ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

তুরাগ নদের পাড়ে জমে উঠেছে তালের বাজার

প্রকাশিত: ১৩:০১, ২৩ জুন ২০২২

তুরাগ নদের পাড়ে জমে উঠেছে তালের বাজার

তালের বাজার

গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর বাজারের তুরাগ নদের পাড়ে বসে তালের বাজার। এখান থেকে তাল কিনে ঢাকাসহদেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান পাইকাররা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেউ নৌকায়, কেউ মাথায় করে আবার অনেকে রিকশায় করে তুরাগ নদের পাড়ের বটতলায় জড়ো করছেন কচি তাল। সেখান থেকে পাইকাররা তালের কাদি ট্রাকে বা ট্রলারে নদী পথে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। মৌসুমি এই রসালো ফল গত ১ মাস ধরেই শুরু হয়েছে বাজারে বিক্রি করা। এখন তাল বিক্রির শেষ সময়। এজন্য বাজারে যে পরিমাণ কচি তাল উঠেছে তা দুপুরের মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যাচ্ছে। 

ভাওয়াল মির্জাপুর ছাড়াও গাজীপুরের বিভিন্ন হাটে-বাজারে, রাস্তার মোড়ে, শহরের অলি-গলিতে সব খানেই এখন দেখা যায় তালের শাঁস বিক্রেতাদের। বাজারে থাকা বেশির ভাগ ফলে ফরমালিনের ভয় থাকলেও তালের শাঁসে সেই ভয় নেই। এজন্য এর ক্রেতা সব পর্যায়ের মানুষ। 

পিরুজালী গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে তিনিটি তালের গাছ রয়েছে। তিনটিতেই অনেক তাল ধরেছে। পাকা তাল খাওয়ার জন্য কয়েকটি কাদি রেখে সবগুলি কচি তাল বাজারে নিয়ে এসেছি বিক্রি করতে। একটি কাদিতে ১৫ থেকে ১৭ টি করে তাল রয়েছে। কাদিতে কমবেশি যাই থাকুক প্রতি কাদির দাম ৮০ টাকা করে চূরান্ত করে বিক্রি করা হয়েছে। তাতে মনে হচ্ছে এবার একটু বেশি দাম  পেলাম। অন্য সময় ৬০ থেকে ৭০ টাকার বেশি কেউ বলেনি।’ 

ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরে প্রতি বছরই বিভিন্ন বাজারে তালের শাঁস খাওয়ার জন্য কচি তাল বিক্রি করা হয়। বিশেষ করে গরমে তালের শাঁসের ব্যাপক চাহিদা থাকে। তালের শাঁস জলশূণ্যতা দূর করা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোসহ নানা গুণাগুন রয়েছে। যার কারণে সব বয়সের মানুষের কাছে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

জানা গেছে, পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে ৪ থেকে ৫ টাকা করে একপিচ কচি তাল ক্রয় করেন। বাজারে কুলি খরচ, যাতায়াত খরচসহ ঢাকা পৌঁছানো পর্যন্ত খরচ হয় ৭ থেকে ৮ টাকা। সেই প্রতিপিচ কচি তাল সাধারন মানুষ ক্রয় করছেন ২০ থেকে ২৫ টাকায়।’ 

ভাওয়াল মির্জাপুর বাজারের ব্যাপারী আনোয়ার মোল্লা বলেন, ‘তাল কাটার শ্রমিক ও গ্রাম থেকে শহরে আনা পর্যন্ত পরিবহন খরচ নিয়ে পিচ প্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা খরচ হয়। গ্রামে দিন দিন তাল গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অনেক তালগাছ মালিক পানি (কাঁচা) তাল হিসেবে বিক্রি না করে পাকার জন্য অপেক্ষা করেন। পরিবারের চাহিদা পূরণ করে পাকা তাল আশ-পাশের পরিবারে মধ্যে বিতরণ করে। গাজীপুরে পাকা তালের পিঠার এখনও বেশ কদর রয়েছে।’
গাজীপুরের আঙ্গুরীচালা এলাকার ব্যাপারী আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিকে তাল বিক্রি শুরু হয়। শুরুতে দাম একটু চড়া থাকলেও ধীরে ধীরে কমে আসে। শুরুর দিকে স্বল্পআয়ের মানুষজন শাঁস না কিনলেও দাম কমার পর সব শ্রেণির মানুষ তালের শাঁসের স্বাদ নিয়ে থাকেন। এক-দেড় মাসের জন্য এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অনেকেই হাটে বাজারে তালের শাঁস বিক্রি করেন।’ 

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক কাইসারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচন্ড গরমে তালের কচি শাঁস এবং এর ভেতরের মিষ্টি পানি তৃষ্ণা মেটায়। একই সঙ্গে আরামদায়ক অনুভূতি হয়। তালের শাঁসে প্রতি ১০০ গ্রামে শূন্য দশমিক ৮ গ্রাম খাদ্যপযোগী খনিজ পদার্থ, ২০ দশমিক ৭ গ্রাম শর্করা, শূন্য দশমিক ৮ গ্রাম আমিষ, শূণ্য দশমিক ৫ গ্রাম আঁশ রয়েছে। গরমে শরীরের পানির অভাব পূরণ করতে এর মধ্যে আছে ৭৭ দশমিক ৫ ভাগ জলীয় অংশ। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।’