ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : ইতিহাস-ঐতিহ্যের সলিমুল্লাহ হল

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২ জুলাই ২০২১

শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : ইতিহাস-ঐতিহ্যের সলিমুল্লাহ হল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরুতেই ছিল তিনটি আবাসিক হল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পড়তে আসা ছাত্রদের থাকার জন্যই হলগুলো তৈরি করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী হচ্ছে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক আগে এটির উদ্বোধন করা হয়।
নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুরের নামানুসারে এটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি ১৯১৩ সালের ১১ আগস্ট উদ্বোধন করা হয়। ঢাবির আবাসিক হলগুলোর মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ঐতিহ্যের কারণে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। বিখ্যাত এই হলের ইতিহাস নিয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ 'সলিমুল্লাহ মুসলিম হল' নামে একটি বই লিখেছেন।

১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। তখন এখানে ছিল তিনটি হল- ঢাকা হল, জগন্নাথ হল ও মুসলিম হল। পরবর্তী সময়ে ঢাকা হলের নাম হয় শহীদুল্লাহ্‌ হল এবং মুসলিম হলের নাম রাখা হয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম হল। হলের প্রথম প্রভোস্ট ছিলেন স্যার এ এফ রহমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলটি মূলত সচিবালয় হাউসের প্রথম তলায় ছিল। নিচতলার বৃহত্তম কক্ষটি ডাইনিং রুম, রান্নাঘর, সাধারণ ঘর, গ্রন্থাগার এবং অন্যান্য কক্ষে বিভক্ত ছিল। প্রথম বছরেই মুসলিম হলে মোট ১৭৮ জন আবাসিক এবং ৭৫ জন সংযুক্ত শিক্ষার্থী ছিল। সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ ফজলুর রহমান সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ পান। দু'জন গৃহশিক্ষকও ছিলেন। তাদের একজন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ এবং অন্যজন ফখরুদ্দিন আহমেদ।

এ হলে ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি অতিরিক্ত কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নিয়মিতভাবে এ হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাউস টিউটর এ এফ রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে, মুসলিম শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য একটি পৃথক হল তৈরি করা উচিত বলে ইচ্ছা পোষণ করেছে। এটি করা হলে সম্প্রদায়টি কৃতজ্ঞ হবে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি নতুন হল তৈরি করতে সম্মত হয়। ১৯২৭ সালে বেঙ্গল সরকার এই হলের জন্য তহবিল সরবরাহ করে। ১৯৩১-৩২ সালে নতুন নকশায় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল নির্মাণ সম্পন্ন হয়।

ঢাবির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, এ হলের মোট কক্ষের সংখ্যা ১৮০টি। এর মধ্যে ১৫২টি কক্ষ ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ। হলের ভেতর একটি মনোরম বাগান রয়েছে। ছাত্রদের লেখাপড়া, আত্মিক উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিতে এখানে মসজিদ, ডিবেটিং ক্লাব, লাইব্রেরি, রিডিং রুম, ড্রামা ও মিউজিক ক্লাব রয়েছে। হলের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৯১ জন। এর মধ্যে আবাসিক ৪০২ জন, দ্বৈতাবাসিক ৩৪২ জন এবং অনাবাসিক ১১৪৭ জন।

গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ তার বইয়ে ঐতিহ্যবাহী সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রথম যুগের ইতিহাস বিশদভাবে তুলে ধরেছেন। এই হল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী। এই হলের অনেক ছাত্র সে সময় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। দেশের সমাজ- সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা অনেকে এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন