ঢাকা,  বুধবার  ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

অবৈধ ছেলেই নষ্ট হতে দেয়নি বাবার শরীর

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

অবৈধ ছেলেই নষ্ট হতে দেয়নি বাবার শরীর

ভাইবোনের মধ্যে বিয়ের ব্যাপারটা প্রাচীন মিশরে খুবই পবিত্র বলে মনে করা হতো। রক্তের বিশুদ্ধতা ধরে রাখার জন্য মিশরের রাজপরিবারগুলোতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভাইয়ের সঙ্গে বোনের বিয়ে হয়েছে। তাইতো পৃথিবীর দেবতা গেব প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছিলেন তারই বোন আকাশ আর স্বর্গের দেবী নুটকে। বিয়ের পরপরই দেবতা গেব ও ন্যুট একে একে জন্ম দিলেন চার ছেলেমেয়ের।

এই চার সন্তানের মধ্যে প্রথম জন ওসাইরিস বা ওসিরিস। পৃথিবী ও আকাশের সঙ্গমে তার জন্ম, প্রকৃতির সম্মিলিত শক্তির প্রতীক বলা চলে তাকে। বিয়ের বয়স হওয়ার পর পরিবারের ঐতিহ্য মেনে নিজের সুন্দরী বোন আইসিসকে বিয়ে করেন ওসাইরিস। আইসিস ছিলেন যাদুবিদ্যা, মাতৃত্ব ও প্রকৃতির দেবী৷ সারল্য আর শিশুদের রক্ষাকর্ত্রী দেবীও তিনি। মিশরের রাজা মানে ফারাওদের বলা হতো ‘আইসিসের সন্তান’।

গেবের ছোট ছেলে ওসাইরিসের ভাই সেথ ছিলেন মরুভূমি, ঝড় আর অন্ধকারের দেবতা। ছোটবেলা থেকেই সে ছেলে ভারী অহংকারী, দুর্দমনীয়, কপট। গেব তার দুই ছেলের মধ্যে রাজত্ব ভাগ করে দিতে চেয়েছিলেন। ঠিক হলো মিশরের দক্ষিণ অংশ বড় ভাই ওসাইরিসের দখলে থাকবে। আর উত্তর অংশ থাকবে কনিষ্ঠ সেথের দখলে। কিন্তু এসব ভাগাভাগিতে আপত্তি ছিল সেথের। সে চাইল সম্পূর্ণ মিশরের আধিপত্য৷ এই অন্যায় দাবিতে রেগে গেলেন বাবা। ছেলের অপশাসন আর নিষ্ঠুরতার প্রমাণও মিলেছিল। সবদিক ভেবে বাবা গেব ওসাইরিসকেই সমগ্র মিশরের একছত্র অধিপতি ঘোষণা করেন।

রাজা হিসেবে ওসাইরিস ছিলেন প্রজাদরদি, সুশাসক। যে সময় তিনি সিংহাসনে বসেন, তখন প্রাচীন মিশরের মানুষ ছিল বর্বর। মানুষ মানুষেরই কাঁচা মাংস খেত। রাজা হয়েই ওসাইরিস রদ করলেন সেই নরমাংস ভক্ষণ রীতি। মিশরীয়দের চাষবাস করতে শেখালেন তিনি। ফলাতে শেখালেন গম, বার্লি, আঙুর। তৈরি করলেন উৎকৃষ্ট মদ। শুধু সুসভ্য করাই নয়, কৃষিকাজ এবং তামার ব্যবহার সম্পর্কেও মিশরীয়দের শিক্ষিত করে তোলেন রাজা ওসাইরিস। বর্বর প্রাচীন মিশরীয়দের মধ্যে নিয়ে আসেন শৃঙ্খলা। গড়ে তোলেন প্রশাসক, স্থপতি ও কৃষিবিজ্ঞানীদের ফৌজ। সমাজের নিয়মকানুন, আইন-শৃঙ্খলা প্রণয়ন করতে তার আমন্ত্রণে এগিয়ে আসেন জ্ঞানের দেবতা থোথও। দুই দেবতায় মিলে শিল্পকলা আর বিজ্ঞানে পারদর্শী করে তোলেন মিশরবাসীকে।

 

পৃথিবীর দেবতা গেব, আর আকাশের দেবী নুটের প্রেম। ছবি : সংগৃহীত

পৃথিবীর দেবতা গেব, আর আকাশের দেবী নুটের প্রেম। ছবি : সংগৃহীত

পরস্পরকে খুব ভালোবাসতেন ওসাইরিস ও আইসিস। যখনই রাজ্য ছেড়ে অন্য দেশ ভ্রমণে যেতেন রাজা, রাজত্বভার দিয়ে যেতেন রানি আইসিসের উপর। কিন্তু সুখ জিনিসটাই ক্ষণস্থায়ী। এই দুই দেবতার সুখী দাম্পত্যেও কাঁটা হয়ে দাঁড়াল তাদেরই লোভী ভাই সেথ। তারও আগে ওসাইরিস নিজেই ভ্রান্তিবশত জড়িয়ে পড়লেন সেথের স্ত্রী নেফথিসের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে, যার পরিণামে তাদের একটি ছেলে জন্মায়। এই অবৈধ সন্তানই শেয়াল-দেবতা আনুবিস।

গেব ও নুটের ছোট মেয়ে ছিলেন নেপথিস৷ ওসাইরিস ও আইসিসের মতো নেপথিসও বিয়ে করেন নিজের ভাই অন্ধকারের দেবতা সেথকে। নেপথিসের গোপন দুর্বলতা ছিল বড়ভাই ওসাইরিসের উপর। কিন্তু ওসাইরিস স্ত্রীর প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন। অন্যের প্রেমপ্রস্তাবে সাড়া দেবেন না। তাই অন্য ফন্দি আঁটলেন দেবী নেপথিস। একদিন তিনি আইসিসের ছদ্মবেশে হাতে পানপাত্র নিয়ে গেলেন ওসাইরিসের ঘরে। একে ছদ্মবেশ, তার উপর মদের প্রভাব, চিনতে ভুল করলেন ওসাইরিস। মিলিত হলেন নেফথিসের সঙ্গে৷ তাদের মিলনেই জন্ম নিল মৃত্যু বা পরলোকের দেবতা আনুবিস।

চেহারার দিক থেকে অবশ্য ওসাইরিসের তুলনায় সেথের সঙ্গেই আনুবিসের মিল বেশি। যা হোক, স্ত্রীর পরকীয়া আর অবৈধ সন্তানজন্মের কথা যখন সেথের কানে গেল, রাগে দিকবিদিক জ্ঞান হারালেন তিনি। মনস্থির করলেন ওসাইরিসকে হত্যা করেই এর প্রতিশোধ নেবেন।

মাঝেমধ্যে বিদেশভ্রমণের শখ ছিল ওসাইরিসের। বেড়াতে বেড়াতে চলে যেতেন সুদূর ভারতবর্ষের সীমা অবধি। একবার রানি আইসিসের উপর রাজ্যভার দিয়ে রাজা বিদেশে বেড়াতে গেলেন। তখন গোপনসূত্রে রানি আইসিস জানতে পারলেন রাজাকে মারার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সেথ। ছোটবেলায় একবার সেথকে লাথি মেরেছিলেন ওসাইরিস। সে অপমান ভোলেনি সেথ। তার উপর পৃথিবীর রাজা হওয়ার লোভ, তাকে পাগল করে তুলেছিল। আসলে ওসাইরিসের সৌভাগ্য আর ক্ষমতাকে শুরু থেকেই হিংসে করত সেথ। নানাভাবে চেষ্টা চালাত তার ক্ষতি করার। সেই ঈর্ষার আগুনে ঘি ফেলেছিল স্ত্রী নেপথিস ও ওসাইরিসের অবৈধ সম্পর্ক।

ইথিওপিয়ার রানির সহায়তায় এক প্রকাণ্ড কাঠের সিন্দুক তৈরি করলেন সেথ। এক মানুষ দীর্ঘ সেই সিন্দুকের গায়ে অসাধারণ কারুকাজ। খুব গোপনে ওই সিন্দুক তৈরি করা হয়েছিল ওসাইরিসের শরীরের মাপে।

 

আইসিসের কোলে শিশু হোরাস। ছবি : সংগৃহীত

আইসিসের কোলে শিশু হোরাস। ছবি : সংগৃহীত

ওসাইরিস বিদেশ ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরলে তার রাজত্বের ২৮ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এক বিরাট ভোজসভার আয়োজন করেন সেথ। ভাইকে সসম্মানে আমন্ত্রণ জানান সেই মহাভোজে। আমন্ত্রণ করেন নিজের ৭২ জন বন্ধু ও অনুসারীকেও।

ভোজসভা যখন জমে উঠেছে, হাতে হাতে ঘুরছে সুস্বাদু পানীয় ভরা পানপাত্র, তখনই বুদ্ধি করে সেথ সেই বিরাট কাঠের সিন্দুকটাকে নিয়ে আসেন ভোজসভায়, আর ঘোষণা করেন যার শরীরের মাপের সঙ্গে এই সিন্দুকের মাপ মিলে যাবে তাকেই উপহার দেওয়া হবে এই মহার্ঘ সিন্দুক৷ এত অপূর্ব কারুকাজ করা সিন্দুক কেউ আগে দেখেনি। সবাই একে একে গিয়ে সিন্দুকের ভিতর শুয়ে দেখতে লাগল। কিন্তু কারো শরীরের মাপের সঙ্গেই মিলল না সিন্দুকের মাপ। একে একে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে এলেন সবাই। সবার শেষে এল ওসাইরিসের পালা। ভাইয়ের প্রতি অন্ধবিশ্বাসে কোনো রকম সন্দেহ না করেই ওসাইরিস গিয়ে শুলেন ওই প্রকাণ্ড সিন্দুকে। যেই না সিন্দুকে প্রবেশ করলেন রাজা ওসাইরিস,সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরের মাপে সিন্দুকের মাপ গেল মিলে। আর দুষ্টু সেথ বাইরে থেকে সেই সিন্দুক বন্ধ করে তার উপর ঢেলে দিলো গলানো সীসা। তারপর ওসাইরিসসহ সেই সিন্দুক নিক্ষেপ করা হলো নীলনদের জলে। সিন্দুকের ভিতর ছটফট করতে করতে মারা গেলেন দেবতা ওসাইরিস।

যখন ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন ওসাইরিস, তখন তার থেকে বহুদূরে থিবিসের কাছে এক গ্রামে ছিলেন আইসিস। দুর্ঘটনার আঁচ পেয়েই তিনি ছুটলেন স্বামীর খোঁজে। বিরহে, কষ্টে ভেঙে পড়লেও স্বামীর মৃহদেহ যে খুঁজে বের করতেই হবে তাকে। দেহ ছাড়া অন্তেষ্টি হবে না৷ তার অন্তেষ্টি না হলে আত্মার সদগতি হবে কী করে! শেষে উপায় না দেখে তিনি গেলেন দেবতা থোথের কাছে। জ্ঞানের দেবতা থোথ তাকে বলে দিলেন কোথায় আছে ওসাইরিসের মৃতদেহ ভরা সিন্দুক। অনেক ঝঞ্ঝাট পার করে শেষমেশ স্বামীর মৃতদেহ খুঁজে পেলেন আইসিস।

কিন্তু বিপদ কাটেনি তখনও। লোক মারফৎ সে খবর পৌঁছোল সেথের কাছেও। কালবিলম্ব না করে সেথ ওসাইরিসের দেহ ৪২ টুকরো করে ছড়িয়ে দিল সারা মিশরে। তারপর রাজা হয়ে বসলেন পৃথিবীর সিংহাসনে। স্বামী হারানো আইসিস আর উপায় না পেয়ে সেথের স্ত্রী নেফথিসের শরণাপন্ন হলেন। দুজনে মিলে পাখির রূপ ধরে সারা মিশর চষে তন্নতন্ন করে খুঁজে আনতে লাগলেন ওসাইরিসের দেহ খণ্ডগুলো। খুঁজতে লাগলেন চিল হয়ে, বাজপাখি হয়ে। একে একে খুঁজে পেলেন টুকরোগুলো। স্বামীর সেই দেহাবশেষ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন আইসিস। দেবীর চোখের জলে বন্যা এল নীলনদে।

 

বর্বর রাজ্যলোভী সেথ। ছবি : সংগৃহীত

বর্বর রাজ্যলোভী সেথ। ছবি : সংগৃহীত

সময় অল্প, তাই জ্ঞান আর মৃত্যুদেবতার সাহায্য নিয়ে ওসাইরিসের দেহখণ্ডগুলো পরপর সাজিয়ে তাতে প্রাণসঞ্চার করলেন দেবী আইসিস। সেথের কাছে সে খবর পৌঁছলেও রানি ও তার অনুগামীদের ডিঙিয়ে ওসাইরিসের কাছে এবার আর পৌঁছতে পারলেন না অন্ধকারের দেবতা সেথ। রাজার দেহে সাময়িকভাবে প্রাণসঞ্চার হলো ঠিকই, কিন্তু উদ্দেশ্য পূরণ হবে কী করে! উদ্দেশ্য আর কিছুই না, ওসাইরিসের ঔরসে মিশরের যোগ্য উত্তরসূরীর জন্ম। কিন্তু ওসাইরিসের দেহের অন্যান্য টুকরোগুলো খুঁজে পাওয়া গেলেও নীলনদের জলে চিরতরে হারিয়ে গেছে তার পুরুষাঙ্গ। পুরুষাঙ্গ ছাড়া মিলন তো সম্ভব নয়। শেষমেশ এরও সমাধান বের করলেন যাদুর দেবী আইসিস। সোনার এক পুরুষাঙ্গ স্থাপিত হলো ওসাইরিসের দেহে৷ এরপর মিলিত হলেন মৃতরাজা ওসাইরিস ও রানি আইসিস। এই মিলনেরই ফল দেবতা হোরাস।

স্ত্রীর শরীরে বীজটুকু রেখে শেষ ঘুমে ঢলে পড়লেন ওসাইরিস। যাতে কোনোভাবেই তার শরীরে পচন না ঘটে,তাই আইসিস আর নেপথিস জ্ঞানের দেবতা থোথ আর মৃত্যুর দেবতা আনুবিস মিলে খুব গোপন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলেন রাজার দেহ। এই প্রথম মিশরের ইতিহাসে কোনো মৃতদেহকে পচন আটকাতে মমি করা হলো। সেই প্রথম মমি আর কেউ নয়, স্বয়ং দেবতা ওসাইরিস। তবে ওসাইরিসের গল্প এখানেই শেষ নয়৷

আইসিস যখন গর্ভবতী হয়, তখন চারদিকে সেথের গুপ্তচর। তাদের হাত থেকে ওসাইরিসের সন্তানকে বাঁচাতেই হবে। তাই নীলনদের তীরে এক প্যাপিরাস বনে নিজেকে লুকোলেন দেবী আইসিস। সেই জঙ্গলেই জন্ম নিলেন আইসিস-পুত্র অমিতক্ষমতাধর হোরাস। মায়ের কড়া নজরদারি আর দেবতাদের পাহারায় বড় হয়ে উঠল হোরাস। কিন্তু সিংহাসনের উত্তরাধিকার পাবে কী করে! আসল রাজার পুত্র সে, ন্যায়ত ধর্মত তার দাবিই আগে।

কিন্তু সেথও ছাড়ার পাত্র নয়। আইনের মারপ্যাঁচে সে আটকে দিতে চাইল হোরাসের অধিকার। মামলা চলল দীর্ঘদিন। শেষে ফয়সালা হলো, দুপক্ষের শক্তির লড়াই হোক। যুদ্ধে যে জিতবে সিংহাসন তার।

 

সেথ আর হোরাসের তুমুল যুদ্ধ। ছবি : সংগৃহীত

সেথ আর হোরাসের তুমুল যুদ্ধ। ছবি : সংগৃহীত

মারামারির প্রতিযোগিতা হলো দুজনের। মানুষ-পশুর রূপ ধরে টক্কর! প্রতিবারই জিতল হোরাস। কিন্তু এত সহজে দাবি ছাড়ার লোক নন অন্ধকারের রাজা সেথ। শুরু হলো তুমুল যুদ্ধ৷ যুদ্ধে হোরাস ছিঁড়ে নিলেন সেথের অন্ডকোষ। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে প্রবল আক্রমণ করলেন সেথও। হোরাসের বাম চোখ উপড়ে ছয় টুকরো করে ফেলল সে৷ সে এক নৃশংস ভয়াবহ যুদ্ধ। যুদ্ধের এক পর্যায়ে হোরাসকে বাগে পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে সেথ। উভকামী সেথের হাত থেকে খুব অল্পের জন্য রক্ষা পায় হোরাস। সেথের বিষাক্ত বীর্য, যা সে হোরাসের শরীরে ঢোকাতে চেয়েছিল, তা হোরাস লুকিয়ে এনে দেয় মা আইসিসকে। সেই বিষ আইসিস মিশিয়ে দেয় সেথের খাবারে৷ নিজের অজান্তে নিজেরই বীর্য পান করে সেথ। শেষমেশ দেবতাদের হস্তক্ষেপে ইতি পড়ে সেই ভয়ানক যুদ্ধে৷

যাদুবিদ্যায় ফিরিয়ে দেওয়া হয় হোরাসের বাম চোখ আর সেতের অণ্ডকোষও। হোরাসের এই নতুন বামচোখটি ছিল অলীক ক্ষমতাসম্পন্ন। প্রাচীন মিশরের লোকজন বিশ্বাস করতেন, হোরাসের এই নবলব্ধ দৈবী চোখের অনেক মহিমা। তা শুধু অন্তর্ভেদীই নয়, এ চোখের দৃষ্টি সর্বরোগহর। আর এই বিশ্বাস থেকেই ক্রমশ জনপ্রিয় হতে থাকে হোরাসের চোখের প্রতীক। সেকালে মিশরের নানান ছবিতে, বইয়ে, স্থাপত্যের গায়ে, পিরামিডের ভিতরের কারুকাজে, নানা মূল্যবান ধাতু ও পাথরের উপর, এমনকি মৃতদেহের গয়নার গায়েও আঁকা থাকত এই ‘আই অফ হোরাস’।

চোখ ফিরে পাওয়ার পর হোরাস সিদ্ধান্ত নিলেন বাবা ওসাইরিসকে পুনর্জীবিত করার। নতুন জীবন দেওয়ার ক্ষমতা ছিল তার স্বর্গীয় চোখের। ছেলের দৈবী ক্ষমতাবলে আবার প্রাণ ফিরে পেলেন ওসাইরিস। কিন্তু জীবিত মানুষের সান্নিধ্যে আর থাকতে রাজি হলেন না তিনি। পৃথিবীর সিংহাসনে ছেলেকে বসিয়ে ফিরে গেলেন পাতালে, সেখানকার অধিপতি হয়ে। শুধু রাজাই নন, নতুন জীবনে ওসাইরিস হলেন পরকালের বিচারক দেবতা।

ওসাইরিস বা ওসিরিসকে নিয়ে সবচেয়ে বিখ্যাত আলোচনাগুলো করেছেন গ্রিক পন্ডিত ডিওডোরাস ও প্লুটার্ক। যদিও তার বহু আগে থেকেই পিরামিড গাত্রে খোদাই করা হয়েছে ওসাইরিসের জীবনকাহিনী। সেইসব পিরামিড স্টোরি থেকেই প্রথম জানা যায় ওসাইরিসের জীবন, হত্যাচক্রান্ত ও পুনরুত্থানের গল্প৷ পুরাণের মতে মিশর ইতিহাসের সবচেয়ে পুরোনো মমিও ওসাইরিস। প্যাপিরাস সল্ট থেকে মৃতদেহ মমি করে পচনরোধের যে বিজ্ঞান, তারও প্রথম হাতেকলমে ব্যবহার হয় ওসাইরিসের উপরই।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন