‘বল সুন্দরী’ কুল চাষ
গাছের থোকায় থোকায় ঝুলে আছে বরই। পরিপক্ব বরইগুলো দেখতে লাল আপেলের মতো। স্বাদেও মিষ্টি। উপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং। খেতে সুস্বাদু। ফলটি রসালো ও মিষ্টি। নাম ‘বল সুন্দরী’।
দিন দিন গাজীপুরের শ্রীপুরে কৃষক বল সুন্দরী কুল চাষে ঝুঁকছেন।উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামে (মাজম আলী মোড়) এলাকায় দ্বিতীয় বারের মতো বল সুন্দরী কুল চাষ করেছেন এক কৃষক। উপজেলার মুলাইদ গ্রামের মাহমুদুল হাসান সবুজ আধা বিঘা জমিতে বল সুন্দরী কুল চাষ করেন। সরেজমিনে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারী ) বরই বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, রোদের মধ্যে বরই চিকচিক করছে। ফলের ভারে গাছসহ ডালগুলো নিচের দিকে ঝুলে পড়েছে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে আগলে রাখা হয়েছে প্রতিটি গাছ।
পাখি ও চোরের হাত থেকে বরই রক্ষায় পুরো বাগান চারপাশে জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বাগান পাহারা দেওয়ার জন্য বাগানের এক পাশে উঁচু করে মাচা করে রেখেছেন। প্রতি গাছে প্রায় ৫০-৬০ কেজি করে বরই ধরেছে। বাগান থেকে ১৫০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে এসব কুল। কীটনাশকমুক্ত ফল হওয়ায় ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন এ ফল কেনায়। দ্বিতীয় বারের মতো এ বছরও ভালো ফলন পেয়ে আগামীতে আরও বেশি ফলনের আশা করছেন কৃষক। এমনকি কুলের আকর্ষণীয় রং ও আপেলের মতো সাইজ হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। কৃষক সবুজ বলেন, ইউটিউব দেখে উৎসাহিত হয়ে পতিত জমিতে আমি বল সুন্দরী কুল চাষে সাহস, আগ্রহ দেখাই এবং বিনিয়োগ করি। আশা করি, আমি গত বছরের মতো এ বছর ও পর্যাপ্ত মুনাফা পাব এবং অন্য কৃষক ভাইদের বলব তারাও যেন এ বল সুন্দরী চাষ করেন। এ কুল চাষে তারা পর্যাপ্ত মুনাফা লাভ করতে পারবেন।
আমি মনে করি বেকারত্ব দূর করতে এ কুল চাষ ভূমিকা রাখবে। কৃষক মাহমুদুল হাসান সবুজ বলেন, বল সুন্দরী কুল গাছের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে জেষ্ঠ-আশ্বিন মাস তবে সারা বছর ধরে চাষ করা যায়। চারা রোপণের চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৬ ফুট, সারি থেকে সারির দূরত্ব ৯ ফুট হতে হবে। ১ বিঘায় ৩৩ শতাংশ জমিতে সর্বোচ্চ গাছের সংখ্যা হবে ২২৫ টি।
এতে মোট ব্যয় হতে পারে ২৫ -৩০ হাজার টাকা। চারা প্রতি সম্ভাব্য ব্যয় ১১০-১২৫ টাকা। প্রথম বছরই সম্ভাব্য লাভ ৬0,000-১,00,000 টাকা দ্বিতীয় বছর ১,৪0,000-২,00,000 টাকা। বল সুন্দরী কুলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাছ খুব ছোট থাকতে পর্যাপ্ত ফল আসতে শুরু করে এবং ফলটি যখন ছোট থাকে তখন একেবারে লাল-সবুজ আপেলের মতো দেখাই। ফলটি বড় হলে দেখতে একেবারে আপেলের মতো লাগে! ফলগুলি খুব বড় এবং ১০/১২টি ফল ১ কেজি ওজন হয়। মিষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। ফলের মাঝে বীজ অনেক ছোট। গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। বাজারে ভাল দাম পাওয়া যায়।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, শ্রীপুর উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে বল সুন্দরী কুল চাষ করা হয়েছে। বল সুন্দরী কুলের আকৃতি তুলনামূলক অনেকটা বড়। খেতেও সুস্বাদু এবং বাজারমূল্যও ভালো। ফলে বল সুন্দরী কুল কৃষকের কাছে জনপ্রিয় জাত হিসেবে পরিণত হয়েছে। রোপণের প্রথম বছরেই ফল পাওয়া যায়। যা বিক্রি করে বাগান স্থাপনের খরচ ওঠানোসহ লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমরা কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করছি।