ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

নারীদের যে রোগ মারাত্মক বিপদজনক

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৯ জুলাই ২০২১

নারীদের যে রোগ মারাত্মক বিপদজনক

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে রুটিন-মাফিক, পরিমিত খাদ্যাভ্যাস। বয়সের সাথে সাথে বিভিন্ন হরমোন-জনিত কারণে মেয়েদের একটু মোটা হয়ে যাবার ধাঁচ থাকে। পরবর্তীতে শরীর ভারী হয়ে যাবার জন্য নানাবিধ শারীরিক জটিলতা দেখা যায়। আর এই শরীর ভারী হয়ে যাবার দুশ্চিন্তা সঠিক খাদ্যাভ্যাস থাকলে সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যায়।
 
দায়িত্বের চাপে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে অতিরিক্ত টেনশন। যা প্রভাব ঘুমে। কিন্তু পর্যাপ্ত ও শান্তির ঘুম না হলে মানসিক প্রশান্তি আসবে না। শুধু পর্যাপ্ত ঘুম নয়, প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রামেরও। আর যখন এগুলোর অভাব হবে তখনই শরীরে তৈরি হবে নানা অসুখ।

নারীদের অসুস্থতার জন্য কিছু রোগ দায়ী যা সম্পর্কে আগে থেকে অনেকে অবহেলা করেন। এই রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম মানে হলো ডিম্বাশয়ের রোগ। এই রোগে ওভারিতে সিস্ট তৈরি হয়। এই রোগে মধ্যবয়সীরা নারীরা বেশি আক্রান্ত হন। অনেক বিবাহিত ও অবিবাহিত তরুণীর ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগ হলে অবহেলা ও কালক্ষেপণ করা যাবে না।
 
এই রোগে আক্রান্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী (পেশায় ইঞ্জিনিয়ার) বলেছেন, তিনি ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞদের দিখিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা তাকে জানান, এই রোগ খুবই বিপজ্জনক। তবে চিকিৎসা করালে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। কারো কারো এটি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। নারীদের রিপ্রোডাকটিভ এইজ বা প্রজননক্ষম বয়সে রোগটি হয় ৷ সাধারণত ১৫-৪৫ বছর বয়সে রোগটি বেশি হয়।

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে।  যেমন-

১. অনিয়মিত মাসিক 
২. অতিরিক্ত রক্তস্রাব 
৩. মুখে ও শরীরে অত্যধিক লোম (পুরুষালি) 
৪. ব্রণ মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে। 

আরও কিছু শারীরিক সমস্যা এর সঙ্গে যোগ হতে পারে- তলপেটে ব্যথা, মকমলেরমতো কালো ত্বক (ঘাড়, বগল ইত্যাদি জায়গায়),  বেশি ওজন, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, অতি উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা, বন্ধ্যাত্ব।

এ রোগীদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এদের অনেকেই দৈহিক স্থূলতায় আক্রান্ত হন, নাকডাকা ও ঘুমের সময় হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হওয়া, হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম একটি জীনগত ত্রুটি ও পরিবেশগত ত্রুটির সমন্বিত ফল। জীনগত ত্রুটি আছে এমন কিশোরীর দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, খুব কম শারীরিক শ্রম সম্পাদন করা ও ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ করা ইত্যাদি এ রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
 
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম নাম হওয়ার প্রধান কারণটি হলো, এ রোগিনীদের ডিম্বাশয়ে বিভিন্ন বয়সি, বিভিন্ন আকারের, বিভিন্ন সংখ্যার সিস্ট থাকতে পারে। কিন্তু এটি পরিষ্কারভাবে একটি হরমোনজনিত সমস্যা। অধিকাংশ রোগীর দেহে ইনস্যুলিন রেজিস্ট্রেন্স থাকে এবং তারা স্থূলকায়া হয়।

লক্ষণ

অনিয়মিত মাসিক  
বেশিরভাগ মেয়েদের ৪০ বা ৪৫ বা ৫০ দিন বা কারও কারও ক্ষেত্রে আরও বেশি দিন পর ঋতুস্রাব হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অল্প মাত্রায় ঋতুস্রাব হতে পারে, কারও কারও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হয়।  মাসের পর মাস ঋতুস্রাব বন্ধ থাকাও অস্বাভাবিক নয়। বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতেই এ সমস্যা শুরু হতে পারে, প্রজননক্ষম সময়ে অন্য যেকোনো সময়েও এ সমস্যা শুরু হতে পারে।

বন্ধ্যত্ব  
যতজন নারী সন্তান নিতে ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের একটা বড় অংশই পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের কারণে হয়।  এ বন্ধ্যত্বের কারণ হলো- ঋতুচক্রের অনেকগুলোতেই ডিম্বাণুর অনুপস্থিতি।

পুরুষালি হরমোনের আধিক্য 
পুরুষালি হরমোনের অধিক মাত্রায় উপস্থিতিও এর বহিঃপ্রকাশ।  এর ফল স্বরূপ নারী দেহে পুরুষদের মতো লোম দেখা দিতে পারে (হার্সোটিজম), মুখে বা শরীরের অন্যান্য জায়গায় ব্রণ হওয়া, পুরুষালি টাক ইত্যাদি। প্রতি চারজন পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের নারীর তিনজনের দেহে এ লক্ষণগুলো থাকে।
 
মেটাবলিক সিন্ড্রোম  
এতে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত নারীর দেহে ইনস্যুলিন রেজিস্ট্রেন্সের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে- ক্রমশ দৈহিক ওজন বৃদ্ধি হওয়া, ক্ষুধা বৃদ্ধি পাওয়া, দুর্বলতা, স্মৃতিশক্তি দুর্বলতা, ঘাড়ের পিছনে বা বগলে নরম কালো ত্বকের উপস্থিতি, রক্তের গ্লুকোজ কিছুটা বেড়ে যাওয়া, কলেস্টেরল অস্বাভাবিক থাকা ইত্যাদি।

এই রোগের কারণে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে

উচ্চ-রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ-মাত্রায় কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, endometrial carcinoma: (এক রকম জরায়ু ক্যান্সার), হার্ট এ্যাটাক, স্লিপ এপ্নিয়া: (ঘুমের ভিতর নিশ্বাস আটকে যাওয়া), ব্রেস্ট ক্যান্সার: (স্তন ক্যান্সার), অতি উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা।

রোগ শনাক্তকরণ

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম শনাক্ত করতে সচরাচর নিম্নলিখিত ক্রাইটেরিয়ার যে কোনো দুটির উপস্থিতি আবশ্যক-

>> নারীদেহে অতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন উপস্থিতির প্রমাণ।

>> অনিয়মিত ঋতুস্রাব।

>> ডিম্বাশয়ে সিস্ট।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

>> সিরাম টেস্টোস্টেরন, এলএইচ, এফএসএইচ।

>> পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম।

>> ওজিটিটি। 

জীবন-যাত্রা ব্যবস্থাপনা 

চিকিৎসার শুরুতেই খাদ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। খাদ্য ব্যবস্থাপনা রোগিনীর দৈহিক ওজন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাতে সাহায্য করবে, বিপাকীয় প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটাবে যাতে করে ইনস্যুলিন রেজিস্ট্রেন্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।  আদর্শ জীবন-যাপন ব্যবস্থাপনা রোগিনীর হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাবে। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের খাদ্য তালিকায় শর্করার আধিক্য কম থাকবে, শকসবজি (আলু বাদে), রঙিন ফলমূল ও আমিষজাতীয় খাদ্য প্রাধান্য পাবে।  দৈহিক ওজন বডি এমআই বিবেচনায় রেখে শারীরিক শ্রমের ব্যবস্থা করতে হবে।

আপনি যদি পলিসিস্টিক ওভারির রোগী হন, তবে গর্ভধারণকালীন সময়ে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ৷ নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন এবং চেকআপ করাবেন ৷

চিকিৎসা

>> নারীদের জন্ম নিয়ন্ত্রের জন্য ব্যবহৃত পিলগুলো যাতে স্বল্প মাত্রায় ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্ট্রে

গাজীপুর কথা