শুক্রবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩,   আশ্বিন ১৪ ১৪৩০,  ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কাপাসিয়ার নরাইট বিল : গাঢ় সবুজের বুকে এ যেন বাংলার ‘লাল স্বর্গ’

প্রকাশিত: ১৪:১৩, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কাপাসিয়ার নরাইট বিল : গাঢ় সবুজের বুকে এ যেন বাংলার ‘লাল স্বর্গ’

সংগৃহিত ছবি

কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের পূর্ব অংশ ও টোক ইউনিয়নের দক্ষিণের অংশ নিয়েই নরাইট বিল বিস্তৃত। এদিকে লোকমুখে প্রচলিত এ বিলের রয়েছে ৯টি গোপ। আর এ নয়টি আলাদা আলাদা গোপের সমন্বয়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে নরাইট বিল। বিলে ফুটে আছে হাজার হাজার লাল শাপলা ফুল। যেন এক প্রাকৃতিক স্বর্গ। দেখেই দু’চোখ জুড়িয়ে যায়। সবাই একে শাপলা বিল নামেই চেনে।

সূর্যের সোনালি রশ্মি পানিতে পড়তেই কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় বিলের সৌন্দর্য। বছরের এ সময়ে যারা ঢাকার আশেপাশে থাকেন, ছুটে আসেন বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ছোট্ট এই গ্রাম এখন ভ্রমণ পিপাসুদের কেন্দ্রবিন্দু। জুলাই থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়। বিলের সঙ্গে যাদের বাড়ি, শাপলা তুলতে কিংবা মাছ ধরতে নৌকাই তাদের একমাত্র বাহন। এক পলকে মনে হবে, কোনো ক্যানভাসে আঁকা লাল শাপলার চিত্র। বিলজুড়ে শাপলার রাজত্ব।

তবে নরাট বিলে লাল শাপলার রাজত্ব ছাড়াও রয়েছে মনোলোভা পদ্ম ফুলের বিল। বিলটির (ভিকারটেক বর্জাপুর) অংশে রয়েছে পদ্ম ফুলের বিলের একটি শাখা, শুধুমাত্র ভিকারটেক অংশে রয়েছে আরো একটি শাখা। এছাড়াও কুশদী এলাকার বৈরাইট বিলও রয়েছে পদ্ম ফুলের আরো একটি শাখা। আর বৈরাইট বিল থেকেই স্থানীয় অন্য বিলগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু মনোলোভা পদ্মের। নরাইট বিলে রয়েছে পদ্ম ফুলের তিনটি শাখা।

ভ্রমণ পিপাসু যারা এখানে যেতে চান, তাদের কাপাসিয়া সদর থেকে প্রথমে আমরাইদ বাজারে যেতে হবে। আমরাইদ বাজারে যাওয়ার পর পূর্বদিকের রাস্তা ধরে গিয়াসপুর পাড় হলেই জালাল (জইল্লা) মার্কেট। জালাল মার্কেটে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে। দিক-নির্দেশনা মতে আনজামুল সিয়াম সকাল সকাল এসে পৌঁছান শাপলা বিলে। সিয়ামের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এসেছেন বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে। আশা করা যায়, শিগগির এটি দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হবে।

গাঢ় সবুজের বুকে এ যেন বাংলার ‘লাল স্বর্গ’। বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলা বেশি। বিলের যত ভেতরে চোখ যায় ততই লালের আধিক্য। একপর্যায়ে সিয়ামের মনে হলো শাপলার রাজ্যে হারিয়ে গেছেন তিনি। দেখতে পেলেন, কেউ কেউ মুঠো ভরে শাপলা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বুঝতে পারলেন, শাপলার বিল শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, জীবিকারও মাধ্যম।

বিল থেকে পদ্ম ফুল তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ভিকারটেক এলাকার ৮-১০টি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। এখানকার কেউ কেউ বিলের শাপলা ও পদ্ম ফুলের ওপর নির্ভরশীল। কেউ শাপলা তোলেন, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
অনেকের পছন্দের তরকারি শাপলা। গ্রামের মতো শহরেও দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সহজলভ্য শাপলা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শাপলায় আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি। শাপলা চর্ম ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী।

এছাড়াও শাপলা ও পদ্ম ফুলের বিলের অপার সৌন্দর্য ঘুরে দেখতে চাইলে স্থানীয়দের কাছ থেকে ছোট নৌকা ভাড়া করা যায়। বিলে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে আত্মতৃপ্তি অনুভূত হবে। যেন এই তো শুধু আমার সোনার বাংলাদেশ নয়, সুখের ঠিকানা। এত কিছুর মাঝে আবার দেখা মিলবে অনেক পাখি। বক, মাছরাঙা, শালিক, চড়ুঁইসহ নাম না জানা পাখি এসে বিলের মাঝে কিচিরমিচির করে তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। যারা গাজীপুরের আশেপাশে থাকেন, তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। কম খরচে সহজে যাওয়ার জন্য উত্তম জায়গা এটি। এই বিলে নৌকায় চরে কাঁটাতে পারবেন সুন্দর মুহূর্ত।