ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বাংলাদেশ (২০০১-২০০৬)- সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বী নির্যাতন

প্রকাশিত: ২২:২০, ২০ জুলাই ২০২২

বাংলাদেশ (২০০১-২০০৬)- সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বী নির্যাতন

বাংলাদেশ (২০০১-২০০৬)- সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বী নির্যাতন

তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা নারী ধর্ষণ, সংখ্যালঘুদের জায়গা জমি দখল, হত্যাসহ নানা অপকর্মে মেতে ওঠে। এ সময় জান বাচাঁতে অনেক সংখ্যালঘু দেশ ছেড়ে চলে যায়।

ওই সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের তান্ডবের কিছু তথ্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

পূর্নিমা রানী শীল । বয়স কতোই বা হবে ? অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছে তখন । সবে নির্বাচন হয়েছে । বিএনপি জামাত জোট সরকার জয়ী হয়েছে । চাপ পড়ছে হিন্দু পাড়াগুলোর ওপরে । পূর্নিমা সেই রাতে বাড়িতেই ছিল । সদ্য বিজয়ী স্থানীয় নেতারা হামলা করলো মায়ের সামনেই ধর্ষণ করলো তাকে । এত মানুষ দেখে পূর্নিমার মা বলছিলো "বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট তোমরা একজন একজন করে এসো, আমার মেয়ে মরে যাবে।"

আসলেও তাই, ওতটুকু মেয়ে, ১০-১২ জনের এক দল যদি পালাক্রমে ধর্ষণ করে, তবে মেয়ের বাঁচার আশা নিয়েই শংকা করতে হয় । অসহায় বাবা দেখলো মেয়ের ধর্ষণ, মা আকুতি করলো । ধর্ষিতা পূর্নিমা অবশ্য সে রাতে মরেনি । ধর্ষণের গ্লানি নিয়ে তাকে বেঁচে থাকতে হয়েছে।

সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বী নির্যাতন

ছবি রানীর কথা মনে আছে? তিনি আওয়ামীলীগের কর্মী ছিলেন। বাড়ি বাগেরহাটের রামপালে। ২০০২ সালের ২১ শে অগাস্ট তৎকালীন জোট বাহিনীর ক্যাডার দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন তিনি। তৎকালীন ক্ষমতাসীন ক্যাডাররা ছবি রানীকে বাসস্ট্যন্ড থেকে কাপড় খুলে ফেলে। এরপর তাকে বি এন পি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর একের পর এক ক্যাডার দ্বারা তিনি ধর্ষণের শিকার হতে থাকেন। ধর্ষকরা ধর্ষণ করে ছবি রানীর গোপন অঙ্গে মরিচের গুড়া, বালি আর কাচের গুড়া ঢুকিয়ে দেয়। ছবি রানী যখন ধর্ষিত হচ্ছিল তখন পাশের দোকানে আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা বিড়ি ফুঁকছিল। তার চিৎকারে সাধারন মানুষ তো দূরে থাক, পুলিশ ও সেদিন ফিরেও তাকায়নি ।অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর চলে অবর্ণনীয় নির্যাতন। এ নির্যাতনের অনেক ঘটনা রয়ে গেছে আড়ালে, অনেকে মামলা করেছে। অনেকে সে সাহসও পায়নি। অনেকে আবার লোকলজ্জা ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে ধর্ষণের ঘটনাও গোপন রেখেছে। এ জাতীয় অসংখ্য ঘটনা রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় দুই মাস যাবত চলে আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক, বিশেষে করে সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর অমানুষিক নির্যাতন।
সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বী নির্যাতন

তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের লোকজন, এমনকি সংবাদ মাধ্যমও নির্যাতনের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। বাড়িঘর লুটপাট, জোরপূর্বক চাঁদাবাজি, এমনকি নারী ধর্ষণের অজস্র ঘটনা ঘটে এ সময়। এসবের অধিকাংশই পুলিশের নথিভুক্ত হয়নি। অধিকাংশ ভুক্তভোগীরা ভয়ে কোন অভিযোগ পর্যনত্ম করেনি। প্রায় প্রতিটি ৰেত্রে লোকলজ্জা ও সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে পরিবারের মহিলারা ধর্ষিত হওয়ার পরও আইনের আশ্রয় নেয়নি বা বিষয়গুলো গোপন রেখেছেন। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানলেও বা অনুমান করলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো অনেক ক্ষেত্রেই তা স্বীকার করেনি বা মৌন ছিল। ঘটনার ৯ বছর পর তদন্ত কমিশন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে অজানা অনেক নির্যাতনের কাহিনী তুলে এনেছে। ভুক্তভোগীরা অনেকে ঘটনার কথা স্বীকার করলেও কেউ কেউ লিখিত বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেছে। এমনকি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হবেন বলে অনেকে তাদের নাম-ঠিকানা গোপন রাখতে তদনত্ম কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।অনেকে নির্যাতনের পর এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন; কেউ বা দেশ ত্যাগ করেছেন। এমন অসংখ্য ঘটনার কয়েকটি মাত্র ঘটনা তুলে ধরা হলো। চরফ্যাশনের ওসমানগঞ্জের উত্তর চরফ্যাশন গ্রামের টিকেন্দ্র চন্দ্র দাস ওরফে আইচা রাম দাসের স্ত্রী অমীয় রাণী দাস বাড়িঘর বিক্রি করে ঢাকায় অবস্থান করছে। নির্বাচনের প্রায় এক মাস পর চারদলীয় জোটের কিছু সন্ত্রাসী রাতে তাদের বাড়িতে দরজা প্রবেশ করে। এ সময় দশম শ্রেণী পড়ুয়া তার কন্যা শিল্পীকে সন্ত্রাসীরা তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা শুরম্ন হওয়ার পর শিল্পীর পিতা-মাতা তাকে দাসকান্দি গ্রামে চাচার বাড়ি পাঠায়ে দেয় বলে সন্ত্রাসীরা তাকে সে রাতে পায়নি। তবে সন্ত্রাসীরা তার বাড়িঘর লুটপাট করে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায় এবং মেয়েকে ফিরিয়ে এনে তাদের হাতে তুলে দেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর পরিবারটি দুই মাস বাড়িছাড়া ছিল। পরে ভিটেমাটি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে।

সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বী নির্যাতন

উত্তর চরফ্যাশনের রঞ্জন কুমার দাসের স্ত্রী শোভা রানী দাস তদন্ত কমিশনকে জানায়, নির্বাচনের পরপরই কিছু সন্ত্রাসী তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে নগদ ১৭ হাজার টাকাসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং তাকে মারপিট করে ডান হাত ভেঙ্গে দেয়। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হলেও ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেন তিনি। এ ব্যাপারে তার কোন অভিযোগ নেই এবং অভিযোগ করতে রাজিও নয়। তার কথায় প্রতীয়মান হয় সন্ত্রাসীদের অনেককেই সে চেনে। কিন্তু নাম বলেনি। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবিনাশ কুমার দাসের স্ত্রী সুজলা রানী দাস সম্পর্কে জানা যায়, নির্বাচনের পর সন্ত্রাসী দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার কয়েক মাস পর তারা বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে চলে যায়। বর্তমানে তারা ভারতে অবস্থান করছে। তাদের বাড়ি মোট দুই দফায় আক্রমণ হয়। সন্ত্রাসীরা মহিলার নাকের নাকফুল নিয়ে যায়। প্রতিটি ঘরে ঢুকে তারা তল্লাসি চালায় এবং সোনা-গহনা, হাঁস-মুরগি, গরম্ন-ছাগলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। পরিবারের অনেক সদস্য ভয়ে ধানক্ষেতে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং জোঁকের কামড়ের শিকার হয়। সন্ত্রাসীরা মূলত সন্ধ্যার পর বাড়িঘরে আক্রমণ শুরু করত। এ ঘটনায় পরিবারটি ক্ষোভে, লজ্জায় বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে চলে যায়। আর ফিরে আসেনি।

সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বী নির্যাতন

আত্রাইয়ে পূজামণ্ডপে সন্ত্রাসী হামলা, প্রথম আলো ১৬ জুলাই ২০০১বাকেরগঞ্জে একই পরিবারের ৫ জনকে পুড়ে মারার চেষ্টা, ভোরের কাগজ, ২২ জুলাই ২০০১ঘরে তালা দিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন? বাঁশখালীতে একই পরিবারের চারজন জীবন- দগ্ধভোরের কাগজ, ২২ জুলাই ২০০১স্বরূপকাঠি ও বানারিপাড়ায় সংখ্যালঘু ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে, প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০০১সাতক্ষীরায় দু’রাতে ১০ হিন্দু বাড়িতে ডাকাতি ॥ মালামাল ভাগাভাগি নিয়ে গোলাগুলি, দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৩ জুলাই ২০০১ জকিগঞ্জে অপহৃত সংখ্যালঘু কনে শিউলি অপহরণ ভোরের কাগজ, ২৮ জুলাই ২০০১

সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বী নির্যাতন

নাটোরের গোপালপুরে উত্তেজনা, হিন্দুদের দোকান ভাঙচুর, প্রথম আলো, ২ আগস্ট ২০০১বেগমগঞ্জের পূজামণ্ডপে বিএনপি ক্যাডারদের হামলা : গুলিবিদ্ধ ৪, ভোরের কাগজ, ৪ আগস্টসংখ্যালঘু এক সাংবাদিকের বাড়ি দখল করেছে সন্ত্রাসীরা প্রাণনাশ ও উৎখাতের হুমকি, দৈনিকবাঘায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, প্রথম আলো, ৮ আগস্ট ২০০১চাটমোহরে খ্রিস্টান পল্লীতে যুবক খুন, প্রথম আলো, ৯ আগস্ট ২০০১চাঁদাবাজদের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে কাঠমিস্ত্রি অমূল্য, ভোরের কাগজ, ১১ আগস্টঅষ্টগ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ি দখল, সংবাদ, ১২ আগস্ট

২০০১রাঙ্গুনিয়ার কদমতলী গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে ডাকাতি, সংবাদ, ২৪ আগস্ট

২০০১সন্ত্রাসীদের দাপটে ৪ গ্রামের সংখ্যালঘুরা ভয়ভীতিতে কাটাচ্ছে, সংবাদ, ২৪ আগস্ট

২০০১ ফেনীতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলছে, প্রথম আলো, ২৭ আগস্ট ২০০১সিলেটের খ্রিস্টান মিশনারির ভূ-সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছে কুচক্রী মহল, আজকের কাগজ, ১ সেপ্টেম্বর ২০০১হুমকির মুখে যশোরের সংখ্যালঘু ভোটাররা,  দৈনিক জনকণ্ঠ, ২ সেপ্টেম্বর ২০০১নওগাঁ ভূমিহীন আদিবাসীদের উচ্ছেদে সন্ত্রাসী তাণ্ডব, দৈনিক জনকণ্ঠ, ৩ সেপ্টেম্বর ২০০১

সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বী নির্যাতন

আগৈল ঝাড়া গৌরনদীতে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ, আজকের কাগজ, ১৩ সেপ্টেম্বর
২০০১ নির্বাচনকে সামনে রেখে মিরসরাইয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ, প্রথম আলো, ১৪ সেপ্টেম্বর

২০০১ কচুয়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, সংঘর্ষে আহত ৪৫, দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৬ সেপ্টেম্বর

২০০১ মঠ বাড়িয়ায় ধানের শীষে ভোট না দিলে সংখ্যালঘুদের প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছে ডাকাতরা, আজকের কাগজ,
১৯ সেপ্টেম্বর ২০০১মানিকগঞ্জের গ্রামে কালিমূর্তি ভাংচুর, দৈনিক জনকণ্ঠ, ২০ সেপ্টেম্বর

২০০১ভোটকেন্দ্রে না যেতে সাঈদী সমর্থকদের হুমকি, সংবাদ, ২০ সেপ্টেম্বর

২০০১আতঙ্কে সংখ্যালঘুরা ফেনীতে গুলি করে বাবাকে হত্যা: মেয়েদের ধর্ষণের চেষ্টা,  সংবাদ, ২১ সেপ্টেম্বর ২০০১রাউজানে সাকার অনুগত সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে, প্রথম আলো, ২১ সেপ্টেম্বর ২০০১

আরো পড়ুন