ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষি

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১২ মে ২০২২

বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষি

গাজীপুরে ধান কাটা শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে বোরো ধান ঘরে তুলতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। অনেকে বাধ্য হয়ে নিজের ধান পরিবারের লোকজন নিয়ে কাটছেন। অনেকে আবার বাড়তি খরচ করে ক্ষেতের ধান কেটে বাড়িতে নিচ্ছেন। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা।
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার উত্তরপাড়া এলাকার নাহিদ জানান, তিনি স্থানীয় গাড়ারন মাদ্রাসার ছাত্র। প্রতি বিঘা (৩৫ শতক) সাড়ে ছয় হাজার টাকাতেও ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় বাবা-ভাই মিলে কাটছেন। এতে তাদের সময় বেশি লাগছে। শ্রমিক পাওয়া গেলেও সিরিয়াল দিয়ে তিন দিন পর পাওয়া যাচ্ছে।
বরমী ইউনিয়নের সোনাকর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন জানান, অনেকেই খোঁজাখুজি করছেন। ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তিন বিঘা জমির ধান কাটতে দুইদিন খোঁজ করে শ্রমিক পয়েছেন। বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকায় শ্রমিক পেয়েছেন। ধান কাটা শ্রমিকের বাজার বিঘা প্রতি ৭ হাজার টাকা।
বরমী গ্রামের কৃষক সাহাব উদ্দিন চুক্তিতে জমি নিয়ে বোরো আবাদ করেছেন। ১০ মণ ধান পেলে জমির মালিককে দিতে হবে চার মণ। উৎপাদন খরচতো দূরের কথা, আবাদ করে আটকে গিয়েছেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে বাধ্য হয়ে জমির ধান কেটে নিচ্ছেণ।
৭০ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছেন রাজাবাড়ী ইউনিয়নের বিন্দুবাড়ী গ্রামের নাজিম উদ্দিন মাস্টার। ৭ থেকে ৯শ’ টাকা রোজ শ্রমিকের মজুরি। শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও মজুরি বেশি হওয়ায় পরিবার-পরিজন, ভাই-ভাতিজা নিয়ে প্রতিদিন একটু একটু করে ধান কাটছেন বলে জানান।
শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামের কৃষক খালেদা আক্তার বলেন, ‘কামলা (শ্রমিক) নিলে আমরা খেতে পারি না। আর আমরা খেলে কামলা নিতে পারি না। পেটতো বাঁচাতে হবে। সরকার ধান কাটা, রোপণের জন্য মেশিন দেয়। কিন্তু, আমরা এখনও এগুলো পাইনি। আমরা কী এসব পাবো না?’
একই গ্রামের কৃষক লাল মিয়া সরকার বলেন, ‘পাকিতে (বিঘা) ১২ বা ১৪ মণ ধান পাওয়া যায়। বর্গা করায় জমির মালিককে অর্ধেক দিতে হচ্ছে। ৬ বা ৭ মণ ধান পেলে খরচ বেশি হয়ে যায়। এখন কামলাও পাওয়া যায় না। এক হাজার টাকা রোজ বা প্রতি বিঘায় ৭ হাজার টাকা খরচে কামলা দিয়ে ধান কাটানোর ক্ষমতা আমাদের নাই। ধান কাটার জন্য সরকারিভাবে মেশিন পেলে অনেক উপকার হতো।’
কুড়িগ্রাম থেকে আসা ধান কাটার শ্রমিক মোহাম্মদ আলী জানান, ‘ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ধান কাটার কাজ করে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা পাওয়া যায়। উচ্চমূল্যের বাজারে চাষিরা মজুরি বেশি বললেও এ উপার্জনে আমাদের সংসার চলে না।’
শ্রমিক রমজান আলী জানান, ‘ধান কাটার পুরো মৌসুম শুরু হয়েছে। ধান কাটার শ্রমিক যদি থাকে ১০০, কৃষক থাকে তিন হাজার। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। আমরাও শ্রমের বেশি মূল্য না নিলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলতে পারি না।’
গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গাজীপুর শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় ধান কাটা শ্রমিকের সঙ্কট রয়েছে। সরকারিভাবে সমন্বিত উপায়ে ধান কাটা যন্ত্রের ওপর ৫০ ভাগ ভর্তুকি দেওয়া হয়। গাজীপুরের আবাদি জমিগুলো খণ্ড খণ্ড। হাওড় অঞ্চলে একত্রিত জমি হওয়ায় সেখানে ধান কাটা যন্ত্র সমন্বিতভাবে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। ইতোমধ্যে পাওয়ার টিলার ভর্তুকির মাধ্যমে চাষের আওতায় এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার বোরো আবাদে জেলা সদর, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ উপজেলায় আশপাশের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৫০০ হেক্টর জমির ফসল আগাম কাটতে হয়েছে। জেলায় মোট এক হাজার ৭শ ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি ধান কেটে ফেলা হয়েছে।’

গাজীপুর কথা