ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ইসলামের সেবায় বঙ্গবন্ধুর অবদান

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ১১ আগস্ট ২০২১

ইসলামের সেবায় বঙ্গবন্ধুর অবদান

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীতে ফিরে এসেছে শোকের মাস আগস্ট। আল্লাহর শুকরিয়া বঙ্গবন্ধুর মতো একজন অসাধারণ নেতা আমরা পেয়েছিলাম। তিনি স্বাধীন সোনার বাংলাদেশের মহান স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ নামে একটি নতুন দেশের নতুন মানচিত্রের অমর রূপকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ইসলাম ধর্মের অনুসারী সহজ-সরল উদার মানবিক চেতনার অধিকারী মনেপ্রাণে একজন খাঁটি মুসলমান। তাঁর পূর্বপুরুষ শেখ আউয়াল ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে হজরত বায়েজিদ বোস্তামি (রহ.)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তাঁর সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন প্রথম। পরে তাঁরই উত্তরপুরুষরা বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন ইসলাম ধর্ম প্রচারক শেখ আউয়ালের সপ্তম বংশধর। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন একজন সুফি চরিত্রের অধিকারী অন্যতম ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসারের অন্যতম একজন ধারক। বঙ্গবন্ধু কখনো ইসলামকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেননি। তিনি ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বেতার ভাষণে বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই, এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য আমরা লেবাসসর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশকে সব ধর্মের সব মানুষের জন্য শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি ছিলেন সদাসচেষ্ট ন্যায়বান রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি তাঁর শাসনামলে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন তা মুসলিম বিশ্বে বিরল।

ইসলাম ধর্ম প্রচার-প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদানসমূহ : ১. বঙ্গবন্ধু ছিলেন ইসলামপ্রিয় আউলিয়াভক্ত। ১৯৭৪ সালে তিনি ইরাকের বাগদাদে বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। ২. ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা : স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার, প্রসার এবং গবেষণার জন্য সরকারিভাবে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি পাচ্ছে। ৩. মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন : ইসলামী আকিদাভিত্তিক জীবন গঠন ও দীনি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুই প্রথম মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে এর নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড’।

৪. টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার স্থান বরাদ্দ : বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম স্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে তুরাগ নদের তীরবর্তী জায়গাটি প্রদান করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ওই স্থানে তাবলিগ জামাত বিশ্ব ইজতেমা পালন করে আসছে। ৫. পবিত্র হজ পালনের জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা : পাকিস্তান আমলে হজযাত্রীদের জন্য কোনো সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা ছিল না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথম হজযাত্রীদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন। ফলে হজ পালনকারীদের আর্থিক সাশ্রয় হয়। ৬. রবিউল আউয়াল মাসে সিরাত মজলিস প্রতিষ্ঠা : বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় সিরাত মজলিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। সিরাত মজলিস ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ধরায় আগমনের মাস রবিউল আউয়ালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিল উদ্যাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন। ৭. বেতার-টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার : বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তাঁরই নির্দেশে সর্বপ্রথম বেতার ও টেলিভিশনে গুরুত্বের সঙ্গে আল কোরআন ও তাফসির এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচারের সুব্যবস্থা করেন। ৮. ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), শবেকদর, শবেবরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা : ধর্মীয় দিবসসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। ৯. মদ-জুয়া নিষিদ্ধকরণ ও শাস্তির বিধান : ইসলাম ধর্মে মদ-জুয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ইসলামের এ বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারিভাবে এ দেশে আইন করে এসব অপকর্ম নিষিদ্ধ এবং শাস্তির বিধানও জারি করেছিলেন। ১০. রাশিয়ায় প্রথম তাবলিগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা। ১১. তিনি রেসকোর্স ময়দানের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা বন্ধ করেন। ১২. আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে আরব বিশ্বের পক্ষে তিনি সমর্থন দেন এবং সাহায্য পাঠান। ১৩. ইসলামবিষয়ক গবেষণার জন্য তিনি বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ১৪. ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু লাহোরে ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) অধিবেশনে যোগদান করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে এ সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়েই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মাঝে বাংলাদেশের স্থান করে দেন।
বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরও অনেক যুগান্তকারী অবদানের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিপথগামী ঘাতকদের নির্মম বুলেটে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালে তিনি সপরিবারে শাহাদাতবরণ করেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন।

লেখক : মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী। 
খতিব, মণিপুর বাইতুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-২, ঢাকা।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন