ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

নলকূপ অনুমোদনে বাধা, কয়েকশ একর জমি অনাবাদের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ২০ জানুয়ারি ২০২২

নলকূপ অনুমোদনে বাধা, কয়েকশ একর জমি অনাবাদের আশঙ্কা

ময়মনসিংহের ত্রিশালে একটি অগভীর নলকূপে অনুমোদনে বাধা দেওয়ায় কয়েকশ একর জমির বোরো আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। 

বোরো আবাদ করতে না পারলে কেউ কেউ দেনার মধ্যে পড়ারও শংকা করছেন। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার।

ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ইউপির আমিয়ানডাঙ্গুরী গ্রাম। এই গ্রামের শতকরা ৯৯ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। প্রায় পাঁচশ একর জমি নিয়ে আমিয়ানডাঙ্গুরী বিল। বিগত কয়েক বছর ধরে এই গ্রামের কৃষকরা কাজি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের অগভীর নলকূপ থেকে পানি এনে বোরো আবাদ করছেন। এতে করে একটি অগভীর নলকূপে শতশত একর জমিতে পানি দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় মুজিবুর রহমানকে। 

এই অবস্থায় গত বছর আমিয়ানডাঙ্গুরী গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক একটি অগভীর নলকূপ বসিয়ে জেনারেটর দিয়ে কিছু জমি আবাদ করেছেন। এবার তিনি একটি অগভীর নলকূপের অনুমোদনের জন্য উপজেলা সেচ কমিটি বরাবর আবেদন করেন।

বিষয়টি সরেজমিন তদারকি করে বিএডিসির পক্ষ থেকে সেচ লাইন দেয়া যায় বলে একটি প্রত্যয়ন দেয়া হলেও বিপত্তি সৃষ্টি করেন মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান। তিনি উল্টো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন তার অগভীর নলকূপের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় আব্দুল মালেক কোনো ভাবেই অনুমোদন পেতে পারেন না। 

 

 ত্রিশালে একটি অগভীর নলকূপে অনুমোদনে বাধা দেওয়ায় কয়েকশ একর জমির বোরো আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। 

ত্রিশালে একটি অগভীর নলকূপে অনুমোদনে বাধা দেওয়ায় কয়েকশ একর জমির বোরো আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। 

আমিয়ানডাঙ্গুরী গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, গত বোরো মৌসুমে আমিয়ানডাঙ্গুরী বিলের কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে অগভীর নলকূপ বসিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে কিছু জমিতে পানি দেই। তবে জেনারেটরে খরচ বেশি হওয়ায় পানি দিয়ে লোকসানে পড়তে হয়েছে। 

অন্যদিকে মুজিবুর রহমানের নলকূপ থেকেও পানি ঠিক মতো না পাওয়ায় কৃষকদের অনেক জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। ১২শ ফিটের মধ্যে কোনো সেচ না থাকায় গত বছরের ৭ নভেম্বর ৩ ইঞ্চি ডেলিভারির একটি অগভীর নলকূপের অনুমোদন চেয়ে উপজেলা সেচ কমিটি বরাবর আবেদন করি। নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও অপরপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তার বাধার প্রেক্ষিতে সেচের অনুমোদন পাচ্ছি না। 

স্থানীয় কৃষক আপিল উদ্দিন বলেন, গত দুই বছর ধরে পানির অভাবে  ঠিক মতো বোরো আবাদ করতে পারছি না। প্রথমদিকে মুজিবুর রহমান সবার ক্ষেতে কমবেশি পানি দিতে পারলেও শেষের দিকে অনেকেই পানি না পাওয়ায় ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই নষ্ট হয়। এদিকে একটা নলকূপ বসালে কৃষকদের জন্য খুবই উপকার হতো।

আশপাশের কয়েকটি এলাকার মধ্যে আমিয়ানডাঙ্গুরী বিল বোরো ফসলের জন্য সবচেয়ে বড় দাবি করে কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে মজিবুর রহমানের নলকূপ থেকে পানি এনে বোরো আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে একটি নলকূপ প্রয়োজন। 

প্রভাষক ও কৃষক সানি জাহিদ বলেন, আমিয়ানডাঙ্গুরী বিলে তাদের ৬ একর বোরো আবাদের জমি রয়েছে। ধানে তোড় আসার আগে নলকূপের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। কিস্তি পরিশোধ করার কাঙ্খিত পানি পাওয়া যায় না। এ সময় অনেক ধান নষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে ঋণগ্রস্ত কৃষকরা প্রত্যাশী অনুযায়ী ধান ঘরে তুলতে পারে না। তাই এই মাঠে একটি নলকূপ প্রয়োজন। 

মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান বলেন, প্রায় বিশ বছর ধরে এলাকার মানুষকে নলকূপের পানি দিয়ে সেবা দিচ্ছি। গত কয়েক বছরে আশপাশে আরো দুইটি নলকূপ হয়েছে। জমির পরিমাণ কমে আসায় খুব একটা লাভ হয় না। এখানে আরেকটা নলকূপ বসলে স্কিমে জমির পরিমাণ আরও কমে যাবে। তবে কেউ যদি নলকূপ বসাতে চায় তাহলে নিয়ম মেনেই বসাতে হবে। 

ময়মনসিংহ বিএডিসি জোনের সহকারী প্রকৌশলী ওয়াশিম আকরাম বলেন, আমাদের লোকজন গিয়ে এক স্কিমের চেয়ে অন্য স্কিমের দুরুত্ব মেপেছেন। ১ হাজার ১৪৮ ফিটের জায়গায় পেয়েছে ১ হাজার ১০৫ ফিট। ৪৩ ফিট কম হওয়ার কারণে অনুমোদন দেয়া হয়নি। অল্পকমে অনুমোদন দেয়া যায় তবে পার্শ্ববর্তী স্কিমের মালিক মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তার আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমোদন স্থগিত রয়েছে। তবে সেচ কমিটি চাইলেই অনুমোদন দিতে পারবেন। 

ত্রিশাল উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার রিপা রানী চৌহান বলেন, উপজেলায় এবছর ১৯ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেচের কারণে কোনো বোরো জমি অনাবাদি থাকবে এমন অভিযোগ আমরা পায়নি। যদি কেউ অভিযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আক্তারুজ্জামান বলেন, সেচ অনুমোদনের বিষয়ে অভিযোগ আসায় সেটি স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে যদি প্রয়োজন মনে করি তাহলে অনুমোদন দেওয়া হবে। 

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন