ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নতুন অতিথি দুই নারী সাম্বার

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২১ অক্টোবর ২০২১

শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নতুন অতিথি দুই নারী সাম্বার

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে থাকা পুরুষ সাম্বার হরিণগুলো আরও দুটি নারী সঙ্গী পেল।
এ নিয়ে পার্কে মোট সাম্বার হরিণ দাঁড়াল ৬টিতে। এদের মধ্যে নারী সাম্বার হরিণ চারটি আর পুরুষ সাম্বার হরিণ দুটি। সঙ্গমের মৌসুমে পুরুষ দুটি বেশ ক্ষিপ্ত ও বদমেজাজি হয়ে পড়ত সময়মতো নারী সঙ্গী না পেয়ে। এ সময় কোনো নারী সাম্বারের সঙ্গে মিলিত না হতে পেরে ক্ষিপ্ত চরম উত্তেজিত হতো পুরুষ সাম্বার দুটি।
এ সময় পার্কে কর্মরত স্টাফরা সাম্বারের আক্রমণের শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে এবার আরও দুটি নারী সঙ্গী পাওয়াতে পুরুষ সাম্বার হরিণ দুটি সঙ্গীময় ফুরফুরে সময় কাটাবে পার্কের আফ্রিকান সাফারি বেষ্টনীতে।
ঢাকা বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিট মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে দুটি নারী সাম্বার হরিণ হস্তান্তর করেন।
এখন নারী সাম্বার দুটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে পার্কের আলাদা একটি মিনিয়াম এনক্লোজারে। নির্দিষ্ট সময় পরে অন্য সাম্বারদের সঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হবে বড় বেষ্টনীতে এ দুটি নারী সাম্বার হরিণ।  
জানা যায়, দুটি নারী সাম্বার হরিণ খামার বাড়িতে আছে জেনে অভিযান চালায় নরসিংদীর জাফর আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির বাগান বাড়িতে। সেখান থেকে হরিণ দুটি উদ্ধার করা হয়। সাম্বার হরিণ ব্যক্তিগতভাবে লালন পালন অবৈধ জেনে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ঢাকা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন খামার বাড়ির কর্তৃপক্ষ।
চিত্রা হরিণ পালনে অনুমতির সুযোগ থাকলেও সাম্বার হরিণের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের বিধিমালায় অনুমতি নাই। এ আইনটি জানা ছিল না বলে সাম্বার হরিণ দুটি স্বেচ্ছায় দিয়ে দেন খামার মালিক । পরে দেশে বিরল এমন দুটি মাদি সাম্বার হরিণ উদ্ধার করে সাফারি পার্কে পাঠানো হয়।
ঢাকা বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিটের পরিদর্শক নিগার সুলতানা বলেন, ‘বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম স্যারের লিখিত আদেশ ও ঢাকা বিভাগীয় প্রধান খাজা তালুকদার স্যারের দিক নির্দেশনায় আমরা ওই খামার বাড়িতে রক্ষিত দুটি মাদি সাম্বার উদ্ধার করি। পরে পরিচর্যা শেষে গাজীপুর সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের হরিণ পালন বিধিমালায় চিত্রা হরিণ পালনের অনুমতি থাকলেও সাম্বার হরিণ পালনের অনুমতি নাই। ২০১২ সালের বন্য প্রাণী তফসিল ১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তবে খামার কর্তৃপক্ষ এ আইনের ব্যাপারে না জানায় তাদের কাছে দুটি সাম্বার রেখেছিল। পরে তারা বিষয়টি বুঝে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন।
সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সাজ্জাত মোহাম্মদ জুলকার নাইন মানিক বলেন, লোহার খাঁচায় করে পরিবহন করাতে হরিণ দুটোর শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া ছিলে গেছে। আমরা মিনিয়াম এনক্লোজারে রেখে আইসোলেশন করছি। এখন নিয়মিত পরীক্ষা ও চিকিৎসা চলছে। এমনিকে সুস্থ রয়েছে সাম্বার দুটি।
পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার সরোয়ার হোসেন খান জানান, সাম্বার হরিণ আমাদের দেশে প্রায় বিরল। চট্টগ্রাম অঞ্চলে কিছু কিছু কদাচিৎ চোখে পড়ে। এ সাম্বার হরিণ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বেশি বিচরণ করে।
এদিকে হিমালয়ের পাদদেশ নেপাল, ভুটান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দো চীন ও ভারতে অনেক বেশি বসবাস সাম্বার হরিণের। নারী সাম্বার ধূসর বাদামি রঙের হয়। আর পুরুষ সাম্বার কালচে ধূসর রঙের হয়ে থাকে। নারী সাম্বার শিং ছাড়া হলেও পুরুষ সাম্বার হরিণের জটলা শিং গজায়। সাম্বার হরিণ তৃণভোজী  প্রাণী।
তিনি বলেন , সাম্বার আট মাস গর্ভকালীন সময় পার করে একটি শাবকের জন্ম দিয়ে থাকে। তবে কখনো কখনো দুটি শাবকের জন্ম হয়েছে এমন রেকর্ড রয়েছে। অক্টোবর-নভেম্বর এদের উত্তম প্রজননের সময়। প্রজননকালে পুরুষ সাম্বার অন্য পুরুষের সঙ্গে লড়াই করে থাকে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান জানান, পার্কে এখন ৪টি নারী সাম্বার ও ২টি পুরুষ সাম্বার রয়েছে। পার্কেই দুটি শাবকের জন্ম হয়েছিল। কদিন পরিচর্যা শেষে অন্যগুলোর সঙ্গে মূল বেষ্টনীতে ছেড়ে দেওয়া হবে নতুন এ দুটি মাদি (নারী) সাম্বার হরিণকে।

গাজীপুর কথা