ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বঙ্গবন্ধু হত্যায় ঢাকায় প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৩১ আগস্ট ২০২১

বঙ্গবন্ধু হত্যায় ঢাকায় প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ

৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ হলেও ঢাকায় প্রথম প্রকাশ্যে প্রতিবাদ হয় ২০ অক্টোবর। তৎকালীন ছাত্রনেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা সামরিকজান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রতিবাদে নামেন। রংপুরে প্রতিবাদে আমরণ অনশন করে মারা যান তৎকালিন ছাত্রলীগ নেতা জায়েদুল আলম। ভৈরবে কারাবরণ করেন ২২ নেতাকর্মী। সে সময়ের কিছু কথা জানাচ্ছেন মুশফিকা নাজনীন।

যার বজ্রকণ্ঠে জেগেছিল বাঙালি, যার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষ দেখেছিল শৃঙ্খলমুক্তির স্বপ্ন, তাঁর বুলেটবিদ্ধ শরীর স্তদ্ধ করে দিয়েছিল জাতিকে।
৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর দেশে নেমে আসে দু:শাসনের কালো ছায়া। তবে রুদ্ধ থাকেনি বাঙালি।  
সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জাতির পিতা হত্যার প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন ছাত্রনেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নূর-উল-আলম লেনিন, কাজী আকরাম হোসেন, ইসমত কাদির গামা, মমতাজ হোসেনসহ আরও অনেকে। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে সংগ্রামী ছাত্র সমাজের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানান।

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সমস্ত জায়গায় কাফ্যু জারি করা হয়েছে, সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। এই ভীতিজনক পরিস্থিতির ভেতরেও আমরা সংকল্পে অটল ছিলাম যে, আমাদেরকে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। মধুর ক্যান্টিনে জমায়েত হওয়ার আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল। সবাইকে সারপ্রাইজ দিয়ে সেখানে টেবিলের উপরে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করে একটা জটিকা মিছিল কলাভবনের করিডোর দিয়ে বের করা হয়। এই প্রথম ঢাকায় উচ্চকিত হলো সেই স্লোগান ‘মুজিব হত্যার বিচার চাই, এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নিবে’।

রংপুর কারমাইকেল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তখন জায়েদুল ইসলাম। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর জায়েদুল তৎকালীন সেনাবাহিনী আর পুলিশের অত্যাচারে পালিয়ে ঠাকুরগাঁয়ের টিক্কাপাড়ায় বাসা ভাড়া নেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে আমরণ অনশন করে মারা যান তিনি। 
বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। পুলিশ ও আর্মি বাড়ি বাড়ি রেড করতো, মনসুর আহমেদকে তো অ্যারেস্ট করলো। এরপর উনি ঠাকুরগাঁওয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। তারপর সেখানে অনশন করলেন, অনশন করতে করতে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।

আওয়ামী লীগ নেতা জায়েদুল ইসলামের মেয়ে অ্যাডভোকেট চৈতি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পরে আমাদের পরিবারকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছে, দরকার হলে শেখ হাসিনার জন্য আমি জীবন দিব।
রংপুরে সে সময়ের আরেক যোদ্ধা অ্যাডভোকেট ইলিয়াছ আহাম্মেদ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারাবরণ করেন তিনি। 

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ১৯৭৬ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর প্রথম শাহদতবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার হন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ২২ নেতাকর্মী। কেউ এক বছর, কেউ ৬ মাস, কেউবা ৩ মাস পর কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ কারাগার থেকে মুক্তি পান। ২২ জন সাহসী যোদ্ধার মধ্যে এখন বেঁচে আছেন ১৭ জন। স্মৃতিচারণে তারা বলেন ইতিহাসের অংশ হতে পেরে তারা গর্বিত।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন বলেন, আমরা সেখানে প্রায় ২০-২৫ জনের মতো ছিলাম। আমরা মিলে আরম্ভ করলাম এ সময়ে পুলিশ এসে পুরো অফিস ঘেরাও করে ফেললো।
সেদিনের নেতৃত্বদানকারী নেতা এডভোকেট ফখরুল আল আক্কাস বলেন, আমাকেসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল।
ঘাতকরা চেয়েছিলো চিরতরে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে। কিন্তু বাংলার মাটি আর বাঙালির মননে বঙ্গবন্ধু চিরভাস্বর।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন