ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন ৫৫ বছরের বেলায়েত!

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ২১ মে ২০২২

ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন ৫৫ বছরের বেলায়েত!

মানুষ তার স্বপ্নের মতো বড়- মনীষীদের এমন বক্তব্য যেন বাস্তবে রুপ দিচ্ছে যাচ্ছেন ৫৫ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী। বাবার অসুস্থতার পর সংসারের হাল ধরতে যেয়ে পড়ালেখা থেমে যায়। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন তাকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিতে যাচ্ছে। এই অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী ব্যক্তিটির নাম মো. বেলায়েত শেখ। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে। তিন সন্তানের জনক তিনি। বড় ছেলে ব্যবসা করছেন বিবাহিত। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে ২০১৭ সালে আর ছোট ছেলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। বেলায়েত পেশায় একজন সাংবাদিক।

১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। কিন্তু বাবার অসুস্থতার কারণে থমকে যায় সবকিছু। নিভে যায় উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন। নিজে না পারলেও ভাই ও সন্তানদের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতেও সফল হননি। ৫০ বছরে পা দিয়েও তাই অনেকটা জেদ করেই ভর্তি হন নবম শ্রেণিতে। এরপর উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ৫৫ বছর বয়সে এবার তিনি অংশ নিতে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়।

সাংবাদিক বেলায়েত দৈনিক করতোয়া পত্রিকার শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। সাংবাদিকতা করে পাওয়া অর্থ দিয়ে সংসার চালান তিনি।

বড় ছেলে স্যানিটারি পণ্যের ব্যবসা শুরু করেছেন। মাসখানেক ধরে তিনিই সংসার চালাচ্ছেন।

৫০ বছর বয়সে ২০১৭ সালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন বেলায়েত। ২০১৯ সালে তিনি রাজধানী ঢাকার বাসাবো এলাকায় অবস্থিত দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে ৪ দশমিক ৪৩ জিপিএ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর ২০২১ সালে রামপুরায় অবস্থিত মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৪ দশমিক ৫৮ জিপিএ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণে প্রস্তুতি নিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা শাখায় ভর্তি হয়েছেন। ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১১ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

৫০ বছরে পা রাখার পর ফের পড়াশোনা শুরু করে অনেকের ‘হাসি-ঠাট্টার’ শিকার হতে হয়েছে বলে জানালেন বেলায়েত শেখ। তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে এটি আমার জন্য কিছুটা কঠিনই ছিল। কারণ, তখন কাছের মানুষেরাও আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতেন। যদিও একটা পর্যায়ে গিয়ে সেটি ঠিক হয়ে যায়। যাঁদের সঙ্গে ক্লাস করেছি, তাঁদের কাছ থেকে কোনো বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হইনি। ক্লাসের মেয়েরা আমাকে আঙ্কেল বলে ডাকত, অন্যদিকে আমি তাঁদের আম্মু বলে ডাকতাম। নিজেকে আমার বয়স্ক বলে মনে হয় না, তরুণদের মতোই মনে হয়। সংসার চালিয়ে এবং কাজ করেও যে লেখাপড়া করা যায়, আমি সেটি বর্তমান প্রজন্মকে দেখাতে চাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পেতে সবার দোয়া চেয়েছেন বেলায়েত শেখ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পাসের নির্দিষ্ট সালের শর্ত থাকলেও বয়সের কোনো শর্ত নেই।

গাজীপুর কথা