ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বয়ঃসন্ধি দেরিতে হয় কেন, চিকিৎসা

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ২৮ এপ্রিল ২০২২

বয়ঃসন্ধি দেরিতে হয় কেন, চিকিৎসা

বয়ঃসন্ধি প্রত্যেকের জীবনে স্বাভাবিক বাস্তবতা।  সাধারণত মেয়েদের বয়স ১৩ বছর হলে আর ছেলেদের ১৪ হলে বয়ঃসন্ধির লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।  তবে কারো কারো দেরি করে বয়ঃসন্ধি হয়। 

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম। 

কোনো বালকের যদি ১৪ বছর বয়সেও অণ্ডকোষের আয়তন ৪ মিলিমিটারের বেশি না হয়, অথবা অণ্ডকোষের অনুপস্থিতি থাকে; কোনো বালিকার ১৩ বছর বয়সেও যদি স্তন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত না হয় এবং উভয়ের ক্ষেত্রে বয়োঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন অনুপস্থিত থাকে, তাহলে বালকের ক্ষেত্রে ১৪ বছরের পর এবং বালিকার ক্ষেত্রে ১৩ বছর পর বিলম্বিত বয়োঃসন্ধি বলা হবে।  এ সময়ের মধ্যেই ৯৫ শতাংশ বালক-বালিকার যৌবন প্রাপ্তিসম্পন্ন হয়।

প্রাইমারি হায়পারগোনাডোট্রপিক হায়পোগোনাডিজম : অণ্ডকোষ বা ডিম্বাশয়ের সমস্যা এর মূল কারণ।

এ ক্ষেত্রে গোনাড (অণ্ডকোষ বা ডিম্বাশয়) প্রয়োজনীয় যৌন হরমোন তৈরিতে ব্যর্থ হয়। এর পেছনে ক্রমোজোমাল ত্রুটি (টার্নারসিনড্রোম, ক্লিনেফিল্টারসিনড্রোম ইত্যাদি) এর হাত থাকতে পারে। আবার টেস্টোস্টেরন হরমোনের ত্রুটিও থাকতে পারে। 

খুব কম করে হলেও, কিছু কিছু বালক-বালিকার গোনাড় ঠিকমতো এ ক্ষেত্রে তৈরিই হয় না। আবার শৈশবে কোনো বালক যদি অণ্ডকোষে বড় ধরনের কোনো আঘাত পায় বা অণ্ডকোষটি ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে তাহলেও যৌবনপ্রাপ্তি প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। শৈশবে ছেলেদের অণ্ডকোষের প্রদাহ বা মেয়েদের ডিম্বাশয়ের প্রদাহ যৌবনপ্রাপ্তিতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ক্যান্সার ক্যামোথ্যারাপি বা রেডিও থ্যারাপি অনুরূপ সমস্যা তৈরি করতে পারে। থ্যালাসেমিয়া বা অন্য কোনো কারণে যাদের ঘনঘন রক্ত নিতে হয়, তাদের গোনার্ডে অতিরিক্ত আয়রন জমে কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। এরপরও কিছু কিছু কারণ অজানা থেকে যায়।

হায়পোগোনাডোট্রপিক হায়পোগোনাডিজম : হায়পোথ্যালামাস বা পিটুইটারিতে প্রধান সমস্যাটি থাকে।

সাময়িক বা কিছু মাস বা বছরের জন্য এ ঘটনা বিরাজ করতে পারে। এর মধ্যে পারিবারিক বা বংশধারা একটি প্রভাব প্রকটভাবে বিরাজ করতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে অপুষ্টিজনিত দৈহিক বৃদ্ধিহীনতাও এর একটি কারণ হতে পারে। তাছাড়া বাড়ন্ত বয়সে অসংক্রামক রোগ ও দীর্ঘ স্থায়ী সংক্রামক রোগের কারণেও এরকম সমস্যা হতে পারে। শৈশবকালে মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক শ্রম বা ব্যয়াম করলে বিলম্বিত বয়োঃসন্ধি হতে পারে।

আবার এ সমস্যাটি স্থায়ীও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রজনন হরমোনের ঘাটতি প্রধান কারণ। কলমেনসিনড্রোম, প্র্যাডারউইলিসিনড্রোম, প্যানহায়পোপিটুইটারিজম ইত্যাদি। আবার কুসিংসিনড্রোমও কারও কারও থাকতে পারে।

বিলম্বিত বয়োঃসন্ধিকালে বালক-বালিকারা প্রধানত তাদের বাবা-মার সঙ্গে হরমোন বিশেষজ্ঞ বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে হাজির হন। অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের যৌবনপ্রাপ্তি না হওয়ায় দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হন এবং চিকিৎসককে তা জানান। এ ছেলেমেয়েদের অধিকাংশেরই দৈহিক উচ্চতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে অনেক কম থাকে। রোগী নিজে বা অভিভাবকরা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সমস্যা উপস্থাপন নাও করতে পারেন; বিশেষ করে ছেলেদের ক্ষেত্রে। মেয়েদের ক্ষেত্রে শারীরিক অন্যান্য পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঋতুস্রাব শুরু না হওয়া টান জরে পড়তে পারে। বালক-বালিকা উভয়ের ক্ষেত্রে বয়োঃসন্ধিকালে প্রবেশে সব পরিবর্তন অনুপস্থিত থাকে। ছেলেদের দাড়ি-গোঁফগজায় না, দৈহিক গঠনের পুরুষালি ভাব হয় না, লিঙ্গের আকার ছোট থাকে, লোম ও ঘামের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনও অনুপস্থিত থাকে। অণ্ডকোষ মাপলে ৪ মিলিমিটারের কম পাওয়া যায়। বালিকাদের ক্ষেত্রেও স্তনের বৃদ্ধি হয় না, দেহের নারীসুলভ অন্যান্য পরিবর্তন অনুপস্থিত থাকে, যেমন- নিতম্বের আকার পরিবর্তন, কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন ইত্যাদি। উভয় ক্ষেত্রেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের ঘাটতি থাকবে।

চিকিৎসা

রোগ শনাক্ত করে, সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। পারিবারিক ধীরগতির বৃদ্ধি সম্বলিত ছেলেমেয়েদের একটু পরে হলেও বয়োঃসন্ধিকাল অতিক্রম করার বা যৌবনপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। দীর্ঘ স্থায়ী রোগ যাদের আছে, তাদের ক্ষেত্রেও যথাপোযুক্ত চিকিৎসায় যৌবনপ্রাপ্তির সহায়ক হবে। কিন্তু ক্রমোজোমাল ত্রুটি থাকলে, সে ক্ষেত্রে ফলাফল খুব আশা ব্যঞ্জক হবে না। তাদের জন্য সাপোর্টিভ বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা নিতে হবে।

গাজীপুর কথা