঠকের খবর পাওয়া গিয়েছিলো। জাহাঙ্গীর জামাত, বিএনপি এবং ইসলামী দলগুলোর সমর্থন আদায়ের জন্য চেষ্টা করছে। অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোটে জাহাঙ্গীর জিততে পারবে না জেনেই নির্বাচন নিয়ে এধরনের ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে।

বিভিন্ন আওয়ামী লীগের নেতা বলেছেন, জাহাঙ্গীর এখন টাকা উড়াচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে যেন তারা জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষে সমর্থন করে। টাকার লোভে অনেকেই এখন জাহাঙ্গীরের প্রতি সমর্থন দিচ্ছে। কাজেই গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে ততই এই নির্বাচন হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষদের নির্বাচন। 

আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ জামাত-শিবির, বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সামনে আসছে জাহাঙ্গীরের মা। আর একারণেই এই নির্বাচনে নতুন মেরুকরণ ঘটেছে। দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ হিসেবে পরিচিত গাজীপুরে এখন আওয়ামী লীগের নেতারা একাট্টা হয় উঠেছেন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। কারণ যে কোনোভাবেই আহসানউল্লাহ মাস্টারের খুনী জামাত এবং বিএনপিকে সিটি করপোরেশনে জয়ী হতে দেয়া যায়না বলেই মনে করছেন সাধারণ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ফলে গাজীপুরে নির্বাচনের চিত্র আবার রং বদল করেছে।

উল্লেখ যে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এইবার মনোনয়ন পেয়েছেন আজমত উল্লাহ খান। তিনি ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং দীর্ঘদিনের রাজপথের রাজনীতিতে বেড়ে উঠা একজন নেতা। কিন্তু হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগার জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তার আগে তিনি গাজীপুর মহানগরে অওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এটি দিয়ে তিনি একটি বিকল্প আওয়ামী লীগ গঠন করেছিলেন এবং তার নিয়ন্ত্রিত একটি ক্যাডার বাহিনী করেছিলেন। যাদের মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগের প্যারালাল একটি সংগঠন তৈরী করেছিলেন। এইবার নির্বাচনে যখন তিনি মনোনয়ন পাননি তখন জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তার মাকেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন ঋণখেলাপীর অভিযোগে বাতিল হয়ে যায়। তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন বৈধ আছে এবং জাহাঙ্গীরের প্রতিনিধি হিসেবে তার মা-ই নির্বাচন করছেন। কিন্তু এই নির্বাচন করতে গিয়ে জাহাঙ্গীর আবারও তার কদর্য চেহারা উন্মোচন করছেন। তিনি কালো টাকা ছড়াচ্ছেন এবং বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক অপশক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আজমত উল্লাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। 

গাজীপুরে যারা ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করছেন তাদের মধ্যে বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের একটি বড় অংশ জাহাঙ্গীরের অনুসারী। কিন্তু যখন জাহাঙ্গীর আহসানউল্লাহ মাস্টারের খুনী এবং জামাতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তখন তারাও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। ফলে নির্বাচনের আগে জাহাঙ্গীরের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে। নির্বাচনী মাঠে জাহাঙ্গীর আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাহাঙ্গীর ক্ষমতার জন্য সব কিছু করতে পারেন এবং অবিরত অনর্গল অসত্য কথাও বলতে পারেন। এখন তিনি আবার সামনে কোনো নতুন নাটক সাজান সেটাই দেখার বিষয়।