ঢাকা,  মঙ্গলবার  ১৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

হাড়ের স্তুপ আর মমিতে জড়ানো এক ভুতুড়ে বাড়ি

প্রকাশিত: ২২:২১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

হাড়ের স্তুপ আর মমিতে জড়ানো এক ভুতুড়ে বাড়ি

হাজারো বছরের পুরনো সম্পত্তি কিনে তাতে ঘর বেঁধেছে জন হামফ্রিস নামের এক ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। সেই সম্পত্তির একাধিক বাড়ির মধ্যে একটিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। তবে সম্পত্তি কেনার কয়েক বছরের মধ্যেই গা ছমছমে ব্যাপারস্যাপার ঘটতে শুরু করল।

জনের দাবি, বাড়ির জিনিসপত্র আপনাআপনিই নড়েচড়ে বেড়ায়। রাতবিরেতে শোনা যায় অদ্ভুতুড়ে আওয়াজ। একবার বাড়ির মেঝে খোঁড়াখুঁড়ি করতেই বেরিয়ে আসে হাড়গোড়ের পাহাড়। সঙ্গে বহু প্রাচীন একজোড়া ধারালো ছুরি। পাওয়া যায় দেওয়ালে গাঁথা বেড়ালের মমি।

জনের মেয়ে ক্যারোলাইনের দাবি, ‘এটিই দুনিয়ার সবচেয়ে ভুতুড়ে বাড়ি!

ইংল্যান্ডের গ্লস্টারশায়ারের ছোট্ট শহর ওটন-আন্ডার-এজে ক্যারোলাইনদের পান্থশালা ‘এনসিয়েন্ট র‌্যাম ইন’ ঘিরে ঘটে চলেছে যাবতীয় সব অদ্ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানা। বহু বাসিন্দার দাবি, এটিই ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ভুতুড়ে বাড়ি। এমনকি, দুনিয়ার সবচেয়ে ভুতুড়ে বাড়িগুলো মধ্যে অন্যতম।

 

‘এনসিয়েন্ট র‌্যাম ইন’ থেকে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়। ছবি : সংগৃহীত

‘এনসিয়েন্ট র‌্যাম ইন’ থেকে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়। ছবি : সংগৃহীত

সেই ১৯৬৮ সালে মা-বাবার হাত ধরে পান্থশালায় পা রেখেছিলেন আট বছরের ক্যারোলাইন। এই ষাট বছর বয়সেও এ বাড়ির কাণ্ডকারখানা ঘিরে তার ভয় কাটেনি। এখনও চোখ বুজলেই শিউরে ওঠেন ওই বৃদ্ধা।

ক্যারোলাইন জানিয়েছেন, ১১৪৫ সালে এই স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে তার বহু আগে থেকেই এর গোটা চত্বর জুড়ে বসতি গড়ে উঠেছিল। অনেকের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ বছর বা তারও আগে এখানে দাসেদের রাখা হতো। বসবাস করেছেন খ্রিস্টান সন্ন্যাসীরাও। পান্থশালার অদূরে স্টেন্ট মেরিজ গির্জার নির্মাণের সময় তার কারিগর, রাজমিস্ত্রিরাও এখানে ঠাঁই নিয়েছিলেন।

বিশাল এলাকা জুড়ে থাকা সম্পত্তির গোটাটাই কিনেছিলেন ক্যারোলাইনের বাবা। এই জায়গা জুড়ে গত কয়েক শতকে নানা ভুতুড়ে উপদ্রব ঘটেছে বলে দাবি তাদের। সবকিছুই যেন ইঙ্গিত দেয়, এক সময় এ বাড়িতে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটেছিল!

 

বাড়ির মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়েছে হাড়গোড়। ছবি : সংগৃহীত

বাড়ির মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়েছে হাড়গোড়। ছবি : সংগৃহীত

২০১৭ সালে ক্যারোলাইনের বাবা মারা যান। তিনিই প্রথম এ বাড়িতে কিছু আনাগোনা টের পেয়েছিলেন বলে দাবি পরিবারের। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বাড়ির দেওয়াল সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে সেখানে গাঁথা একটি বেড়ালের মমিও উদ্ধার করেন জন। তা নাকি ৫০০ বছরের পুরনো। দেওয়ালের মধ্যে লেবু দিয়ে রাখা ওই মমি প্রায় অবিকৃত ছিল বলে জানিয়েছেন ক্যারোলাইন। সম্ভবত অশুভ শক্তিকে তাড়াতেই এ ব্যবস্থা বলে দাবি তার।

এখানেই শেষ নয়। একবার বসার ঘরের মেঝে সারাইয়ের সময় টালিপাথর সরানো হচ্ছিল। সে সময় টালি সরাতেই নিচ থেকে বেরিয়ে পড়ে অসংখ্য হাড়গোড়। সঙ্গে এক জোড়া ধারালো ছুরিও উদ্ধার হয়।

বাড়ির মেঝেতে কে বা কারা হাড়গোড় পুঁতে রেখেছে? এসব কাদের হাড়গোড়? আতঙ্কে সিঁটিয়ে থাকলেও অনুসন্ধান করতে শুরু করেন জন। মনে পড়ে, একবার এক জ্যোতিষী তাকে বলেছিলেন, ‘এ জায়গায় শিশুদের কবর দেওয়া হয়েছে।’ কিন্তু কেন?

 

হাড়গোড়ের পাশে পাওয়া জোড়া ছুরি। ছবি : সংগৃহীত

হাড়গোড়ের পাশে পাওয়া জোড়া ছুরি। ছবি : সংগৃহীত

হাড়গোড়ের পাশে রাখা ধারালো জোড়া ছুরি কিসের ইঙ্গিত? প্রশ্নগুলি তাড়িয়ে বেড়ায়ে জনকে। ‘তবে কি এখানে শিশুবলি দেওয়া হত?’ বাবার মতোই প্রশ্ন ছিল ক্যারোলাইনের। তার মতে, জোড়া ছুরি উদ্ধারের ঘটনা শিশুবলির দিকেই ইঙ্গিত করছে।

ছুরি দুটি নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে গিয়েছিলেন জন। ক্যারোলাইন বলেন, ‘প্রত্নতত্ত্ববিদদের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ছুরিগুলোর গায়ে বেশ কয়েকটি তারিখ খোদাই করা রয়েছে। তবে সেই তারিখগুলো কবেকার, তা চিহ্নিত করতে পারেননি তারা। যদিও ছুরিগুলো যে বেশ প্রাচীন, তা নিশ্চিত।’

যদিও ২০১৪ সাল নাগাদ ক্যারোলাইনদের বাড়ি থেকে ওই ছুরি জোড়া চুরি হয়ে যায়। ক্যারোলাইন বলেন, ‘একটি কাচের বাক্সে ওই ছুরি দুটো রাখা ছিল। বাবা বাড়িতে থাকাকালীন পর্যটকদের এ জায়গা ঘুরিয়ে দেখানোর সময় সেগুলো চুরি হয়ে গিয়েছিল।’ তা নিয়ে আক্ষেপ মেটেনি ক্যারোলাইনের। তার কথায়, ‘ছুরিগুলো মূল্যবান তো বটেই। তা ছাড়া ছুরিগুলোর গায়ে খোদাই করা অক্ষরগুলোর মাধ্যমে হয়ত জানা যেত সেগুলো বলির কাজে লাগানো হতো কি না।’

 

বাড়িটিতে পাওয়া যায় শিরদাঁড়া, চোয়াল, ঊরুর অস্থি ও মানুষের খুলিসহ ভুতুরে অনেক কিছু। ছবি : সংগৃহীত

বাড়িটিতে পাওয়া যায় শিরদাঁড়া, চোয়াল, ঊরুর অস্থি ও মানুষের খুলিসহ ভুতুরে অনেক কিছু। ছবি : সংগৃহীত

মেঝের নিচ থেকে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়গুলোও পরীক্ষা করিয়েছিলেন জন। সেগুলো যে পশুর নয়, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তাহলে সেগুলো কাদের হাড়গোড়? রহস্য আজও অধরা!

‘এনসিয়েন্ট র‌্যাম ইন’ থেকে সম্প্রতি আরো হাড়গোড় উদ্ধার হয়েছে। একতলায় একটি ঘরে সিঁড়ির নিচের মেঝে খুঁড়ে অজস্র হাড়গোড় দেখতে পেয়েছেন ক্যারোলাইনের সঙ্গী মিক। হাড়গোড়ের মধ্যে রয়েছে শিরদাঁড়া, চোয়াল, ঊরুর অস্থি এবং একটি মানুষের খুলি। ক্যারোলাইন বলেন, ‘হাড়গোড়গুলো কাদের দেহাংশ তা জানা দরকার। হাড়গোড়ের মধ্যে ওই ছুরি দুটিই বা কেন কবর দেওয়া হলো, সে নিয়েও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’

এলাকার বাসিন্দারা বলেন, কবরখানার উপরে এই পান্থশালা গড়ে উঠেছে। ফলে ভূতসন্ধানীদের কাছে এ জায়গাটি বেশ লোভনীয়। এই পান্থশালায় বহুবার হানা দিয়েছেন আধিভৌতিক জগৎ নিয়ে কৌতূহলীরা। একাধিক টেলিভিশন শোতেও রমরমা বাজার ধরে ফেলেছে ক্যারোলাইনদের পান্থশালা ‘এনসিয়েন্ট র‌্যাম ইন’!

গাজীপুর কথা

    আরো পড়ুন