ঢাকা,  বুধবার  ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

আরো বেপরোয়া শ্রীপুরের সুদের কারবারী ইমরান

প্রকাশিত: ১৪:১৭, ১২ মে ২০২১

আরো বেপরোয়া শ্রীপুরের সুদের কারবারী ইমরান

শ্রীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের শিমলা পাড়ার বাসিন্দা ইমরান সরকারের উচ্চ সুদের ফাঁদে পড়ে ভিটেমাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে শ্রীপুরের অনেক অসহায় মানুষ। পিতার রাজনৈতিক প্রতিপত্তিকে পুজি করে এরই মধ্যে গড়ে তুলছে তার সুদের ব্যবসার সিন্ডিকেট। ইমরান মানুষকে টাকা ধার দিয়ে ব্ল্যাংক চেক জমা নেন। পরে নিজের ইচ্ছেমত অংক বসিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করেন। এতে ঋণের অর্থ পরিশােধ করতে গিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। 

গত ২০১৮ সালে বদনী ভাঁঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা দেলােয়ার হােসেন ও তার দুই ছেলে মুরগীর ফার্ম করার পরিকল্পনায় ইমরান এর কাছ থেকে প্রতি মাসে লাখ প্রতি ১৮ হাজার টাকা সুধে তিন ধাপে ১৮ লক্ষ টাকা (৭ লক্ষ, ৪ লক্ষ ও ৭ লক্ষ) ধার নেয় । উক্ত ঋণের বিপরীতে ইমরান দেলোয়ার হোসেনের নিকট থেকে তার শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক মাওনা শাখার একাউন্ট ৪০৩৪১১১০০০০০৮১২ এর একটি ব্ল্যাংক চেক (SIBL/ACD ০০০০০৫৬), তার বড় ছেলে আমিনুলের কাছ থেকে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মাওনা শাখার ৪০৩৪১১১০০০০০৯৮৩ নং একাউন্টের ৪টি ব্ল্যাংক চেক (SIBL/ACD ০০০০০৫৪, ০০০০১২২, ০০০০০৭১, ০০০০১১৪) ও ছোট ছেলের আইএফআইসি ব্যাংক এর মাওনা শাখার একাউন্ট ১২২৬০৪৭৬২৩০০১ এর একটি ব্ল্যাংক চেক (CAJ ৪৭০৮৭৪৬) নেয়। পরবর্তীতে তারা ৭ মাসে ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে আর্থিক অনটনে পরবর্তী দুই বছর কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি। এরই মধ্যে ইমরান তাদের নিকট সুদাসলে ৫৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। চেক ডিজঅনার করিয়ে গত ২৪ মার্চ ২০২১ তারিখে আমিনুলকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়।

গত ৩০ এপ্রিল গাজীপুর কথা পত্রিকায় ইমরানের এ সকল কুকীর্তি প্রকাশিত হওয়ার পর শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুলকে ডেকে সহযােগিতার আশ্বাস দেয়। এতে ইমরান আরাে বেপরােয়া হয়ে ওঠে। সে আমিনুলকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি ধামকি দিতে থাকে। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ইমরান দেলােয়ার হােসেন ও তার ছেলে আমিনুলের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় মামলা করে। পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে পরিবারটি এখন আতংকে দিনযাপন করছে। 

ইমরানের উচ্চ সুদের কারবারের আরাে শিকার মাওনা শিরিষগুড়ি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে বাদল, শিমলাপাড়ার জলিল মােড়লের ছেলে মনু, বদনীভাঙ্গা এলাকার জামাল, শিমলাপাড়ার মজিদ মুন্সীর ছেলে জামাল, ফজলু মিয়ার ছেলে শাবদুলসহ আরাে অনেকে। ইমরানের সুদের টাকা পরিশােধ করতে গিয়ে তারা কেউ কেউ ভিটেমাটি বিক্রি করেছেন আবার কেউ নিজের সন্তান ও বিক্রি করেছেন বলে এলাকায় লােকমুখে প্রচলিত।

ইমরানের অপরাধ জগত শুধু সুদের ব্যবসাতে সীমাবদ্ধ নয়। সে ইয়াবা, মদ ও গাঁজা একই সাথে সেবনকারী ও খুচরা বিক্রেতা হিসেবে নিজ এলাকায় পরিচিত। বিগত ২০১৮ সালে গাজীপুর ডিবি পুলিশের একটি টিম মাদক বিক্রির অপরাধে শ্রীপুর উপজেলার শিমলাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। তাছাড়া সে গরু চুরি ও মােটর সাইকেল চুরির সংঘবদ্ধ চক্রের সাথে জড়িত বলে এলাকায়  জনশ্রুতি আছে। গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গরু চুরির অভিযােগে ইমরানের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা রয়েছে।

ইমরানের পিতা নজরুল সরকার মাওনা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং এমপি সাহেবের নাম ভাঙ্গিয়ে তারা এলাকায় বেশ প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। লাঞ্ছিত হয়েও কেউ ভয়ে মুখ খোলার সাহস পায় না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা ও রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখার জন্য অবৈধভাবে লাইসেন্স বিহীন ১ টি পিস্তল বহন করে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইমরানের এক ঘনিষ্ঠ সহচর প্রতিবেদককে জানায়।

রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ হলেন জনগণের সেবক। ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ে একজন নেতা আমজনতার সবচেয়ে কাছের মানুষ। অথচ এ পর্যায়ে একজন নেতার সন্তান হয়ে নিরীহ জনগণকে একের পর এক হয়রানি করে যাচ্ছে। নিজের এলাকায় গড়ে তুলেছে অপরাধী সিন্ডিকেট। হামলা-মামলায় ভিটেমাটি ছাড়া হচ্ছে সাধারণ মানুষ। একজন ভূক্তভােগীকে প্রশাসনের আশ্বাসের পরও মামলা করে হয়রানির কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে? 
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আরও পড়ুন:  ইমরানের মহাজনী সুদে সর্বস্বান্ত হচ্ছে শ্রীপুরবাসী

গাজীপুর কথা