ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

অ্যামাইলয়েডোসিস রোগে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যু: কেন হয় এই রোগ?

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

অ্যামাইলয়েডোসিস রোগে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যু: কেন হয় এই রোগ?

অ্যামাইলয়েডোসিস রোগে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যু

দীর্ঘ দিন ধরে ‘অ্যামাইলয়েডোসিস’ নামক বিরল একটি রোগে ভুগছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। রোববার (৫ জানুয়ারি) দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

তাঁর মৃত্যুর পর বিরল এই রোগটি আলোচনায় চলে এসেছে। কেন হয় অ্যামাইলয়েডোসিস, কী এই রোগ? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

অ্যামাইলয়েডোসিস রোগের কারণ হলো অ্যামাইলয়েড নামে একধরনের প্রোটিন। এই প্রোটিন অস্বাভাবিক মাত্রায় শরীরের অঙ্গগুলোতে জমা হতে থাকে। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কিডনি, হার্ট, লিভার, প্লীহা, স্নায়ুতন্ত্রের পাশাপাশি পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি করে এই প্রোটিন। 

সাধারণত এই প্রোটিন শরীরে পাওয়া যায় না, তবে এটি অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন থেকে তৈরি হতে পারে। শরীরে এই প্রোটিন জমার মাত্রা বেড়ে গেলে প্রভাবিত অঙ্গগুলো কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে। শরীর দুর্বল হতে শুরু করে।

বিরল এই রোগের কোনো প্রতিকার নেই। কেমোথেরাপি কিংবা স্টেম সেল থেরাপি, ক্যানসার চিকিৎসার ব্যবহৃত শক্তিশালী ওষুধ কিংবা অন্যান্য ধরনের ওষুধ রোগীর শরীরে এই প্রোটিনের উৎপাদন কমাতে পারে এবং উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনও পর্যন্ত অ্যামাইলয়েডোসিসের কোনো ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি।

লক্ষণ

অনেক ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত লক্ষণ বোঝা যায় না। অ্যামাইলয়েডোসিসের লক্ষণগুলো প্রায়শই সূক্ষ্ম হয়। অ্যামাইলয়েড প্রোটিন শরীরের কোথায় জমা হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।

অ্যামাইলয়েডোসিসের সাধারণ লক্ষণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। তবে মনে রাখতে হবে যে, এসব লক্ষণ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও হতে পারে। কেবলমাত্র আপনার চিকিৎসকই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অ্যামাইলয়েডোসিস নির্ণয় করতে পারেন।

* পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া।

* গুরুতর দুর্বলতা এবং ক্লান্তি।

* শ্বাসকষ্টের কারণে বিছানায় শুতে সমস্যা।

* ন্যূনতম পরিশ্রমের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট।

* হাতে বা পায়ে, বিশেষ করে কব্জিতে অসাড়তা বা ব্যথা।

* জিহ্বা বড় হওয়া।

* অনিচ্ছাকৃতভাবে ৪-৫ কেজি বেশি ওজন হ্রাস।

* ডায়রিয়া বা মলের সঙ্গে রক্তপাত।

* অনিয়মিত হৃদস্পন্দন।

* খাবার গিলতে অসুবিধা।

* ত্বকে সংক্রমণ, ঘা-পুঁজ হওয়া।

অ্যামাইলয়েডোসিস সম্পর্কিত যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে এবং উপসর্গে প্রায়ই ভুগলে, চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যামাইলয়েডোসিসের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। কিছু কিছু অ্যামাইলয়েডোসিস জটিল কোনো রোগ থেকে শরীরে থাবা বসাতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা হলে অ্যামাইলয়েডোসিস ধীরে ধীরে সেরে যেতে পারে। আবার কোনো কোনো ধরনের অ্যামাইলয়েডোসিস প্রাণঘাতী। অনেক সময় জিন মিউটেশনের কারণে হতে পারে এই রোগ। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর কারণ অজ্ঞাত। শরীরের অঙ্গ বিকল করতে করতে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের ৭০ শতাংশই পুরুষ।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে অ্যামাইলয়েডোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মাল্টিপল মায়লোমা ক্যানসার রোগীদের প্রায় ১৫ শতাংশের অ্যামাইলয়েডোসিস রোগের ঝুঁকি থাকে। আবার যারা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ডায়ালাইসিস করছেন বা কিডনি রোগে ভুগছেন তাদেরও হতে পারে এই রোগ।

তথ্যসূত্র: ওয়েব এমডি