আজ ১০ এপ্রিল, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন সরকার গঠিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে উক্ত সরকার শপথ গ্রহণ করে। যা বর্তমানে‘মুজিবনগর’নামে পরিচিত।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যাযজ্ঞ শুরুর পর ১০ এপ্রিল গঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম সরকার। সে সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) নির্বাচিত করে গঠিত হয়েছিলো এই সরকার। সৈয়দ নজরুল ইসলাম পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন।
নতুন গঠিত সরকারের সামনে দেখা দেয় নানারকম চ্যালেঞ্জ। একদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বিশ্ব জনমত গঠনের মাধ্যমে স্বীকৃতি আদায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা। এই বিষয়গুলো নিয়ে জোর তৎপরতা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ১০ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার পাশাপাশি মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে আরও তিনজনকে নির্বাচিত করা হয়েছিলো। তারা হলেন, খন্দকার মোশতাক আহমদ (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ), এম মনসুর আলী (অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প) এবং এএইচএম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি)। পরদিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাজউদ্দীন আহমদ প্রথম একটি বেতার ভাষণ দেন, যা মুক্তিকামী বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে বিশ্ব জনমত গঠনের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছিলো।
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সেই বার্তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। এরপর তাজউদ্দীন আহমদসহ লাখো লাখো বাঙালি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন। সেখান থেকেই মুজিবনগর সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিলো ভারতের কলকাতার থিয়েটার রোডের এক বাড়িতে, যেটি ছিলো যুদ্ধকালীন সরকারের প্রধান কার্যালয়।
গাজীপুর কথা