ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

নারী মাদক পাচারকারি চক্রের নেতৃত্বে শাকিব

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

নারী মাদক পাচারকারি চক্রের নেতৃত্বে শাকিব

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তি। ছবি: র‌্যাব

গাজীপুরের কালিয়াকৈর এবং নওগাঁ এলাকায় পৃথক অভিযানে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন জব্দ করেছে র‌্যাব। এ সময় দুই নারীসহ ৩ মাদক ব্যাবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার (৩ জনুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে র‌্যাব-১২ এর অভিযানে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এবং নওগাঁ এলাকা থেকে ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইনসহ চক্রের হোতা মো. শাকিবুর রহমান, মোসা. রাজিয়া খাতুন ও মোসা. সেলিনা খাতুন ওরফে শিরিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধারকৃত হেরোইনের বাজার মূল্য ৫ কোটি টাকা। তারা একটি মাদক কারবারিচক্রের সদস্য। পাশের দেশ থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে নদীপথে প্রতি মাসে ৪-৫ কেজি হেরোইন নিয়ে আসে। মাদক পরিবহনের কৌশল হিসেবে শাকিব নারী সদস্যদের ব্যবহার করতেন। তাদের মাদক ব্যবসার চক্রে ১০-১২ জন সক্রিয় নারী সদস্য রয়েছে। তারা চাহিদা অনুযায়ী বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিনিয়ত ৫০০/৬০০ গ্রাম করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে সরবরাহ করে।

কমান্ডার মঈন জানান, প্রত্যেকটি চালান পরিবহনের জন্য তারা বহনকারীকে ১৫-২০ হাজার টাকা দেয়। মাদক চালানের পরিমাণ বেশি থাকলে শাকিবুর বিভিন্ন সময় তার নিজের মোটরসাইকেলযোগে পরিবহন করত। চালানে ৩ কেজির বেশি হওয়ায় শাকিব নিজেই বহনকারীর সাথে এসেছিল। শাকিবুর তার নওগাঁর বাসা আরও ২ কেজি হেরোইন থাকার ব্যাপারে তথ্য দেয়। পরবর্তীতে তার বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তার স্ত্রী গ্রেপ্তারকৃত সেলিনা খাতুনের কাছ থেকে আরও ২ কেজি হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

শাকিব এই চক্রের হোতা। ইতোপূর্বে সে চুরির সাথে জড়িত ছিলো এবং এলাকায় তার বিরুদ্ধে একাধিক চুরির অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে সে প্রায় দুই বছর ধরে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। সে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তার ব্যবসায়িক সহযোগীর মাধ্যমে হেরোইন সংগ্রহ পূর্বক প্রথমে নিজের বাড়িতে সংরক্ষণ করত। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করত। বিভিন্ন সময় সে নিজের মোটরসাইকেল করে বিভিন্ন স্থানেও পরিবহন করত। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সময় যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ এবং কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে হেরোইন সরবরাহ করত। সে হেরোইন বিক্রির টাকা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করত। এছাড়া বিভিন্ন সময় হাতে হাতে এবং আস্থাভাজন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাদক বিক্রির পর সুবিধাজনক সময়ে সংগ্রহ করত। শিরিনা গ্রেফতারকৃত শাকিবের স্ত্রী। সে তার স্বামীর মাদক ব্যবসার সহযোগী। পাশের দেশ থেকে আনা হেরোইনের একটি অংশ গ্রেফতারকৃত শাকিব নিজ বাড়িতে তার স্ত্রীর কাছে রাখত। বিভিন্ন সময় তাদের আস্থাভাজন মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের বাড়িতে হেরোইন সংগ্রহ করতে আসলে সেলিনা তাদের হেরোইন সরবরাহ করত।

গ্রেপ্তারকৃত রাজিয়া শাকিবের হেরোইন চক্রের অন্যতম সহযোগী। সে প্রায় ১ বছর ধরে এই হেরোইন ব্যবসার সাথে জড়িত। সে রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হেরোইন সরবরাহ করত। সে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার শাকিবের সাথে তার মোটরসাইকেলযোগে বিভিন্ন স্থানে হোরোইন সরবরাহ করেছে। পূর্বের ন্যায় সে শাকিবের সাথে গাজীপুর ও সাভারের বিভিন্ন স্থানে হেরোইন সরবরাহ করার জন্য নওগাঁ থেকে রওনা করে। পথে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, মূলত নারী ও শিশুদের প্রতি সবাই একটু মানবিক বা অন্য দৃষ্টিতে থাকে। আর এ সুযোগটি নিয়েছে শাকিবের নেতৃত্বে চক্রটি। তারা মাদক কারবারে নারীদের জড়িয়েছে। নারীদের দিয়ে মাদকপাচার করতো। কেননা নারীরা সহজে মাদক বহন করতে পারে বলে কারবারিদের ধারণা করে। তবে এই চক্রে আর কারা কারা জড়িত আছে তাদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে।