ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কাপাসিয়ায় দেশের প্রথম উপাচার্য দম্পতিকে উষ্ণ-সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১৭ জুন ২০২২

কাপাসিয়ায় দেশের প্রথম উপাচার্য দম্পতিকে উষ্ণ-সংবর্ধনা

ছবি : সংগৃহীত

দেশের ইতিহাসে এই প্রথম স্বামী-স্ত্রী দুজনেই শিক্ষকতা পেশার সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদে নিযুক্ত রয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দুজনেই দেশের দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। যা দেশের ইতিহাসে বিরল।

প্রথমবারের মতো দেশের ইতিহাসে একসাথে স্বামী-স্ত্রী উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ায় আনন্দের খবরে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সনমানিয়ায় ডা. আব্দুল আজিজ উচ্চ বিদ্যালয়ে এই সফল দম্পতিকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে উষ্ণ সংবর্ধনা।

সনমানিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহাদাত হোসেন মাষ্টারের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. মো. সাইফুল ইসলাম। ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মঞ্জুরুল হক মুকুল, উপজেলা আওয়ামীলীগ সদস্য আব্দুল হক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন হান্নান, সাবেক ব্যাংকার আব্দুল আওয়াল, ডা. আব্দুল আজিজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ইউনিয়নের অন্যান্য উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানগন এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি প্রমুখ। এদিকে উপাচার্য দম্পতি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সফল ও সুন্দর জীবন গড়তে বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।

চুয়াডাঙ্গার বেসরকারি ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’র উপাচার্য হিসেবে নিয়োজিত আছেন স্বামী অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী এবং স্ত্রী অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই উপাচার্য হওয়ায় দেশের প্রথম উপাচার্য দম্পতি হিসেবে তারা পরিচিতি পেয়েছেন।

অধ্যাপক ড মো. হযরত আলী বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজধানীর শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কোষাধ্যক্ষ, সিন্ডিকেট সদস্য, ডিন, কৃষি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক ড.মো. হযরত আলী শেরে-ই-বাংলা (শেকৃবি) শিক্ষক সমিতির উইড সাইন্স সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি এবং জার্নাল অব এগ্রিকালচারাল সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সম্পাদনার দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় গবেষণামূলক কাজ করেছেন। ড মো. হযরত আলীর শতাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ড. মো. হযরত আলীর কৃষিতত্ত্ব বিষয়ে ৫টি গ্রন্থ বের হয়েছে। তার তত্ত্বাবধানে অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষা ও গবেষণার কাজে তিনি ১৫টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। অপরদিকে অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে নগর উন্নয়ন অধিদফতরে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কুমুদিনি কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করার পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ৪০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তার শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং অধিক গবেষণাকর্ম যা বিভিন্ন বইয়ের অধ্যায়ে প্রকাশিত হয়েছে। তার রচিত ৯ টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেশ-বিদেশে নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ঢাবির দুর্যোগ গবেষণা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালকসহ পদ্মা সেতু, যমুনা সেতু, লালন শাহ সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, চট্টগ্রাম রিংরোড, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেলে পরামর্শকের কাজ করেছেন। সামাজিক সুরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি নীতিনির্ধারণের অনেক সিদ্ধান্ত এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অবদান রেখেছেন। তিনি চীনের নানজিং-এর হোহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্বাসন জাতীয় গবেষণা কেন্দ্রের একাডেমিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।

এছাড়াও তিনি বুয়েটের আর্কিটেকচার বিভাগের প্রতিবেশ জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ড সদস্য। তিনি ইতিমধ্যে ২৫টিরও অধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন শিক্ষকতা ও গবেষণা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কানাডার মাঠ পর্যায় থেকে ডাইনোসরের ফসিল সংগ্রহ করে তিনি বিনামূল্যে জাতীয় জাদুঘর ও বিজ্ঞান জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য দান করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্ট ফান্ডে তিনি ২০ লক্ষ টাকা দান করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ নদী বাচাঁও আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ নদী রক্ষা আন্দোলনের অগ্রপথিক তিনি। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। দেশ ও সমাজের উন্নয়ন সাধনকল্পে বিভিন্ন গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭টি ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন।

অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন ১৯৭১ সালে তার ভাই আবুল হাসান মাসুদের সেক্টর-৩ এর অধীনে সিলেট ফ্রন্টে সম্মুখযুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করেছেন। আবুল হাসান মাসুদ সেক্টর-২ এর আওতাধীন ঢাকা মহানগরীর কোতোয়ালী থানার বংশালের গেরিলা কমান্ডার ছিলেন।

ড. হাফিজা খাতুন জার্নাল অব দ্য এশিয়াটিক সোসাইটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি জার্নাল অব আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স, ওরিয়েন্টাল জিওগ্রাফারসহ অনেক জার্নাল সম্পাদনা করেছেন।