
রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এজেন্ডাভিত্তিক সংলাপ হতে পারে: মন্ত্রী তাজুল ইসলাম
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পর আলোচনা হলে নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে তা কেটে যাবে। নির্বাচন নিয়ে ঐক্যমত তৈরির ক্ষেত্রে সংলাপের বিষয়ে দ্বিমত নেই, তবে সে সংলাপ এজেন্ডাভিত্তিক হওয়া উচিৎ। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে ভিন্নমত থাকলেও বিতর্ক হবে, বিতর্কের মাধ্যমে রাজনৈতিক বিরোধের নিষ্পত্তির উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে। পৃথিবীতে অনেক দেশেই দুর্নীতি আছে যা থেকে আমরাও মুক্ত নই। তবে দুর্নীতি কমাতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। দলীয়ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়ায় এখন নির্বাচনী সহিংসতা কমে এসেছে এবং অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি এখন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছে।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন নিয়ে ‘ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট’ শিরোনামে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, এমপি এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
এ সময় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো শিষ্টাচারের পরিচয় দিলে দলীয়ভিত্তিতে নির্বাচন স্থানীয় সরকারে সুশাসন নিশ্চিতকরণে সহায়ক হবে। সংসদ সদস্যরা স্থানীয় সরকারে কর্তৃত্ব করছে না বরং জবাবদিহিতা তৈরিতে সহায়তা করছে। জন্ম নিবন্ধনের ফি সরকারি তহবিলে জমা দেয়ার কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল তা দূর হয়েছে। এখন থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগ জন্ম নিবন্ধনের ব্যয় যোগান দিবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন আমাদের দরজার কাছে কড়া নাড়ছে। তবে নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান তৈরি হয়েছে তাতে আমরা শঙ্কিত। নির্বাচন বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে দেশের অর্থনীতিসহ নানামূখী অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন জনগণ দেখতে চায় না। আমরা আশা করি সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর উৎসবমূখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সভাপতি আরও বলেন, দলীয়ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় সমাজের শিক্ষিত, সৎ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকছে। অর্থ উপার্জনের জন্য তারা জনপ্রতিনিধি হতে চাইতেন না। রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে তাদের জনপ্রিয়তা, সততা, শিক্ষা-দীক্ষা মানুষকে আকৃষ্ট করতো। কিন্তু দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ফলে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হয়। ফলে নির্বাচনের জন্য ব্যয় করা অর্থ উঠানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি অসৎ উপায় অবলম্বন করে থাকে। ফলে সাধারণ মানুষকে সেবা পেতে অর্থ ব্যয়সহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়, যা মোটেই কাম্য নয়। এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র মধ্যে মাঝে মাঝে যে অলিখিত দ্বন্দ্ব দেখা যায় সেটি কার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বড় অন্তরায়। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারে সংরক্ষিত কোটায় নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ নগন্য। এ অবস্থা উত্তরণে আমাদেরকে আরো বেশি জেন্ডার সংবেদনশীল হতে হবে।
“স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করেছে” শীর্ষক ছায়া সংসদে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকদের পরাজিত করে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস সফলভাবে উদযাপনের জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক সোমা ইসলাম, সাংবাদিক ঝর্ণা রায় ও সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।