
সংগৃহীত ছবি
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে পর্যাপ্তসংখ্যক টয়লেট বা শৌচাগার নেই। যেগুলো আছে, সেগুলো অস্বাস্থ্যকর। এতে রোগী ও তাদের স্বজনদের, বিশেষ করে নারীদের এসব টয়লেট ব্যবহারে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা দেশে অস্বাস্থ্যকর টয়লেটের কারণে দেশের দুই কোটি শিশু টাইফয়েড, জন্ডিস, কলেরা বা ডায়রিয়ার মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
পুরুষরা নোংরা টয়লেট কোনোমতে ব্যবহার করতে পারলেও বিপাকে পড়ে নারী ও শিশুরা। তাঁরা বলছেন, অপর্যাপ্ত টয়লেটের কারণে প্রস্রাব চেপে রাখায় মূত্রনালিতে সংক্রমণ ঘটছে। এ ছাড়া প্রস্রাব থেকে বিষাক্ত পদার্থ কিডনিতে পৌঁছে পাথর তৈরি করছে। শহরে নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যে ইদানীং এই রোগে আক্রান্তের হার বাড়ছে।
আবার পিরিয়ডকালীন প্রয়োজনে টয়লেট ব্যবহার না করলে মূত্রথলির পাশাপাশি জরায়ুতে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
ঢাকার শিশু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী আসে চিকিৎসা নিতে। জরুরি ও বহির্বিভাগে আসা এসব রোগী ও স্বজনের জন্য জরুরি টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই বিপাকে পড়তে হয় তাদের। জরুরি প্রয়োজনে পুরুষরা পাশের মসজিদের টয়লেট ব্যবহার করলেও নারীদের যেতে হয় বিভিন্ন ওয়ার্ডে।
একই চিত্র দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। জরুরি প্রয়োজনে রোগী ও স্বজনদের যেতে হয় বিভিন্ন ওয়ার্ডে। হাসপাতালের তথ্য মতে, এখানে জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজারের বেশি রোগী আসে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিত্রও একই।
দুটি টয়লেটের একটি তালাবন্ধ। এটি হাসপাতালের কর্মীরা ব্যবহার করেন। অন্যটি ভয়ানক দুর্গন্ধের কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী। এর পরও বিপদে পড়ে মানুষ যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব টয়লেট দিবস। শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘দ্রুত পরিবর্তন’।
ঢাকার প্রধান তিনটি হাসপাতাল ছাড়াও গত এক সপ্তাহে কালের কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে আরো সাতটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পরিদর্শন করে একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। এসব হাসপাতালের সব কটির জরুরি বিভাগে টয়লেটের রয়েছে। তবে ব্যবহার উপযোগী টয়লেট মাত্র ১৮টি। মাত্র দুটি হাসপাতালে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
এসব হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, প্রতি এক ঘণ্টায় পরিষ্কার করার প্রয়োজন হলেও লোকবলের অভাবে টয়লেট পরিষ্কার করা হয় দিনে একবার। বেশির ভাগ সময় এটিও সম্ভব হয় না।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে সন্তানের চিকিৎসার জন্য ধামরাই থেকে আসা সুরাইয়া বেগম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সেই সকালে এখানে এসেছি। এখন দুপুর। মেয়ে মানুষের বাথরুমের দরকার হয় না? একটা বাথরুমও নেই। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে এক ঘণ্টার বেশি অপেক্ষার পর সিরিয়াল পেয়েছি। ছেলের চিকিৎসা করাতে এসে এখন নিজেই অসুস্থ হওয়ার জোগাড়।’
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘‘আমাদের এখানে টয়লেট ছিল। এগুলো ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। এতে বেশ কিছুদিন সময় লাগতে পারে। এখন আপাতত ‘সি’ ব্লক ও মসজিদের টয়লেট দিয়ে চলছে। খুব শিগগির সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীরা আসে চিকিৎসার জন্য। এখানে রোগী অনুপাতে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা জরুরি। যদি সেটা না থাকে তাহলে চিকিৎসা করাতে এসে মানুষ রোগ নিয়ে বাড়ি যাবে।’
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালগুলোতে টয়লেট যা আছে, সেটি নারীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী না। পুরুষরা এখানে-সেখানে প্রাকৃতিক কাজ সারতে পারে, নারীরা পারে না। দেখা যায়, টয়লেটের সুবিধা না থাকায় তারা পানি খায় না। কিংবা অনেক সময় ধরে প্রস্রাব আটকে রাখে। এতে কিডনির সমস্যা হচ্ছে। মূত্রথলির পাশাপাশি জরায়ুর ইনফেশন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।’