ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

৫০ একর জমিতে সরিষা চাষ, সাড়ে ৭ লাখ টাকা লাভের আশা এনামের

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

৫০ একর জমিতে সরিষা চাষ, সাড়ে ৭ লাখ টাকা লাভের আশা এনামের

সরিষা চাষ

ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি, অনুকূল আবহাওয়া আর বাজারে চাহিদা ও ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সরিষা চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। মাত্র দেড় লাখ টাকা খরচে ৫০ একর জমিতে সরিষা চাষে সাড়ে সাত লাখ টাকা লাভের আশা করছেন কৃষক এনায়েত উল্যাহ এনাম।

এনায়েত উল্যাহ সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের কেরামতপুর গ্রামের মো. নবী আলমের ছেলে। পারিবারিকভাবে ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজে জড়িত এনায়েত উল্যাহ এনাম।

জানা যায়, স্বল্প সময়ে খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। স্থানীয়ভাবে তেলের ঘাটতি পূরণের জন্য কৃষি বিভাগ প্রণোদনা ছাড়াও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুবর্ণচর উপজেলায় মাঠ জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে খেতের পর খেত। ধান ও বিভিন্ন ডালের চেয়ে সরিষা চাষে বেশি লাভ হওয়ায় সরিষার প্রতি উৎসাহী হয়েছেন কৃষকরা। গতবারের ভালো ফলনে এবার বেড়েছে সরিষার চাষ। এবারও সরিষার ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। ফলে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০ অর্থবছরে সুবর্ণচর উপজেলায় ৩৪০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৫৩৬ জন কৃষক সরিষা চাষ করেছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ১০৫ হেক্টর এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১৮ হেক্টর। স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বারি সরিষা ১৪, ১৫, ১৭ ও বিনা ৯, ৪, ১১ ও টোরি ১৭ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও বাজারে সরিষার চাহিদা থাকায় চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন সরিষা চাষে। অনেকেই দো-ফসলি জমিতে সরিষা আবাদ করছেন।

এনায়েত উল্যাহ এনাম বলেন, প্রতি একরে ঝাড়াই মাড়াইসহ খরচ পড়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা এবং বিক্রি হয় ১৫ হাজার টাকায়। আমি মোট ৫০ একর করেছি তাতে আমার লাভ হবে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা। যারাই সরিষা করেছে সবাই লাভবান হবে।

সরিষা আবাদের কারণ জানতে চাইলে এনায়েত বলেন, আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়েছি। উত্তরবঙ্গের কৃষকরা সরিষা চাষ করে লাভবান হয়। এই বছর আমরাও লাভবান হচ্ছি। আগামীতে আরও বেশি কৃষক সরিষা চাষে আসবে এবং বেশি লাভবান হবে।

এনায়েত উল্যাহ আরও বলেন, গত বছর ধান করে চাষিরা অনেক ক্ষতির স্বীকার হয়েছে। পানির অভাবে ঋণের মধ্যে পড়তে হয়েছে। তাই এবার সরিষা করছি। মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে সরিষা হারভেস্ট করা যায় তাই আমাদের জন্য ভালো। এরপর জমিতে তিল চাষ করা যায়। এক কথায় দুই ফসল আবাদ করায় বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সরিষা আবাদে পরিচর্যা অনেক কম প্রয়োজন উল্লেখ করে এনায়েত উল্যাহ বলেন, সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি অফিস আমাকে স্যার, বীজ ও নানান পরামর্শ দিচ্ছেন। আমাদের এখানে সরিষা আবাদ একদম সহজ। এক চাষে সরিষা আবাদ হয়। মাঝখানে কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। আমাকে দেখে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছে। তারা আগামীতে সরিষা চাষ করবে বলে আমাকে জানিয়েছে। আমি মনে করি স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান ফসল হচ্ছে সরিষা।

পাশের জমির মালিক কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, এত সুন্দর সরিষা হবে জানলে আমিও দুই চার কানি আবাদ করতাম। কত মানুষ আসে ছবি তোলে, ভিডিও করে। ফলন ও খুব ভালো হয়েছে। এমন জানলে আমিও করতাম।

মমিনুর রহমান নামের আরেক কৃষক বলেন, এনাম ভাই গত বছর কম জমিতে আবাদ করলেও ভালো দাম পেয়েছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এ বছর উনি ৫০ একর করেছেন। এবারও ফলন ভালো হয়েছে। তেল ও বীজ বিক্রি করে ভালো দাম পাবেন তিনি। আমরা উনার কাছে পরামর্শ নিচ্ছি। আগামী বার সরিষা আবাদ করব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশীদ বলেন, চরক্লার্ক এনায়েত উল্যাহকে ৫০ একরে সরিষা চাষে আমরা বীজ দিয়েছি। এছাড়াও একটা অংশে বীজ, সার ও প্রযুক্তির সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। আমরা আশা করি কৃষকরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি সরিষা আবাদ আরও বেশি সম্প্রসারণ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে নির্দেশ প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদ করা সেই নির্দেশ শতভাগ বাস্তবায়ন হবে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে দেশীয় উৎপাদন খাত থেকে ৪০ শতাংশ ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হবে। ফলে বিদেশে থেকে আমদানি কমবে। ফলে আমরা অনেক বেশি লাভবান হব।