ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগাতে পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২২ মে ২০২২

সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগাতে পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশ

দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সমুদ্রে থাকা বিশাল মৎস্য ও খনিজ সম্পদ কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করারও নির্দেশ দেন তিনি। রোববার (২২ মে) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের প্রথম সভায় দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি আমাদের ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে আজকের যে বিশাল সমুদ্র রাশি আমরা পেয়েছি এ সম্পদটা আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা ব্লু ইকোনোমি ঘোষণা দিয়েছি। অর্থাৎ সুনীল অর্থনীতি, সমুদ্র সম্পদকে আমাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো। কিছু কিছু কাজ কিন্তু শুরু হয়েছে খুব সীমিত আকারে।

সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগাতে একটি পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সমুদ্র সম্পদ নিয়ে আমাদের একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত। সেখানে আমরা কতটুকু কী কী করতে পারি। সেখানে আমরা তেল-গ্যাস উত্তোলন অর্থাৎ সামুদ্রিক যে সম্পদ যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে, খাদ্য নিরাপত্তায় কাজে লাগতে পারে বিভিন্নভাবে, বিশাল মৎস্য ভাণ্ডার এখানে।

তিনি বলেন, এ সম্পদ আমরা হেলায় হারাতে পারি না। এটা অর্থনৈতিক অঙ্গনে কীভাবে কাজে লাগাব এটা আমাদের দেখা দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি বিষয় হলো বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে গুরুত্বটা হলো যে আদিকাল থেকে এ বঙ্গোপসাগর দিয়ে সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্যটা চলে। দুই পাশে দুটি মহাসাগর। এ মহাসাগর থেকে আরেকটাতে যেতে গেলে এ বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়েই কিন্তু চলাচলটা হয়। সেদিক থেকে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব কিন্তু অনেক বেশি। কাজেই এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ আমরা কীভাবে আমাদের অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারি সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।

মৎস্য সম্পদ, খনিজ সম্পদসহ সমুদ্র গবেষণা বাড়ানোর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গোপসাগরকে দূষণমুক্ত রাখার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন দূষণ তো সব দেশেই। সাউথ সীতে এমন অবস্থা যে সেখানে পানি পাওয়া যায় না। শুধু তেলের ফেনা, আমি নিজে সেখানে গিয়ে দেখে এসেছি। হাতে তুলেও নিয়েছিলাম। নেদারল্যান্ডসে থাকতে আমি গিয়েছিলাম। কাজেই আমাদের উপমহাদেশে যেন আমাদের বঙ্গোপসাগরটা সে রকম দূষণ না হয় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। এটা যেমন পলিউশনমুক্ত রাখতে হবে। পাশাপাশি এ সম্পদটা আমরা কীভাবে কাজে লাগাব সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।

দেশের নদীগুলোকে দূষণ থেকে রক্ষা করার নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। যত্রতত্র শিল্প কারখানা যেন না হয় সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে জানান তিনি। এক্ষেত্রে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। নদী-খালগুলো সচল রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, এটা মাথায় রাখতে হবে আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশ। নদীগুলো হচ্ছে একটা মানুষের শরীরে যেমন শিরা-উপশিরা, ঠিক নদীগুলোও আমাদের দেশের জন্য শিরা-উপশিরা।

আগে এ অঞ্চলের নদীগুলো সচল রাখতে নিয়মিত ড্রেজিং হত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোট বেলায় বাবার কাছে গল্প শুনতাম আমাদের দেশে আগে নিয়মিত ড্রেজিং হত। ড্রেজারগুলো থাকত আসামে। সেগুলো নেমে নিচে চলে আসত এবং নদী কেটে সেগুলো আবার সেখানে থাকত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেই ড্রেজারগুলো গানবোট হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। তারপর থেকে আর কোনও নদী ড্রেজিং হয়নি।

নদীর নাব্যতা ধরে রাখার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে সেগুলোর নাব্যতা বাড়ানো। পাশাপাশি প্রতিবছর সেগুলো রক্ষণ করার জন্য ড্রেজিং ও নদীগুলো যেন মরে না যায় সে ব্যবস্থা নেওয়া। বদ্বীপটাকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা উন্নত জীবন দেওয়া এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার।

ডেল্টা প্ল্যান প্রসঙ্গে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ডেল্টা প্ল্যান করার লক্ষ্যটা হলো- আমাদের ভবিষ্যৎ করণীয় সেটা আমরা সুনির্দিষ্ট করে ফেলেছি। কাজেই ২০২০-এর মধ্যে আমাদের রূপকল্প বাস্তবায়ন করে ২১ সালে এসে সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করেছি। পরিকল্পনা আরেকটা নিয়েছি ২১ থেকে ৪১ পর্যন্ত আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা হচ্ছে এটা একটা কাঠামো। এ কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই আমাদের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।

শেখ হাসিনা বলেন, বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষকে সুরক্ষিত করা ও এদেশের মানুষকে সুন্দর জীবন দেওয়া, উন্নত জীবন দেওয়া। যেহেতু আমাদের নদীমাতৃক দেশ নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা। তাতে আমাদের পণ্য পরিবহন ও দুর্যোগ মোকাবিলা সব দিকেই সুবিধা হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সেগুলো আমরা হাতে নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বদ্বীপটাকে রক্ষা করা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা উন্নত জীবন দেওয়া এটা আমি মনে করি আমাদের জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন। আসলে পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নিতে পারলে যেকোনো কঠিন কাজ সমাধান করা যায়। যে পদক্ষেপেই আমি নেই সময়ের বিবর্তনে সেগুলো সংশোধন করা এ মানসিকতাও থাকা উচিত। কাজেই আমরা সেভাবেই পদক্ষেপগুলো নিয়েছি ও বাস্তবায়ন করেছি। যার ফলে আমরা কিন্তু একটা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি।

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। কারণ আমরা জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃতির কোনো ক্ষতি হতে দেই না। কিন্তু উন্নত দেশগুলো ক্ষতি করছে তার প্রভাবে জলবায়ুর ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু এর আঘাতটা বাংলাদেশের ওপর আসবে।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীজাহিদ ফারুক, প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

গাজীপুর কথা