ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৮ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চামড়া কুঁচকে যায় কেন?

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ১৭ মে ২০২২

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চামড়া কুঁচকে যায় কেন?

জন্মের পর একটি শিশুর ত্বক যেমন নরম কোমল থাকে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু তা পরিবর্তন হতে থাকে। অর্থাৎ ত্বক ধীরে ধীরে তার রূপ বদলাতে থাকে। কোমল ত্বক ধীরে ধীরে শুষ্ক হতে থাকে। এক সময় এই টান টান ত্বক কুচকেও যায়। অর্থাৎ ত্বক আমাদের জানান দেয় যে আমাদের বয়স বেড়েছে।

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চামড়া কুঁচকে যায় কেন? 

আসলে বয়স বাড়লে শরীরের চামড়া পাল্লা দিয়ে পাতলা, শুষ্ক, কম স্থিতিস্থাপক এবং ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা হারাতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের স্বাভাবিক তেল উত্পাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে। বেশি বয়সে ত্বকের গভীরতর স্তরে থাকা ফ্যাট কমতে থাকে এবং চামড়া ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। এর ফলে চামড়া কুঁচকে যায়। মুখে বলিরেখা ফুটে ওঠে। একই কারণে একজন কম বয়সী ছেলে বা মেয়ের চামড়ায় কোনো নির্দিষ্ট স্থানে চাপ দিলে তা যত তাড়াতাড়ি আগের অবস্থায় ফিরে আসে, কোনো বয়স্কা বা বয়স্কার ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না।

এবারে বিষয়টি নিয়ে একটু বিস্তারে আলোচনা করা যাক। মানব শরীরের ত্বক তিনটি স্তরে বিন্যস্ত। এপিডারমিস, ডারমিস এবং সাবকিউটেনাস টিস্যু।

মানব শরীরের ত্বক তিনটি স্তরে বিন্যস্ত।

মানব শরীরের ত্বক তিনটি স্তরে বিন্যস্ত।

এপিডারমিস- একেবারে বাইরের স্তর। কেরাটিন সমৃদ্ধ এই স্তর রুক্ষতা ও জল প্রতিরোধী। এই স্তরেই ত্বকের মৃত কোষগুলোকে দেখা যায়। আর থাকে মেলানিন রঞ্জক, যা আমাদের গায়ের রঙের জন্য দায়ী। এপিডারমিস নিচের স্তরগুলোর জন্য দেয়ালের কাজ করে। শরীরের সুরক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে এই এপিডারমিস-ই।

ডারমিস- এপিডারমিসের নিচের মোটা স্তরের নাম ডারমিস। এই স্তরে নার্ভ, ফ্যাট, রক্তবাহ, ইলাস্টিন ও কোলাজেন ফাইবার থাকে। ডারমিসে ৮০ শতাংশ স্থান জুড়ে থাকে কোলাজেন। আদতে প্রোটিন, কোলাজেন শরীরের কানেকটিভ টিস্যুর প্রাথমিক উপাদান। এরা চামড়ায় দৃঢ়তা আনে। ইলাস্টিনের কাজ চামড়ায় স্থিতিস্থাপকতা আনা। তার ফলে চামড়া টেনে ধরে ছেড়ে দিলে তা আবার আগের জায়গায় ফিরে যায়।

সাবকিউটেনাস টিস্যু- এই স্তর মূলত ফ্যাটে তৈরি। এরা শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং ভেতরের অঙ্গগুলিকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।

এজিং

বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই তিন স্তরের মধ্যে যে গঠনগত পরিবর্তন হয় তার ফলে আমাদের চামড়ায় দৃশ্যত কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। এই পরিবর্তনের পেছনে আছে দুটি ভিন্ন প্রক্রিয়া যা শেষ পর্যন্ত চামড়া ঢিলে করে দিয়ে তাকে কুঁচকে দেয়। এই প্রক্রিয়া দুটি- ইনট্রিনসিক এজিং এবং এক্সট্রিনসিক এজিং।

ইনট্রিনসিক এজিং- একে ক্রোনোলজিক্যাল এজিং-ও বলে। কারণ সারাজীবন ধরেই এই এজিং প্রক্রিয়া চলতে থাকে। আসলে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে সবার শরীরে এই এজিং চলতে থাকলেও বংশগতির ভিত্তিতে এর গতিপ্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন হয়। ২০ বছরের পর থেকে আমাদের শরীর প্রতিবছর ১ শতাংশ করে কম কোলাজেন উত্পন্ন করতে থাকে। কোলাজেন ও ইলাস্টিন যত মোটা ও ঢিলে হতে থাকে, চামড়া তত অস্থিতিস্থাপক ও ভঙ্গুর হয়। এতে বলিরেখা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। চামড়া কুঁচকে যায়। একই সঙ্গে ২০ বছর বয়স থেকে এক্সফলিয়েশন প্রক্রিয়া কমে গিয়ে ত্বকের মৃত কোষ জমতে শুরু করে। ৩০ বছর বয়সের পর থেকে ডারমিস ও এপিডারমিসের মধ্যে আদ্রতা আদানপ্রদানের হার কমতে শুরু করে। এতে ফ্যাট সেল শুকিয়ে যায়।

ত্বক কুঁচকে যাওয়া।

ত্বক কুঁচকে যাওয়া।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক কম পরিমান সেবাম (তেল) উত্পাদন করে। এর ফলে ত্বকের অবয়বে শুষ্কতা প্রকট হয় এবং কোঁচকানো ভাব কিছুটা স্পষ্ট হয়। মোটামুটি ৪০ বছর থেকে কোলাজেন উত্পাদন বন্ধ হয়ে যায়। ৫০ বছরে পৌঁছে গেলে আমাদের ত্বকের নিচে সঞ্চিত ফ্যাট কমতে শুরু করে। তাতে ত্বক পাতলা হয়ে যায়। নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পরে ইস্ট্রোজেনের ঘাটতিও এই কাজে ঘৃতাহুতি দেয়। রক্তবাহের পাশাপাশি রক্তসংবহন কমে যাওয়া এজিং-এর পেছনে খানিকটা ভূমিকা নেয়। তবে এজিং প্রক্রিয়া খুব ধীরে ধীরে ঘটে বলে চট করে পরিবর্তনটা বোঝা যায় না।

এক্সট্রিনসিক এজিং- শরীরের ভেতরে ঘটে যাওয়া এজিং প্রক্রিয়ার পাশাপাশি বাইরের পরিবেশগত ফ্যাক্টরও চামড়ার কোঁচকানোর ক্ষেত্রে কাজ করে। তাদের কয়েকটি নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করছি। বিভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশের সময় মুখের নানা জায়গায় ভাঁজ পড়ে। যেমন, ধরা যাক হাসি। হাসলে আমাদের মুখের যে সব জায়গায় ভাঁজ পড়ে কালক্রমে সেই সব জায়গার চামড়া কুঁচকে যায়। এদেরকে এক্সপ্রেশন লাইন বলে। ধূমপান ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। যখন ধোঁয়া টানা হয়, তখন মুখের কয়েকটি পেশি এই কাজ করতে সাহায্য করে।

স্কিন এজিং।

স্কিন এজিং।

বার বার সিগারেট খেলে ওই জায়গাগুলো এক্সপ্রেশন লাইনের মতো হয়ে যায়। তাছাড়া সিগারেটে থাকা নিকোটিন এপিডারমিসের বাইরের স্তরে থাকা রক্ত কোষগুলোকে সরু করে দেয়। তার ফলে রক্ত সংবহন কম হলে ত্বক পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয় এবং ধীরে ধীরে অকালে ঢিলেঢালা হয়ে যায়। দূষণ থেকেও ত্বকের ক্ষতি হয়। সেখানে থাকা ফ্রি-র‍্যাডিক্যাল ত্বকের রাসায়নিক গঠন ও জৈবিক কার্যকারিতার পরিবর্তন ঘটিয়ে এজিং প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। সূর্যের আলোয় থাকা আলট্রাভায়োলেট রশ্মিও এজিং প্রক্রিয়ার পেছনে বড় ভূমিকা নেয়। একে ফটোএজিং বলে। ৮০ শতাংশ চামড়া এর কারণেই কোঁচকায় বলে মনে করে আমেরিকার ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন।

গাজীপুর কথা