ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

যে গ্রামে সবাই অন্ধ

প্রকাশিত: ১৭:৫৯, ২৪ জানুয়ারি ২০২২

যে গ্রামে সবাই অন্ধ

গুপি গায়েন বাঘা বায়েনে সত্যজিৎ রায় শুন্ডি দেশের ছবি এঁকেছিলেন। সে দেশে সবাই ছিল বোবা। কোনো এক অভিশাপের আঁচড়ে কেউ কথা বলতে পারত না। আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিত মনের কথা। কিন্তু সে দেশ ছিল কাল্পনিক। বাস্তবে এমন হয় নাকি!

না, বাস্তবের অভিশপ্ত গ্রামে কেউ মুখের বুলি হারিয়ে ফেলেনি ঠিকই, তবে এমন গ্রাম সত্যিই আছে যেখানে কেউ চোখে দেখতে পান না। সবাই অন্ধ। এমনকী সে গ্রামে পশু-পাখিরাও দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে এক নিমেষে।

 

 

কোন সে গ্রাম? কেনই বা সেখানে এমন হয়?

মেক্সিকোতে আছে এমন গ্রাম। সেই টিলটেপেক গ্রামকে অনেকে বলেন অভিশপ্ত। কারণ সেখানকার গ্রামবাসীরা চোখে দেখতে পান না কেউ। এ কোনো জিনগত কারণ নয়। জন্ম থেকে তারা অন্ধ হননি। গ্রামের বিষাক্ত আলো হাওয়া লেগেই সবাই হারিয়ে ফেলেন দৃষ্টিশক্তি। আর এমন গ্রাম নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত মেক্সিকো প্রশাসনও।

জানা যায়, টিলটেপেক গ্রামে যে শিশুরা জন্ম নেয় তারা সুস্থ সবল থাকে প্রথমদিকে। চোখও ফোটে তাদের আর পাঁচটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতোই। কিন্তু জন্মের এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যেই ওই শিশুরা ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলতে থাকে। চোখে একসময় আর তারা কিছুই দেখতে পায় না। সব অন্ধকার।

 

 

কেন এমন হয় মেক্সিকোর এই গ্রামে? সত্যিই কি কোনো অভিশাপ রয়েছে এর পিছনে?

টিলটেপেক গ্রামের বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, অভিশাপের থিওরিই। তাদের বক্তব্য, ওই গ্রামে রয়েছে এমন একটি গাছ, যা এই অন্ধত্বের জন্য দায়ী। সেই অভিশপ্ত গাছের কারণেই চোখে তারা দেখতে পান না। গাছটির নাম, লাবজুয়েলা। গ্রামবাসীদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে ওই বিশেষ গাছটির দিকে কেউ তাকালে, সঙ্গে সঙ্গে সে অন্ধ হয়ে যায়। এমনকী পশু-পাখিও তার ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। আর সেই কারণেই গাছটিকে কেটে ফেলার উপায়ও নেই।

 

 

তবে লাবজুয়েলা গাছকে অন্ধত্বের কারণ হিসেবে মানতে নারাজ বিজ্ঞানীরা। তারা বলেন, টিলটেপেক গ্রামের মানুষদের এ এক অন্ধ বিশ্বাস যে লাবজুয়েলা থেকে তাদের চোখ খারাপ হয়। আসলে এই অন্ধত্বের কারণ অন্য। বিজ্ঞানীরা এর জন্য দায়ী করেন বিষাক্ত একপ্রকার মাছিকে। তারা বলেন, টিলটেপেক গ্রামের বাতাসে ওই মাছি ঘুরে বেড়ায়। গ্রামবাসী এবং ওই গ্রামের পশুপাখিকেও কামড়ে দেয় সে। আর অন্ধত্বের রহস্য সেই মাছিতেই আছে লুকিয়ে। ওই মাছির বিষ শরীরে প্রবেশ করলেই দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করে মানুষের।

 

 

ছোট্ট গ্রাম টিলটেপেক। মেরেকেটে ৭০ ঘর মানুষের বাস, জনসংখ্যা ৩০০র বেশি হবে না। এ গ্রামের বাড়িঘরগুলোতে একটাই দরজা থাকে, কোনো জানলা বানানো হয় না। দিন-রাত অন্ধকারে ডুবে থাকে মেক্সিকোর টিলটেপেক।

তবে এ গ্রামে আছে তেমন দু-এক জন সৌভাগ্যবান, মাছি যাদের দৃষ্টিশক্তি একেবারে কেড়ে নিতে পারেনি। তাদের কাঁধে ভর করেই বছর ঘুরে যায় টিলটেপেকে।

গাজীপুর কথা