ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

যমজ শিশু কেন জন্ম হয়? ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৬ জুলাই ২০২১

যমজ শিশু কেন জন্ম হয়? ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন

গবেষণায় দেখা গেছে, যমজ শিশুর জন্মহার আগের তুলনায় বেড়েছে। সম্প্রতি ঢাকার একটি হাসপাতালে একই সাথে চার সন্তান প্রসব করেছেন এক নারী। তাদের মা বর্তমানে সুস্থ থাকলেও গুরুতর অবস্থায় ওই চার শিশুকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

সাত মাস গর্ভে থাকার পর শিশুগুলো ভূমিষ্ঠ হওয়ায় তাদেরকে প্রি-ম্যাচিওর বেবিদের যেভাবে রাখা হয় সেভাবে রাখা হয়েছে। নয় মাস বয়স পর্যন্ত তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখার দরকার হবে। কারণ তাদের যেকোন ধরণের ইনফেকশন বা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা।

গত মার্চে যুক্তরাজ্যের একটি সায়েন্টিফিক জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। হিউম্যান রিপ্রোডাকশনের গবেষণায় বলা হয়, প্রতিবছর বিশ্বে ১৬ লাখ যমজ শিশু জন্ম নেয়। তার মানে হচ্ছে প্রতি ৪২টি শিশুর মধ্যে একজন যমজ। ১৬৫টি দেশের ২০১০ থেকে ২০১৫ সালে যমজ সন্তান প্রসবের তথ্য সংগ্রহ করে তা ১৯৮০-১৯৮৫ সালের তথ্যের সাথে তুলনা করা হয় ওই গবেষণায়।

১৯৮০ সালের পর থেকে পরবর্তী ৩০ বছরে যমজ শিশু জন্মদানের ঘটনা তিন গুণ বেড়েছে। বিলম্বে গর্ভধারণ এবং চিকিৎসা প্রযুক্তি যেমন আইভিএফ-এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়াকেই এর কারণ হিসেবে দেখছেন গবেষকরা।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি হাজারে ১২টি যমজ শিশু প্রসবের ঘটনা ঘটে। এর আগে এই সংখ্যা ছিল ৯টি। তবে হার বৃদ্ধির এই ঘটনা ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা অঞ্চলেই বেশি। তবে, এশিয়া এবং আফ্রিকা অঞ্চলে এর আগে থেকেই যমজ শিশুর জন্মদানের ঘটনা বেশি ছিল। বিশ্বে যত যমজ শিশু জন্ম নেয় তার ৮০ ভাগই আফ্রিকা এবং এশিয়া অঞ্চলে হয়।

এশিয়া অঞ্চলে যমজ শিশু জন্মের হার আগের তুলনায় বেড়ে ৩২ শতাংশে এবং উত্তর আমেরিকায় এই হার বেড়ে ৭১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

যেসব কারণে যমজ শিশুর জন্ম
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অধ্যাপক কিশোয়ার সুলতানা বলেন, সাধারণত একজন নারী তখনই গর্ভধারণ করেন যখন তার ডিম্বাণু কোন একটি শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয়। একজন নারীর শরীর থেকে সাধারণত এক সময়ে একটি ডিম্বাণুই বের হয়। তবে পুরুষদের স্পার্ম বা শুক্রাণু অগণিত থাকে।

যদি কোন স্পার্ম বা শুক্রাণু একটি ডিম্বাণুকে গ্রহণ করতে পারে তাহলে গর্ভধারণ হয়। কিন্তু যদি একের অধিক ডিম্বাণু বের হয় এবং একের অধিক শুক্রাণু তাদেরকে গ্রহণ করে তাহলে একাধিক শিশু এক সাথে বেড়ে উঠে এবং এর কারণেই যমজ শিশু জন্মায়। তবে অনেক সময় একটি ডিম্বাণু থেকেও যমজ শিশুর জন্ম হতে পারে।

অধ্যাপক সুলতানা বলেন, এক্ষেত্রে একটি ডিম্বাণু একটি শুক্রাণুর সাথে মিলিত হওয়ার পর যখন দেহ গঠন শুরু হয় তখন কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটা কোষ ভেঙ্গে দুটো হয়। দুটো ভেঙ্গে চারটা হয়। এই সময়ে যদি এই কোষগুলো আলাদা হয়ে পড়ে এবং প্রতিটি কোষ আলাদাভাবে বেড়ে ওঠে তাহলে একই সাথে একাধিক শিশুর জন্ম হতে পারে।

কিভাবে গর্ভধারণ হলো তার উপর ভিত্তি করে যমজ দুই ধরণের হয়ে থাকে বলে জানান অধ্যাপক সুলতানা।

১. মনোজাইগোটিক টুইন
অর্থাৎ একটি ডিম্বাণু ভেঙ্গে যখন দুটি বা ততোধিক শিশুর জন্ম হয় তাকে মনোজাইগোটিক টুইন বলা হয়। এ ধরণের শিশুদের আইডেনটিক্যাল টুইনও বলা হয়। সাধারণত এরা দেখতে একই রকম হয় বা উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য থাকে। এরা সাধারণত একই লিঙ্গের হয়ে থাকে। অর্থাৎ হয় দুটো ছেলে বা দুটো মেয়ে হবে। এদের গায়ের রঙ, চুল ও চোখের রঙ, রক্তের গ্রুপ সবই এক হয়ে থাকে। তবে এ ধরণের যমজ শিশুর সংখ্যা খুব একটা বেশি দেখা যায় না।

২. ফ্র্যাটার্নাল বা ডাইজাইগোটিক টুইন
এক্ষেত্রে দুটি ডিম্বাণু আলাদা দুটি শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয় এবং আলাদা আলাদা ভাবেই বেড়ে ওঠে তাকে ফ্র্যাটার্নাল বা ডাইজাইগোটিক টুইন বলা হয়। এক্ষেত্রে শিশুর লিঙ্গ এক হতেও পারে আবার নাও পারে। একটি ছেলে একটি মেয়ে হতে পারে। এরা দেখতে এক রকম হয় না। গায়ের রঙ বা রক্তের গ্রুপও আলাদা হতে পারে।

যমজ শিশুর গর্ভাবস্থায় যেসব ঝুঁকি 
যমজ শিশু নিয়ে গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্ম দেয়ার সময় তার ঝুঁকি সাধারণ গর্ভাবস্থার তুলনায় অনেক বেশি। যে কোন টুইন প্রেগনেন্সিকেই হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি বা উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন গর্ভাবস্থা বলে ধরে থাকেন  চিকিৎসকরা।

এ ধরণের গর্ভাবস্থার গর্ভপাতের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে বলে জানান অধ্যাপক সুলতানা। এর মধ্যে রয়েছে-

* গর্ভে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া, গর্ভে থাকা অবস্থায় একটি বাচ্চা বেঁচে থাকলেও আরেকটি মারা যাওয়ার মতো গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

* মায়ের দিক থেকে গর্ভধারণ করার কারণে যেসব শারীরিক সমস্যা যেমন বমি হওয়া, মাথা ঘোরা এগুলো অনেক বেশি হবে।

* উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিসও হতে পারে।

* গর্ভধারণ করলে বাচ্চার সাথে সাথে গর্ভফুল বা প্লাসেন্টাও বাড়তে থাকে। তবে দুটি বাচ্চা থাকার কারণে প্লাসেন্টা একটা সময় পরে গিয়ে আর বড় হতে পারে না। তখন রক্তপাত শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ, প্রসবের আগেই রক্তপাত শুরু হয়। এছাড়া প্রসবের পরেও মায়ের অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে।

অধ্যাপক সুলতানা বলেন, যদি কোন মা জানতে পারেন যে, তার গর্ভে যমজ শিশু রয়েছে তাহলে তাকে অবশ্যই বিশ্রামে থাকতে হবে। এছাড়া নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যাতে এ ধরণের কোন সমস্যা দেখা দিলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়।

যমজ শিশু জীবিত থাকার সম্ভাবনা
হিউম্যান রিপ্রোডাকশনে প্রকাশিত গবেষণায় জানা যায় যে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যমজ শিশুদের জীবিত থাকার হার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। সাব-সাহারা আফ্রিকা অঞ্চলে অনেক যমজ শিশুই জন্মের প্রথম বছরেই তাদের সহোদরকে হারায়। প্রতিবছর এই সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।

গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে যমজ শিশুর জন্মহারে বড় ভূমিকা রাখবে ভারত এবং চীন। মানুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, বেশি বয়সে গর্ভধারণ এবং আইভিএফ-এর মতো প্রযুক্তির কারণে যমজ শিশুর জন্মহার আরও বাড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

গাজীপুর কথা