ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি

কৃষিবিদগণের পক্ষে গবেষণায় যারা জড়িত তাদের তরফ থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম এবং কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মুজিবশতবর্ষের স্মারক হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের উদ্যোগে ১০০টি নতুন কৃষি গবেষণা প্রযুক্তি সংবলিত একটি প্রকাশনা ‘এটলাস’ প্রকাশিত হয়েছে, যা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনলাইনে যুক্ত থেকে বইটির মোড়ক উম্মোচন করেছেন। এটি কৃষি ক্ষেত্রে মুজিববর্ষে কৃষি বিজ্ঞানীদের একটি বড় অর্জন ও দেশের মানুষের জন্য একটি বড় উপহার। এভাবে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের পেশাজীবী, স্বেচ্ছাসেবী, রাজনৈতিক ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রত্যেকে তাদের নিজ সংগঠনের ক্যাপাসিটি মোতাবেক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছে।

এমনি বিশেষ ধরনের কয়েকটি উদ্যোগের বিষয়ে আমরা সাম্প্রতিককালে গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখেছি। তারমধ্যে একটি হলো ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি এলাকায়। যা কি না শীতকালীন সবজি ও ফসলের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় আব্দুল কাদের নামের এক জন বঙ্গবন্ধুর ভক্ত-অনুরক্ত তার নিজের জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন শাকসবজি ও ফসল রোপণ/বপন করে সেখানে বঙ্গবন্ধুর একটি শস্য আবৃত প্রতিকৃতি আঁকার চেষ্টা করা হয়েছে এবং দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাকসবজির চারা বৃদ্ধি পাচ্ছিল আর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে দৃশ্যমান হচ্ছিল। সেখানে লালশাক, মুলা, সরিষা ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের সবজি ফসল ব্যবহার করা হয়েছিল যাতে প্রাকৃতিকভাবেই বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিটি রঙিন হয়ে ফুটে উঠেছে। আসলে হয়েছিলও তাই। সেটি এমন দৃষ্টিনন্দন ছবি ফুটে উঠেছিল তাতে পাখির দৃষ্টিতে ছবি তুলে এর সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন সবাই। পাশাপাশি এমন একটি বিচিত্র ও অন্যরকম সুন্দর শিল্পকর্ম দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকের ভিড় হতে দেখা গেছে যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত।

সেই প্রযুক্তি ও থিমটি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আরো বড় পরিসরে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এবারের কাজটি হলো শস্যচিত্রের মাধ্যমে এমন একটি বিরল কর্মকাণ্ড করা যা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে গিনেজ বুক অব রেকর্ডস-এ স্থান করে নেওয়া। কারণ এর আগে বিশ্বের কোনো নেতা-নেত্রীকে নিয়ে শস্যের মাধ্যমে চিত্রে তুলে ধরার এমন বিরল দৃষ্টান্ত আর নেই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সুজনশীল ও বরেণ্য কৃষিবিদ নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমন একটি বিরল কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। এ চিত্রকর্মটি বগুড়া জেলার একটি এলাকায় বোরো মৌসুমে শুধু ধান ফসলের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ শস্যচিত্রে দেশি, উচ্চফলনশীল, স্থানীয় ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে। সেসব ধানের রং বিভিন্ন রকম হবে। এসব ধান রোপণের পর যতই দিন যাচ্ছে ততই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি নতুন নতুন আকার ধারণ করছে। একেক সময় একেক রকম সুন্দর হয়ে ফুটে উঠছে। সেখানে বিভিন্ন উচ্চতা ও বর্ণের ধানের জাত রোপণ করা হয়েছে। ড্রোন প্রযুক্তিতে বা স্যাটেলাইট এবং হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তুলা ছবিতে চিত্রকর্মটি ক্ষণে ক্ষণে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিনন্দন মাত্রা পাচ্ছে। এটি যখন ধান পাকার সময় হবে, তখন তা চূড়ান্ত আকার ও আকৃতি লাভ করবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এটিকে নষ্ট না করে তবে তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যচিত্র হবে। যা একক ও বিরল হিসেবে গিনেজ বুক অব রেকর্ডস-এ নিশ্চিতভাবে স্থান করে নেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
কৃষিবিদদের জন্য বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় অনেক কিছু করেছিলেন। কৃষিকে গুরুত্ব প্রদানের অংশ হিসেবে তিনি প্রথমে কৃষিবিদদেরকে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করেছিলেন। কৃষিকে তিনি সর্বদাই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। বর্তমানে তার সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো করে চলেছেন। এ করোনাকালেও প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষির ধারাবাহিক উত্পাদন অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। এখন সময় এসেছে এসব ঋণ শোধ করার। সেজন্য কৃষিবিদদের তরফ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যচিত্র অঙ্কন করে বঙ্গবন্ধুর কৃষিপ্রীতির প্রতি কিছুটা সম্মান প্রদর্শনের চেষ্টা করা। আশাকরি তা অবশ্যই সফল হবে।

লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন