ঢাকা,  বুধবার  ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

কালীগঞ্জে নৌকার নির্বাচন করায় হত্যা, ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ১৭:২২, ১৭ জুলাই ২০২১

কালীগঞ্জে নৌকার নির্বাচন করায় হত্যা, ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে নৌকার কর্মী এনামুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে আটজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের চাচা মো. আলমগীর হোসেন। বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) রাতে থানায় আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনকে আসামি করে ৩০২/৩৪ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন তিনি।

শুক্রবার (১৬ জুলাই) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি একেএম মিজানুল হক। তিনি বলেন, নিহত এনামুল ইসলামের চাচা বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে বিবাদী রিফাত এনামুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে মধ্য নারগানা এলাকার জনৈক মনিরের চালা জমির উত্তর-পূর্ব পাশে আউয়ালের টং দোকানের নিকট আসতে বলে। সরল মনে এনামুল ঘটনাস্থলে গেলে মাসুদ, বাছির, লুৎফুর রহমান, রিফাত, সাইফুল, সাকিব, নাছির ও মোক্তারসহ আরও অজ্ঞাত ৮/১০ জন মিলে ছুরি, চাপাতি, রামদা, লোহার রড এবং দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আউয়ালের দোকানের পেছনে নিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে তাকে জখম করে। হাতে, বাম পায়ের হাড় ভেঙে এবং কুপিয়ে জখম করলে এনামুল মাটিতে লুটে পড়ে। তখন তার আত্মচিৎকারে আশপাশের মানুষ এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা চলে যায়।

পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জামালপুর লুবনা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসক তাকে পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢামেকে নিয়ে যাওয়ার পথে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে শ্যামলী এলাকার এক হাসপাতালে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। বুধবার (১৪ জুলাই) রাত ৯টার সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় এনামুল মারা যায়। তারপর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ কালীগঞ্জে নারগানার বাড়িতে এনে তার পরিবারের স্বজনরা দাফন সম্পন্ন করেন।

এদিকে, কালীগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে বিরোধের জেরে নিহত নৌকার কর্মী এনামুল হোসেনের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি। বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) বিকেলে জামালপুর ইউনিয়নের মধ্য নারগানা এলাকার নৌকার কর্মী নিহত এনামুল হোসেনের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তার বাড়িতে যান তিনি।

এ সময় চুমকি বলেন, আমি সবাইকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, সন্ত্রাসী যত শক্তিশালীই হোক, তাদের কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। আরও স্পষ্ট করে বলতে চাই, ঘোলা পানিতে কেউ মাছ শিকারের চেষ্টা করবেন না। সন্ত্রাসীদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে তিনি পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
জামালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান খাঁন ফারুক মাস্টার বলেন, এনামুল নৌকার পক্ষে আমার কর্মী ছিল। মঙ্গলবার রাতে আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে সে বাড়ি থেকে বের হলে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে গুরুতর আহত করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে সে মারা যায়। অভিযুক্তরা সবাই নৌকার বিরুদ্ধে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করেছে।

জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খাইরুল আলম বলেন, এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য একটি পক্ষ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের সব ষড়যন্ত্র ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। সত্যের জয় সুনিশ্চিত, কোনো ষড়যন্ত্র আমাকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।

মামলার বাদী আলমগীর হোসেন বলেন, যারা আমার ভাতিজাকে হত্যা করেছে তাদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

গাজীপুর কথা