ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

স্বপ্ন দেখাচ্ছে ব্যক্তি উদ্যোগের প্রথম মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ১৯ আগস্ট ২০২২

স্বপ্ন দেখাচ্ছে ব্যক্তি উদ্যোগের প্রথম মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র

সংগৃহীত ছবি

দেশে প্রথমবারের মতো গড়ে উঠেছে পূর্ণাঙ্গ বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (মানমন্দির)। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি এই অ্যাস্ট্রো অবজারভেটরি এখন ব্যতিক্রমি এক স্থাপনা হিসেবে নজর কাড়ছে বিজ্ঞানীদের। ইতোমধ্যেই মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এটি। কোনোরকম লাভের আশা না করে শুধুমাত্র ভালোবাসা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য অবাধ সুযোগ সৃষ্টির জন্য এই গবেষণা কেন্দ্রটি তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী নেতা শাহজাহান মৃধা বেনু।

সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বাঘের বাজার সংলগ্ন বেনুর ভিটায় প্রায় ৮০ বিঘা জায়গায় অবস্থিত চার তলা ভবনের উপরে অবজারভেটরির অবস্থান। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪ ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপের সাহায্যে রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া দিনের বেলায় সূর্য পর্যবেক্ষণেরও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। আছে নানা ধরনের টেলিস্কোপও। ধূলামুক্ত এবং চারপাশে উঁচু স্থাপনাহীন পরিবেশে সবুজের মাঝে গড়ে উঠেছে এই অবজারভেটরি। এখানে আছে বিশাল পুকুর, ফুল ও ফলের বাগান। পরিবেশ রক্ষায় যত্নের ছাপ চোখে পড়ে প্রতি পরতে পরতে।

ভবিষ্যতে এখানে আরও অত্যাধুনিক ১০০ ইঞ্চি ব্যাসের রিফ্লেক্টর টেলিস্কোপ সংযুক্ত করা হবে। মানমন্দিরে রেডিও টেলিস্কোপ স্থাপনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে জানান এর উদ্যোক্তা শাহজাহান মৃধা।  তিনি বলেন, ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ছাদে ১৯৯০ সালে দেশের প্রথম মানমন্দির স্থাপন করা হয়। যে কয়েকজন বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষের হাত ধরে দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়, তাদের মধ্যে আমি একজন। ২০১৯-২২ সালে নির্মিত এই অবজারভেটরির স্বপ্ন দেখছি বহুকাল ধরেই।’

সম্প্রতি অবজারভেটরিটি পরিদর্শন করেন নাসার সাবেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মোরেনো ভ্যালি কলেজে পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপক ড. দীপেন ভট্টাচার্য ও মহাকাশ গবেষক ড. মাকসুদা আফরোজ। এ সময় দীপেন ভট্টাচার্য বলেন, ‘ব্যক্তি উদ্যোগে এত বড় কাজ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। জ্যোতির্বিদ্যার প্রতি বেনু সাহেবের এমন আন্তরিকতা সত্যিই আমাদের উৎসাহিত করে। আগামীতে এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা বেশ উপকৃত হবেন।’

নিভৃতচারী জ্যোর্তিবিজ্ঞানী বেনু জানান, মহাকাশ গবেষণাকে জনপ্রিয় করতে তারা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে মহাকাশ পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন জ্ঞান শেয়ার করেছেন তারা। পাশাপাশি দেশে প্রথমবারের মতো পতিত উল্কা পিণ্ডের টুকরো খুঁজে বের করার কাজটিও করেছেন তিনি নিজেই। শুধু তাই নয় সেটি দিল্লিতে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তার নেতৃত্বেই। যদিও সেই উল্কা পিণ্ডের টুকরো এখন পড়ে আছে বিজ্ঞান যাদুঘরের স্টোর রুমে।

এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যতদ্রুত সম্ভব এটির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা দরকার। এছাড়া তার গড়ে তোলা অবজারভেটরিতে মহাকাশের যেসব দুর্লভ ছবি তোলা হয়েছে সেগুলো চীনসহ অনেক উন্নত দেশের তোলা ছবির চেয়েও ভালো এসেছে। বেশ কয়েজন বিজ্ঞানী এখানে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এখন প্রয়োজন সরকারি সহায়তা।’ সরকারি সহায়তা পেলে এ মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রটি আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার।