ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কালীগঞ্জে প্রসূতির মৃত্যু: কবর থেকে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ

প্রকাশিত: ২২:২১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

কালীগঞ্জে প্রসূতির মৃত্যু: কবর থেকে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ

কালীগঞ্জ জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার

লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ কালীগঞ্জ জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক দিয়ে সিজার অপারেশনের পর প্রসূতি শিরিন আক্তারের (৩০) মৃত্যুর কারণ উদঘাটনের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিন এ নির্দেশ দিয়েছেন। 

থানা ও আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিসুর রহমানের সুপারিশসহ কবর থেকে লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান খান। এরপর গত ১৮সেপ্টেম্বর গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিন কবর থেকে লাশ উত্তোলনের আবেদন মঞ্জুর করেন। এছাড়াও কবর থেকে লাশ উত্তোলনের সময় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং একজন চিকিৎসক উপস্থিত রাখার জন্য গাজীপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) এবং সিভিল সার্জনকে চিঠি দিয়ে অবগত করেছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিন।

নিতহ প্রসূতি শিরিন আক্তার তুমুলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুয়াড়িয়াখোলা গ্রামেরআব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী।

এর আগে গত ২১ আগষ্ট সন্ধ্যায় প্রসূতি শিরিন আক্তারে মৃত্যু‌ হয়। এরপর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) অভিযুক্ত ৬ জনকে আটক করে কালীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। পরে গত ২৪ আগষ্ট অন-অনুমতি ব্যক্তির মাধ্যমে রক্ত পরিচালনা করে রক্তগ্রহীতার মারাত্মক ক্ষতি করে একে-অপরের পরস্পর যোগসাজশে একই উদ্দেশ্যে অবেহেলার কারণে মৃত্যু‌ ঘটানোর অপরাধে ৩০৪ (ক) এবং ১০১/৩৪ ধারায় এবং ‘নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন আইন’ এর ২৫ ধারায় মধ্যরাতে মামলা নথিভুক্ত করা হয় {মামলা নাম্বার ১৮(৯)২২}।

মামলার বাদী নিহত প্রসূতির স্বামী দক্ষিণ চুয়ারিয়াখোলা‌ এলাকার মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক মিয়া (৩৯)।

অভিযুক্ত গ্রেপ্তার আসামিরা হলো‌ টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানার আগদেউলি এলাকার চাঁন মিয়ার ছেলে ওটি বয় আশিকুর রহমান (২৫), কালীগঞ্জের পিপ্রাশৈর এলাকার অরুন কস্তার‌ মেয়ে সিনিয়র নার্স সংগিতা তেরেজা করা (৩৩), তুমুলিয়া এলাকার ক্লেমেন্ট ক্রুশের স্ত্রী জুনিয়র নার্স মেরী গমেজ (৪০), তুমুলিয়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের মেয়ে হাসপাতালের অন্যতম অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তার (৩১), ঢাকার লালবাগ এলাকার ধানেছ আলীর মেয়ে রিসেপশনিস্ট শামীমা আক্তার (৩২), বালীগাঁও এলাকার শরিফ মিয়ার‌ স্ত্রী নার্স সীমা আক্তার (৩৪)। তাদের সকলকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) সদস্যরা।

এছাড়াও পলাতক আরো তিনজনকে এবং অজ্ঞাত আরো ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

পলাতক আসামিরা হলো বালীগাঁও এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম (৩১), টাঙ্গাইল সদরের পাড়দিঘুলীয়া এলাকার হাফিজ উদ্দিনের ছেলে ডাঃ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আলমাসুদ (৫০)‌ এবং মাগুরা জেলার মহাম্মদপুর থানার নজির মিয়ার ছেলে প্যাথলজিস্ট শাওন (২৪)।

তদন্ত কমিটি

ঘটনার পর গত ২৩ আগস্ট প্রসূতি মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক সানজিদা পারভীনকে আহ্বায়ক ও প্যাথলজি বিভাগের চিকিৎসক মুনমুন আক্তার এবং অ্যানেস্থেসিয়ার জুনিয়র কনসালট্যান্ট চিকিৎসক এমরানকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি তদন্ত কমিটি। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে তদন্ত কমিটির প্রধান চিকিৎসক সানজিদা পারভীন নিজেও ওই হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখতেন‌। তাই তদন্ত কমিটি নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে। এর প্রমাণও মিলেছে তদন্ত কমিটির প্রধানের বক্তব্য।

তদন্ত কমিটির প্রধান কালীগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী বিভাগের চিকিৎসক সানজিদা পারভীন বলেন, আসামিরা কারাগারে থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া যাচ্ছে না। তাই তদন্ত কার্যক্রম এখনো পর্যন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালের মালিকানা সংক্রান্ত কোন‌ নথিপত্র এবং হাসপাতাল পরিচালনা সংক্রান্ত কোন নথিপত্রও যাচাই করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, এখনো পর্যন্ত কেউ কারো বিরুদ্ধে লিখিত কোন অভিযোগও দেয়নি। নিহতের পরিবারের সদস্যদের ডাকা হলেও তারাও উপস্থিত হয়নি।

আসামিদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ

প্রসূতি মৃত্যুর আলোচিত ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে গত ২৫ আগষ্ট আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান খান। শুনানি শেষে গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২-এর বিচারক রাগীব নূর আসামিদেরকে ২ দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদেশ দেন। পরে ৩০ আগস্ট গাজীপুর জেলা কারাগারের জেলগেটে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

হাসপাতালের মালিকানায় এবং নথিপত্রে ঘাপলায় ভরপুর 

মামলা তদারকির দায়িত্বে থাকা একটি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং উদ্ধার হওয়া নথিপত্র পর্যালোচনা করে হাসপাতালের মালিকানা সংক্রান্ত বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক নেতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও রয়েছে হাসপাতালের মালিক পক্ষে। তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।

আরো জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ৮ জনের অংশীদারীতে প্রাথমিক ৩৫ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে হাসপাতালে কার্যক্রম শুরু হয়। যদিও পরবর্তীতে কয়েকজন অংশীদার হাসপাতালে থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেন। এদিকে প্রাপ্ততথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আসাদুজ্জামান‌‌ এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে বন্যা আক্তারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কালীগঞ্জ পৌরসভা থেকে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ নবায়ন করা ”ট্রেড লাইসেন্সে” এবং ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে মঞ্জুরকৃত “ফায়ার লাইসেন্সে” মালিক হিসেবে উল্লেখ রয়েছে বন্যা আক্তারের নাম। কিন্তু ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কলকারখা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে মঞ্জুর হওয়া “শিল্প প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সে” এবং ২০২১ সালের ৩০ জুন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া “প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সে মালিক হিসেবে রয়েছে আসাদুজ্জামানের নাম।

ঘটনার পর জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে শিরিন বেগমকে দেয়া ছাড়পত্রে চিকিৎসকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সার্জন নূপুর এবং অ্যানেস্থেসিয়া মাসুদ। কিন্তু সিজারিয়ানের সময় মাসুদ থাকলেও নূপুর নামে কোন চিকিৎসক ছিলেন না।

কোন‌ অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক দিয়ে অপারেশন করার নিয়ম নেই। অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসকের কাজ হচ্ছে রোগীকে অপারেশনের পূর্বে অজ্ঞান করা। কিন্তু কোন সার্জন চিকিৎসক ছাড়াই কালীগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক দিয়েই প্রতিনিয়ত চলছে সিজারিয়ান অপারেশন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছিল, অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আলমাসুদ নরসিংদীতে একটি হাসপাতালে চাকরি করেন। এছাড়াও কালীগঞ্জের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে তিনি নিয়মিত অপারেশন করে থাকেন। নূপুর হলো তার স্ত্রী। তিনি নরসিংদী সরকারি হাসপাতালের সার্জারি চিকিৎসক। পুরো নাম শামীমা জাহান নূপুর। মাসুদ যে সকল সিজারিয়ান করে সেসব নথিপত্রে জালিয়াতির মাধ্যমে সার্জন চিকিৎসক হিসেবে নূপুর নাম‌ ব্যবহার করে থাকে।

জানা গেছে, এর আগে ২০২০ সালের ১০ এপ্রিল কালীগঞ্জ জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভূল চিকিৎসায় বেতুয়া এলাকার মিশু বেগম নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। সে সময় এক লাখ টাকায় ওই ঘটনা সমোঝতা করেছিল। এর পূর্বে একই হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় ভাদগাতী এলাকার এক নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল।

র‌্যাবের দেয়া তথ্য

গত ২৪ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাতে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১ এর পূর্বাচল ক্যাম্পের একটি দল। এর আগে গত ২১ আগস্ট সকালে কালীগঞ্জের দক্ষিণ চুয়াড়িয়াখোলা এলাকার বাসিন্দা শিরিন বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে পূর্ব পরিচিত জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তারের মাধ্যমে ওই হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ভর্তি হয়। পরে ওটি বয় আশিকের তত্ত্বাবধানে রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা ও আল্টাসনোগ্রাম করে সিজারের জন্য রোগীকে ওটিতে নেওয়া হয়। চিকিৎসক মাসুদ গাইনোকোলোজিস্ট না হয়েও রোগীর সিজার করেন। অপারেশন শেষে ব্লিডিং হওয়ায় চিকিৎসক মাসুদের পরামর্শে আশিক ও বন্যা রোগীর পরিবারকে ‘এবি’ পজিটিভ রক্ত সংগ্রহের কথা বলেন। ভিকটিমের ভাই ও ননদের ছেলের ‘এবি’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত হওয়ায় তাদের কাছে রক্ত সংগ্রহ করার ব্যবস্থা হয়। প্রথমে ভিকটিমের ভাইয়ের শরীর থেকে এক ব্যাগ রক্ত নিয়ে রোগীর শরীরে পুশ করা হয়। আরও এক ব্যাগ রক্ত নিতে ননদের ছেলেকে বেডে শোয়ানো হয়। এরমধ্যেই হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা ভিকটিমের শরীরে ‘বি’ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত পুশ করেন। ভিকটিমের ‘এবি’ পজিটিভ গ্রুপের রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করায় রোগীর খিঁচুনি ওঠে। এ সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় আশিকের তত্ত্বাবধানে রোগীর চিকিৎসা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যার দিকে তাকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ভিকটিমের পরিবার রোগীকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আসার পথে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সে সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানায়, জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত কোন ডাক্তার ছিলো না। মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালটি। হাসপাতালটিতে গড়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি সিজারিয়ান অপারেশনসহ প্রায় ৫০টির অধিক বিভিন্ন অপারেশন সম্পন্ন করা হতো বলে গ্রেপ্তার আসামিরা জানায়। এক্ষেত্রে হাসপাতালে কোন রোগী আসলে অন কলে থাকা বিভিন্ন ডাক্তারদেরকে ডাকতেন। সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে একজন গাইনোকোলজিষ্টের ওটি চার্জ ছিলো তিন হাজার টাকা এবং অ্যানেস্থেসিয়ার দেড় হাজার টাকা। সর্বমোট সাড়ে চার হাজার টাকা ডাক্তারদের দিত হাসপাতাল কৃর্তৃপক্ষ। আর রোগী ভেদে বিভিন্ন প্যাকেজে ১০-১৫ হাজার টাকা নেয়া হতো। হাসপাতালে কর্মরত সকল নার্স এবং স্টাফদের প্রতিমাসে গড় মোট বেতন ছিলো এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও হাসপাতালটিতে অন্যান্য কিছু টেস্ট করা হতো যেমন-আল্ট্রাসনোগ্রাম, রক্তের (সিবিসি) টেস্ট ইত্যাদি।

গ্রেপ্তার বন্যা আক্তার ডিগ্রি পাস। তিনি হাসপাতালের অন্যতম অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার কোন নার্সিং ডিগ্রী নেই। তবে সে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ৭ বছর নার্সিং ও ২.৫ বছর ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছিল। পরবর্তীতে সে ২০১৮ সালে ০৮ জনের যৌথ মালিকানায় “জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার” চালু করে।

গ্রেপ্তার আশিকুর রহমান এসএসসি পাস করে ২০১৬ সালে টাঙ্গাইল ম্যাটস থেকে ৩ বছরের ডিএমএফ (ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি) কোর্স পাস করে। পরিচয়ের সূত্রে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ হাজার টাকা মাসিক বেতনে জনসেবা হাসপাতালে ওটি বয় ও ডক্টরের সহকারী হিসেবে চাকরি করে। ঘটনার দিন আশিক ডাঃ মাসুদের সহকারী হিসেবে ওটিতে উপস্থিত ছিল। ওটির পূর্বে সে রোগীর আল্ট্রাসনোগ্রাম করে। রোগীর ভর্তি ও ডিসচার্জ পেপারে নিজেই স্বাক্ষর করে। তবে সেখানের নার্স ও ভিকটিম পরিবার তাকে ডাক্তার হিসেবে জানত। রোগী তদারকি, ডাক্তারদের সাথে সার্বক্ষণিক সমন্বয় রাখা, বিভিন্ন ধরণের টেস্ট করা ও ডাক্তারদের পক্ষে কাগজপত্রে ভুয়া স্বাক্ষর করার সাথে জড়িত ছিল সে।

গ্রেপ্তার সংগিতা তেরেজা কস্তা এসএসসি পাশ করে ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে একজন সিনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত। সে ৩ বছর মেয়াদী জুনিয়র নার্সিং কোর্স পাশ করে পনের হাজার টাকা বেতনে ৭ মাস ধরে চাকরি করেছে।

গ্রেপ্তার মেরী গমেজ এসএসসি পাশ করে একজন জুনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলো। সে ২ বছর মেয়াদী জুনিয়র নার্সিং কোর্স পাস করে সাত হাজার টাকা বেতনে ২ বছর ধরে চাকরি করছে।

গ্রেপ্তার সীমা আক্তার ওএসএসসি পাশ করে ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিল। তার কোন নাসিং কোর্স বা ডিপ্লোমা ডিগ্রী নেই। সে ছয় টাকা বেতনে ৪ বছর ধরে চাকরি করছে।

এছাড়াও গ্রেপ্তার শামীমা আক্তার এসএসসি পাশ করে রিসেপশনিস্ট এবং রোগী দেখার সিরিয়াল দেয়ার কাজ করতেন। তার কোন নার্স কোর্স বা ডিপ্লোমা নেই। সে সাত হাজার পাঁচশত টাকা বেতনে ২ সপ্তাহ ধরে চাকরি করছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান খান বলেন, ঘটনার কারণ উদঘাটনে কবর থেকে নিহতের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছে আদালতে। এখন বিধি অনুযায়ী কবর থেকে লাশ উত্তোলনের প্রস্তুতি চলছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।