ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

নৃশংস সিরিয়াল কিলারের বিভৎস মৃত্যু, মারা যান আলোর অভাবে

প্রকাশিত: ১৪:০২, ৫ ডিসেম্বর ২০২২

নৃশংস সিরিয়াল কিলারের বিভৎস মৃত্যু, মারা যান আলোর অভাবে

নৃশংস সিরিয়াল কিলারের বিভৎস মৃত্যু, মারা যান আলোর অভাবে

সিরিয়াল কিলারদে আগমন ঘটে প্রাচীন যুগ থেকে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যীশু খ্রিষ্টের জন্মের বহু আগেই প্রাচীন রোমে লোকাস্টা নামে এক নারী বিষ দিয়ে মানুষদের হত্যা করতেন।

সিরিয়াল কিলাররা তাদের অপরাধ সংঘটিত করার পর ধরাও পড়তেন। বর্তমানে যেসব সিরিয়াল কিলার ধরা পড়েন তাদের তুলনায় অতীতের ধরা পড়া সিরিয়াল কিলারদের মৃত্যু অনেক বেশি কঠোর ছিল। সিরিয়াল কিলাররা মূলত তাদের হত্যার ধরণ ও নৃশংসতার কারনে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের নৃশংসতার ছাপ রেখে যান। তবে বেশ কিছু সিরিয়াল কিলাররা তাদের নৃশংসতা নয় বরং ধরা পড়ার পর তাদের তাদের নৃশংস মৃত্যুদন্ডের কারণে আজও চর্চিত বিষয় হয়ে আছেন।

আজ এমনই এক সিরিয়াল কিলারের বিভৎস মৃত্যুর কথা জানাব। আর এজন্য আমাদের ১৯ শতকের মরকেশ দেশে ফিরে যেতে হবে। (মারাকেশ এর অধুনা নাম মরক্কো, সেসময় মরক্কো ফ্রেঞ্চদের অধিনে থাকায় ফ্রেঞ্চরা তাদের ভাষায় মারাকেশ বলতো।)

 

১৯ শতকের মরক্কো দেশ

হাজ মোহাম্মদ মেসফিউই মরক্কোর সিরিয়াল কিলার ছিলেন। তিনি পেশায় ছিলেন একজন জুতার কারিগর। মরক্কোর তখনকার প্রধান শহর মারাক্কেশে নিজস্ব জুতার দোকান ছিল। ১৯ শতকে মারাকেশকে আফ্রিকা মহাদেশের বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসেবে দেখা হতো, তাই প্রচুর দেশি ও বিদেশি বণিক আসতেন। বাণিজ্যিক অঞ্চল হওয়ার এখানে অপরাধের পরিমান ও সংঘটিত হতো প্রচুর।

১৯০২ সালে এই শহর থেকে ১০ জন নারী রাতারাতি নিখোঁজ হয়ে যায়। তাদের নিখোঁজ হওয়ার পর কোনো চিহ্ন ও খুঁজে পায়নি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। ধারণা করা হচ্ছিল শহরে বাণিজ্য করতে আসা বণিক বা কোনো পর্যটকের দ্বারা এই নারীরা অপহরণ হয়ে থাকতে পারেন। হাজ মোহাম্মদ মেসফিউই তখন শহরের মানুষের কাছে ভালোভাবেই পরিচিত ছিলেন। কারণ সেই সময়ে শহরে জুতার কারিগর ছিল গুটিকয়েক। যাই হোক তাদের কেউই তাকে মন থেকে পছন্দ করতো না। তার হাবভাব দেখে মানুষজনের রহস্যময় মনে হতো। মনে হতো কিছু না কিছু একটা সে আড়াল করছে।

 

 তিনি পেশায় ছিলেন একজন জুতার কারিগর ছিলেন

এর ঠিক চার বছর পর ১৯০৬ সালে আবারো একসঙ্গে অনেকগুলো নারী নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের সংখ্যাটা তখন ৩০ জন। এবার শহরে তদন্ত পুলিশ হন্য হয়ে খোঁজতে খোঁজতে হাজ মোহাম্মদ মেসফিউই এর জুতার দোকান থেকে নিখোঁজ ২৬ জন নারীর লাশ খুঁজে পায়। আর বাকি চার জন নারীর লাশ খুঁজে পায় তার বাড়ি থেকে। ধরা পড়ার পর পুলিশ স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাকে শারীরিক প্রহার শুরু করলে, সে নিজের সবাই অপকর্মের কথা স্বীকার করে। স্বীকারোক্তিতে সে বলেছিল, সে নারীদের রাতের খাবারের জন্য তার বাড়িতে নিয়ে যেত এবং পরে তাদের মাদক পান করিয়ে হত্যা করতো।

মেসফিউইকে সর্বমোট ৩৬ জন নারীকে হত্যার জন্য ক্রুশবিদ্ধ করে মৃত্যুদণ্ডের জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছিল। ১৯০৬ সালের ২ মে তারিখে আদালতের রায় সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। সে সময় মরক্কো তে অপরাধী কে ক্রুশবিদ্ধ করে মৃত্যু দেওয়া হতো, তাই ক্ষমতাসম্পন্ন কিছু বিদেশী কূটনীতিক মররোকান সরকারকে বিশ্বাস করিয়েছিলেন যে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বিংশ শতাব্দীর জন্য অত্যন্ত নৃশংস, তাই তারা পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তিনি মারা না যাওয়া পর্যন্ত তাকে প্রাচীর দিয়ে আটকে রাখা উচিত। প্রাচীর বলতে তাকে এমন ভাবে আটকে ফেলতে হবে যেখানে কোনো আলো বাতাস ও প্রবেশ করতে পারবে না।

 

এই পদ্ধতিতে একজন ব্যক্তিকে বন্দী করলে কিছুদিনের মধ্যেই বন্দী অনাহার বা অক্সিজেন ও আলোর অভাবে মারা যাবে

এই পদ্ধতিতে একজন ব্যক্তিকে বন্দী করলে কিছুদিনের মধ্যেই বন্দী অনাহার বা অক্সিজেন ও আলোর অভাবে মারা যাবে। ১৯০৬ সালের ১১ জুন মেসফিউইকে জীবিত দেয়ালে বন্দী করা হয়েছিল। সেই সময়ের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে তিনি দুই অনবরত কান্নাকাটি করেছিলেন দেয়ালের ভেতর এবং পরের দিন তিনি মারা যান। সমসাময়িক ইতিহাসবিদরা বলছেন যে ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা নেই যেখানে মানুষকে জীবন্ত দেয়ালে বেঁধে রাখা হয়েছে, এবং সবশেষে তার মৃত্যু হয়েছে।