ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পদ্মা সেতু-এক্সপ্রেসওয়ে: ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত টোল নির্ধারণ

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ২৮ জুন ২০২২

পদ্মা সেতু-এক্সপ্রেসওয়ে: ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত টোল নির্ধারণ

পদ্মা সেতু-এক্সপ্রেসওয়ে

পদ্মা সেতুর পর এবার টোলের আওতায় আনা হচ্ছে আগে-পরের মহাসড়কটিও। ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে (এক্সপ্রেসওয়ে) চলাচলকারী যানবাহনগুলোর দিতে হবে টোল।

এ ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যে কোনো বড় বাসে টোল দিতে হবে ৪৯৫ টাকা। আর পদ্মা সেতুতে বড় বাসের টোল ২৪০০ টাকা। অর্থাৎ ফরিদপুর পর্যন্ত যেতে টোল গুনতে হবে সব মিলিয়ে ২৮৯৫ টাকা।

একইভাবে পদ্মা সেতুতে বড় ট্রাকের টোল (৮-১১ টন) ২ হাজার ৮০০ টাকা। এখন সড়কে এ ধরনের ট্রাক দিয়েই ভারী মালামাল পরিবহন করা হয়। জুলাই থেকে মহাসড়কে চলাচলের জন্য এসব ট্রাকে টোল দিতে হবে ১১০০ টাকা। এ শ্রেণির ট্রাকের সেতু ও সড়কের টোল দাঁড়াবে ৩ হাজার ৯০০ টাকা।

সোমবার (২৭ জুন) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয় ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে আগামী ১ জুলাই থেকে টোলহার কার্যকর হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মাঝারি ট্রাকটিকে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা হারে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। টোল নীতিমালা ২০১৪ অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে টোলের হার নির্ধারণের আগপর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের টোলের হার নির্ধারণ করা হলো।

মহাসড়কে বিভিন্ন যানের প্রতি কিলোমিটারে টোল কত হবে এ নিয়ে প্রজ্ঞাপনে সই করা সড়ক পরিবহন বিভাগের উপসচিব ফাহমিদা হক খান বলেন, এ-সংক্রান্ত আলাদা একটি ফাইল অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। পরে আলাদা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হবে।

গতকাল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লাহ নূরী জানান, মাঝারি গাড়িকে স্টান্ডার্ড ধরে প্রতি কিলোমিটারের টোল ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গল ও বুধবারের মধ্যে মোটরসাইকেল ও অন্যান্য ছোট যানবাহন এবং বড় গাড়ির মধ্যে একটি সমন্বিত টোল নির্ধারণ করা হবে। কিছু গাড়ির টোল বাড়তে পারে আবার ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে কমতে পারে।

তবে সওজ সূত্র থেকে শ্রেণিভেদে বিভিন্ন যানবাহনের টোলহারের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে।

টোল হার:

নির্ধারিত হার অনুসারে, ভারী ট্রাকের জন্য টোল হবে প্রতি কিলোমিটার ২০ টাকা। মাঝারি ট্রাকে টোলহার হবে ১০ টাকা। আর বড় বাসের টোল ধরা হয়েছে প্রতি কিলোমিটার ৯ টাকা। মিনিবাসের টোল প্রতি কিলোমিটার সাড়ে ৭ টাকা। সেডান কার বা প্রাইভেট কারের জন্য প্রতি কিলোমিটারে টোল দিতে হবে আড়াই টাকা। আর ফোর–হুইলার গাড়ি ও মাইক্রোবাসের প্রতি কিলোমিটারে টোল হবে ৪ টাকা। এর সঙ্গে পদ্মা সেতুর টোল যোগ হবে। চওড়া সড়ক ও পদ্মা সেতু চালুর ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াত সহজ হয়েছে। তবে এর জন্য এই পথের যাত্রী ও মালামাল পরিবহনকারীদের বাড়তি টাকা গুনতে হবে।

পদ্মা সেতুতে কার ও জিপের টোল ৭৫০ টাকা। জুলাই থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কের টোল দিতে হবে ১৪০ টাকা। সব মিলিয়ে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত কার ও জিপের টোল দাঁড়াবে ৮৯০ টাকা।

মাঝারি ট্রাকের (৫-৮ টন) জন্য পদ্মা সেতুতে টোল ২ হাজার ১০০ টাকা। মহাসড়কের টোল যোগ হবে ৫৫০ টাকা। ফলে এখন সেতু ও মহাসড়ক মিলে টোল দাঁড়াবে ২ হাজার ৬৫০ টাকা।

চার এক্সেলের ট্রেইলারের জন্য পদ্মা সেতুতে টোল নির্ধারিত আছে ছয় হাজার টাকা। আর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কের টোল হবে ১৩৭৫ টাকা। অর্থাৎ এ শ্রেণির মালবাহী যানকে সেতু ও সড়ক মিলিয়ে টোল দিতে হবে ৭৩৭৫টাকা, মোটরসাইকেলের জন্য পদ্মা সেতুতে টোল ১০০ টাকা। জুলাই থেকে মহাসড়কের জন্য টোল দিতে হবে ৩০ টাকা। সব মিলিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত টোল হবে ১৩০ টাকা।

মূল সেতু, ভায়াডাক্টসহ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক ৫৫ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে ভাঙ্গার দূরত্ব দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার।

সওজ সূত্রে আরও জানা যায়, কোনো যানবাহন পুরো ৫৫ কিলোমিটার না গিয়ে মাঝপথে অন্যদিকে চলে গেলে নির্দিষ্ট দূরত্বের জন্য টোল আদায় করা হবে। তবে তা হবে পরবর্তী টোল প্লাজাকে হিসাবে নিয়ে।

মহাসড়কের টোল আদায় করতে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ছয়টি টোল বুথ রাখা হয়েছে। মাওয়া পর্যন্ত তিনটি, পদ্মা সেতুর ওপারে তিনটি। এপারে তিনটি টোল বুথ থাকবে আবদুল্লাহপুর, ধলেশ্বরী ও শ্রীনগর এলাকায়। আর ওপারে কুলিয়াবাজার, মালি গ্রাম ও ভাঙ্গায় টোল বুথ থাকবে।

অন্যান্য সেতুর টোল:

ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় যেতে পদ্মা সেতু ছাড়াও ৫টি জায়গায় টোল দিতে হয়। এর মধ্যে মেয়র হানিফ উড়ালসড়কে ৮৫ টাকা টোল দিতে হয়। বুড়িগঙ্গা (পোস্তগোলা), ধলেশ্বরী ও আড়িয়াল খাঁ—এই তিনটি সেতুতে সব মিলিয়ে বড় বাস ও ট্রাকের জন্য প্রায় ২০০ টাকা টোল দিতে হয়। মাদারীপুরে হাজি শরীয়তুল্লাহ সেতু ব্যবহারের জন্য টোল দিতে হয় ৬০ টাকা।

সওজ সূত্র জানায়, মহাসড়কে টোল চালু হলে বুড়িগঙ্গা (পোস্তগোলা), ধলেশ্বরী ও আড়িয়াল খাঁ সেতুতে টোল বন্ধ হয়ে যাবে। এগুলো বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা হবে। তবে মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন এবং এটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে এর টোল থাকবে। শরীয়তুল্লাহ সেতুর টোল বন্ধ করার বিষয়ে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

যেসব যানবাহন মহাসড়কে নিষিদ্ধ:

উড়ালসড়কে তিন ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত যান, তিন চাকার মোটরযান, রিকশা–ভ্যান, বাইসাইকেল–ঠেলাগাড়ি।

সওজ সূত্র বলছে, টোল দিয়ে যারা যাবেন, তারা সময় বাঁচাতেই টাকা দেবেন। এখন ধীরগতির স্থানীয় যানবাহন মহাসড়কে চলাচল করলে দুর্ঘটনা ঘটবে, যানের গতি কমে যাবে। টাকা দিয়ে তো কেউ এটা চাইবেন না। এ জন্যই ধীরগতির যান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সব মহাসড়কে টোল বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। টোল চালু হলে স্থানীয় যানবাহন চলতে দেয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু সড়কে স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা লেন আছে। অন্য মহাসড়কেও তা তৈরি করা হচ্ছে।

ধীরগতির যানের মধ্যে রয়েছে শ্যালো মেশিন ও ট্রাক্টর দিয়ে তৈরি যান, নছিমন-করিমন-ভটভটি, রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান।

দেশে দ্রুতগতির প্রথম মহাসড়ক হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের অধীন। ২০২০ সালে চালু হওয়া  সড়ক দেশের প্রথম প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত দ্রুতগতির মহাসড়ক। এ সড়কের বিশেষত্ব হচ্ছে চার লেনের মূল সড়কে বাইরে থেকে যখন-তখন যানবাহনের প্রবেশের সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট কিছু স্থান দিয়ে মহাসড়কে প্রবেশ ও বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাসে যাত্রী ওঠানামার জন্য ছাউনিসহ কিছু স্থানে বাস স্টপেজ আছে।

পুরো মহাসড়কে ৫টি উড়ালসেতু, ১৯টি পাতালপথ এবং প্রায় ১০০টি ছোট-বড় সেতু ও কালভার্ট আছে। এগুলোর নকশা বেশ নান্দনিক, উঁচু-নিচু করে তৈরি করা। ফলে রাতে সড়ক বা সেতুর বাতি সৌন্দর্য ছড়ায়। মাঝখানে বেশ চওড়া সড়ক বিভাজক আছে। এতে ফোটে নানা রঙের ফুল।

স্থানীয় মানুষের ব্যবহারের জন্য দুই পাশে ১৮ ফুট চওড়া সড়ক (সার্ভিস রোড) আছে, যা মূল মহাসড়ক থেকে অনেকটা নিচু। দুই পাশের সার্ভিস রোডে পারাপার হয় পাতালপথে। এর ফলে ঢাকা থেকে ভাঙ্গার যাতায়াত এখন এক ঘণ্টায় নেমে এসেছে। এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৪ কোটি টাকা। সওজের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুতগতির সব সড়কই টোলের আওতায় আনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে।

এ এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায়ে দক্ষিণ কোরীয় একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। গত ২২ জুন সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন- কেইসিকে ৭১৭ কোটি টাকায় এ কাজের জন্য নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
কোম্পানিটি আগামী পাঁচ বছরের জন্য ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক’ এর রক্ষণাবেক্ষণ, টোল আদায় ও অন্যান্য পরিচালন কাজে যুক্ত থাকবে।