ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

গাজীপুরে বহুল আলোচিত স্বপ্না হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ১২ জানুয়ারি ২০২২

গাজীপুরে বহুল আলোচিত স্বপ্না হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

গাজীপুরে বহুল আলোচিত স্বপ্না হত্যা মামলার রহস্য তিন বছর পর উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মাদক সেবনের আসরে পালাক্রমে ধর্ষণের পর তাকে খুন করেছে হত্যাকারীরা। পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে এবং স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিতে এ খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার বরাব মসজিদ মার্কেট এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ আলী (২৮), একই থানার ভান্নারা এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে মোঃ নাহিদ হোসেন (২৮) ও বরাব পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত লাল মিয়ার ছেলে মোঃ সুজন মিয়া (৪৬)।
পিবিআই’র ওই কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার দক্ষিণ ভান্নারা এলাকার কেয়াম উদ্দিনের মেয়ে স্বপ্নার (১৯) লাশ স্থানীয় হানিফ স্পিনিং মিলের পূর্ব পাশের বাউন্ডারী সংলগ্ন হাফেজ দেওয়ানের কাঠ বাগানের ভিতরে একটি গর্তে দেখতে পায় এলাকাবাসি। খবর পেয়ে থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের চাচা মোঃ আবুল হোসেন বাদি হয়ে কালিয়াকৈর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
তিনি জানান, কালিয়াকৈর থানা পুলিশ প্রায় ৩ মাসের অধিক সময় মামলাটির তদন্ত করে। কিন্তু কোন রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় মামলাটি তদন্তকালীন সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে পিবিআই গাজীপুর জেলা কর্তৃক তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মনির হোসেন মামলাটি প্রায় ৮ মাস তদন্ত করেন। পরবর্তীতে তিনি অন্যত্র বদলী হওয়ায় মামলাটি পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হাফিজুর রহমান তদন্ত করেন। পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত মোহাম্মদ আলী, নাহিদ হোসেন ও মুজন মিয়াকে মঙ্গলবার ভোর রাতে কালিয়াকৈর থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করে।
তিনি আরো জানান, ঘটনায় জড়িতরাসহ মামলার সকল আসামী মাদক সেবী ও এলাকার মাদক ব্যবসায়ী। নিহত স্বপ্না তাদের সঙ্গে মাদক সেবন করত এবং অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিল। স্বপ্নার চলাফেরা স্বাভাবিক না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিকট হতে ভিকটিম বিচ্ছিন্ন ছিল। চট্রগ্রামের জনৈক মাদক ব্যবসায়ী চট্রগ্রাম থেকে মাদকের চালান এনে স্বপ্নার মাধ্যমে বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করতো। হত্যাকান্ডের প্রায় দুইমাস আগে সুজন ও মজিবর নামে দু’মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করায় ভিকটিম স্বপ্না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে।
এদিকে চট্রগ্রামের ওই মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ভিকটিম স্বপ্নার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং তার স্ত্রী হিসেবে দাবী করতো স্বপ্না। কিন্তু স্বপ্নাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায় চট্রগামের উক্ত মাদক ব্যবসায়ী। একপর্যায়ে পথের কাঁটা দুর করতে সুজন, মজিবর ও তাদের সহযোগিদের সঙ্গে চট্রগ্রামের ওই ব্যবসায়ী বসে স্বপ্নাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে স্বপ্নার সঙ্গে একত্রে বসে মাদক সেবন করে তারা। একপর্যায়ে মাদক সেবনের আসরে ভিকটিম স্বপ্নাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আসামীরা।
পরে তারা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে স্বপ্নাকে খুন করে। গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ আলী ও মোঃ নাহিদ হোসেন আদালেত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। অপর আসামি সুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এরপ্রেক্ষিতে ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য ঘটনার প্রায় তিন বছর পর উন্মোচন হয়েছে।

গাজীপুর কথা