ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৮ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

আগাম শীতের সবজি চাষাবাদে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশিত: ১০:১৫, ৫ ডিসেম্বর ২০২২

আগাম শীতের সবজি চাষাবাদে কৃষকের মুখে হাসি

আগাম শীতের সবজি চাষাবাদে কৃষকের মুখে হাসি

হরেকরকম শীতের সবজিতে সয়লাব রাজধানীর কেরানীগঞ্জ উপজেলার হযরতপুর, রোহিতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, কোন্ডা, তেঘরিয়া ও বাস্তা ইউনিয়ন। বেগুন, মুলা, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজিতে ভরে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ক্ষেত।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই উপজেলায় উৎপাদিত সবজি স্থানীয়দের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় বাজারে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হযরতপুর ইউনিয়নের কানারচর, কদমতলী, আলিপুর, লংকারচর, ছয়ঘড়িয়াকান্দি, রসুলপুর, ঢালিকান্দি, মানিকনগর, রাধাকান্তপুর, জগন্নাথপুর, মধুরচর ও কোন্ডা ইউনিয়নের আইন্তা পূর্ব, মির্জাপুর, মনুরবাগ, ব্রাহ্মণগাঁও, কাজিরগাঁও, জাজিরা, নতুন বাক্তার চর ও রোহিতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, তেঘরিয়া ও বাস্তা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কয়েক লক্ষাধিক কৃষক শীতের সবজি চাষ করেছেন। নতুন চারা রোপণ, পরিচর্যা, সবজি তুলে বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মৌসুমে সবজি বিক্রি করে জমির খাজনা, পূর্বের ধার পরিশোধের পাশাপাশি পুরো বছরের সঞ্চয় করে নিবেন অনেকে। তাই এখন বসে থাকার সময় নেই। এই শীত মৌসুমেই একই জমিতে কয়েকবার সবজির চাষাবাদ করবেন তারা। এর মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে ধনে পাতার সঙ্গে ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচা মরিচ ও বেগুন চাষ করছেন।

এদিকে, বিষমুক্ত সবজি চাষে হযরতপুর ইউনিয়ন ইতোমধ্যে রোল মডেল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে বলে জানা গেছে। প্রতিদিন ভোরে পাইকারি ক্রেতারা রাজধানীর আশপাশের সবচেয়ে বড় সবজি বাজার রোহিতপুর, হযরতপুর এলাকা থেকে ট্রাকযোগে সবজি নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন স্থানে। এ ছাড়া বিভিন্ন বাজারে টাটকা সবজি কিনতে প্রতিদিন ভোরে ভিড় করেন স্থানীয়রাও।

প্রান্তিক কৃষক কাশেম মিয়া গত তিন বছর ধরে দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সেখানে সবজি চাষ করছেন। চলতি মৌসুমে তিনি শীতের আগেই শীতকালীন সবজি ফুলকপি ও শিম চাষ করেছেন। এর মধ্যে এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ফুলকপি এবং ১৬ শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন। গত ১৫ দিন ধরে কাশেম তার ক্ষেতের শিম ও ফুলকপি বিক্রি করছেন। প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা করে এবং ১১০ টাকা কেজি দরে পাইকারি শিম বিক্রি করছেন তিনি।

কাশেম মিয়া বলেন, আগে অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চলত। গত চার বছর আগে অন্যের জমি লিজ নিয়ে ধান আবাদ করি। প্রথম বছর ধানের দাম কম থাকায় খরচ উঠেনি। পরের বছর সবজি চাষ শুরু করি। সবজি চাষাবাদ করে খরচ বাদে লাভের মুখ দেখি। এখন সারাবছরই কোনো না কোনো সবজি চাষ করি। তবে শীতকালীন সবজি চাষে লাভ বেশি। শীতের সবজি শীতকালের আগে বাজারে উঠলে তিন থেকে চারগুণ বেশি লাভ পাওয়া যায়।

কৃষক রহম আলী জানান, আগাম শীতকালীন সবজিতে লাভ হয় বেশি। তাই রাধাকান্তপুর গ্রামের কৃষকরা আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। ইতোমধ্যে আগাম শীতকালীন সবজি হিসেবে তিনি দুইবার মুলা চাষ করে বিক্রি শেষ করেছেন। শীত যত বেশি পড়বে, সবজিও তত বেশি আসবে বাজারে। শীতের মাঝামাঝি সময় সব রকমের সবজি একই সঙ্গে বাজারে তুলেন কৃষকরা। এতে সবজির ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় না। তাই আগে যারা সবজি বিক্রি করতে পারেন, তারাই বেশি লাভবান হন। তিনিও মুলা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছেন। বর্তমানে তিনি একই জমিতে তৃতীয়বারের মতো মুলা চাষ শেষ করে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা রোপণ করেছেন বলে জানান।

কৃষক সেটু জানান, শীতকালীন সবজি স্বাদে, গুণে অতুলনীয় হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষে বেশি মনোনিবেশ করেন। অর্থও বিনিয়োগ করেন বেশি। রোহিতপুর এলাকায় গেলেই দেখা যায় শত শত কৃষকের ব্যস্ততা।

ছয়ঘড়িয়াকান্দি গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, আমি প্রতিবছর শীতকালীন শসা, টমেটো সবজি চাষ করি এবং বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারি। এ বছর আট একর জমিতে শসা ও টমেটোর ক্ষেত করেছি, যদি ফলন ভালো হয়, তাহলে আশা করি, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি লাভবান হব।

কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে লাউ শাক চাষ করেছি। শাকের ফলন খুব ভালো হয়েছে। কিছুদিন পর এই লাউ শাক বিক্রি করে ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ হবে।

গ্রামের কৃষক হেলাল মিয়া বলেন, শীতের শুরুতে শীতকালীন সবজি বাজারে তুলতে পারলে দাম ভালো পাওয়া যায়। পাশাপাশি বাজারে চাহিদা থাকার কারণে তিনি এ বছর শীতকালীন সবজি হিসেবে লাউ, শিম ও বেগুনের চাষ করেছেন। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এসব আগাম সবজি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল আমীন জানান, প্রতি মৌসুমে হযরতপুর, কোন্ডা, রোহিতপুর, বাস্তা ইউনিয়নে শীতকালীন সবজির ভালো চাষাবাদ হয়। এখানকার সবজি স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় চাহিদাও বেশি।

তিনি বলেন, গত মৌসুমে এই কেরানীগঞ্জে তিন হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হয়েছিল। চলতি বছরও সমপরিমাণ জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে এখানকার কৃষকদের মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে।