ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শ্রীপুরে বৃষ্টির কারণে ধানের বীজতলা রোগাক্রান্ত হয়ে পচন

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ৩১ জুলাই ২০২১

শ্রীপুরে বৃষ্টির কারণে ধানের বীজতলা রোগাক্রান্ত হয়ে পচন

ফলন ভালো হওয়ার আশায় গাজীপুরের চাষিরা ব্রি-৫১ ধানের জাত আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু বীজতলা পচে যাওয়ায় অধিকাংশ কৃষকের সেই আশা গুড়ে বালি। পচে যাওয়ার মধ্যেও যেসব চারা ভালো রয়েছে সেগুলো রোপণের পর ধান বের হওয়ার সময় একই রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেও অল্প জমিতে ভালো ফলনের আশায় বেশির ভাগ চাষি ব্রি-৫১ জাতের ধান আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
ব্রি-৫১ ধানের বীজতলা রোগাক্রান্ত হয়ে পচে যায়। শুধু যে বীজতলা আক্রান্ত হয় তাই-ই নয়। ভালো চারা জমিতে রোপণের পর গাছে ধান বের হওয়ার সময়ও গাছ আক্রান্ত হয় বলে জানান শ্রীপুর উপজেলার টেংরা গ্রামের চাষি জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি জানান, এ রোগের কারণেই ব্রি-৫১ ধান চাষ করতে তারা নিরুৎসাহিত হন। কিন্তু অন্যান্য জাতের ধানের চেয়ে ফলন ভালো হওয়ায় আবাদের লোভও সামলাতে পারেন না। বীজতলা বা ধান গাছে পচন ধরলে চারা বা ধান গাছ হলুদ ও ধূসর বর্ণ ধারণ করে মাটিতে মিশে যায়।
তিনি আরো জানান, ব্যক্তিগত এবং ঋণ নেয়া পাঁচ একর ৩৫ শতক জমি আবাদ করবেন এবার। সেই লক্ষ্যমাত্রায় বীজতলা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বীজতলা পচন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অনেক চারা নষ্ট হয়েছে। বাইরে থেকে ধানের চারা ক্রয় করে জমিতে রোপণ করতে হবে। এতে ধানের বীজ ভালো হবে কি না তা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিদর্শনে এসে ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দেন বলে জানিয়েছেন টেংরা উত্তরপাড়া গ্রামের লেহাজ উদ্দিন। সে অনুযায়ী গত ২৫ জুলাই ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো উন্নতি দেখছেন না। বরং আরো নষ্ট হচ্ছে। এখন ধানের চারা কিনে রোপণ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই তার। দুই একর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যে ব্রি-৫১ এবং রঞ্জিত জাতের ধানের বীজতলায় বীজ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু তার দু’টি জাতের চারাই পচে গেছে। ৩০ কেজি ধানের বীজতলায় তিন কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেছিলেন। ধানের চারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর সব জ্বলে-পুড়ে গেছে। অন্যদের মতো কৃষক মুজিবুর রহমানের বীজতলায়ও পচন ধরার কারণে তাকে এবার অন্য জায়গা থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে। তিনি জানান, এ বছর ১ একর ৭০ শতক জমিতে ধানের চারা রোপণের জন্য তিনি বীজতলা তৈরি করেন।

তিনি বলেন, ব্রি-৫১ এবং রঞ্জিত দু’টি জাতের বীজতলা রোপণ করেন প্রায় দেড় মাস আগে। কিন্তু ব্রি-৫১ তে পচন ধরলেও রঞ্জিত ধানের বীজতলা অক্ষত রয়েছে। গত কয়েক বছর একই নিয়মে বীজতলা তৈরি করে আসছেন। দেড় মাস আগে গোবর দিয়ে চার-পাঁচটি চাষ করে বীজতলা তৈরি করেন। ধানের বীজগুলো গত বছর নিজের জমি থেকেই সংগ্রহ করেছিলেন। চাষি পারভেজ মোশারফ বলেন, বীজতলায় ইউরিয়া সার প্রয়োগের পর ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। ধানের চারা বড় হওয়ার জন্য ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেন। এলাকার অধিকাংশ বীজতলায় পচন ধরেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, জেলায় এবার রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা কমপক্ষে ৪২ হাজার হেক্টর। শ্রীপুরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ এস এম মূয়ীদুল হাসান বলেন, প্রণোদনা ও রাজস্বসহ অন্যান্য প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের উফসি নতুন জাতের ভ্যারাইটিজ বীজ দেয়া হয়েছে। সবাই তাদের পরামর্শমতে আদর্শ বীজতলা তৈরি করেছেন। কিছু কিছু জায়গায় গত কয়েক দিন আগে বৃষ্টির কারণে বীজতলার অনুপযোগী নিচু জমিতে পানি জমে থাকায় ও অতিরিক্ত ইউরিয়া প্রয়োগের কারণে চারার গোড়ায় পচন ধরেছে। পরে তাদের পানি সরিয়ে ফেলা ও কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব বীজতলায় চারা না রেখে যেন জমিতে রোপণ করে ফেলে সে পরামর্শও দেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে পরামর্শ মেনে চললে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

গাজীপুর কথা