ঢাকা,  মঙ্গলবার  ১৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

যেভাবে এলো বিশ্ব হার্ট দিবস

প্রকাশিত: ০৭:২১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

যেভাবে এলো বিশ্ব হার্ট দিবস

২৯ সেপ্টেম্বর, আজ বিশ্ব হার্ট দিবস। বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশসহ বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়। স্বাস্থ্যবিষয়ক দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম দিন হলো- বিশ্ব হার্ট দিবস। হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের বৃহত্তম একটি দিন এটি।

‘হৃদয় দিয়ে হৃদযন্ত্রের যত্ন নিন’এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিনটি বাংলাদেশেও উদযাপন করা হচ্ছে। বিশ্ব হৃৎপিণ্ড সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড হাৰ্ট ফেডারেশন (ইংরেজি) ১৯৭১ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থিত একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান।

১৯৭৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব কাৰ্ডিওলজি এবং ১৯৭০ সালে স্থাপিত ইন্টারন্যাশনাল কাৰ্ডিওলজি ফেডারেশন নামক প্রতিষ্ঠান দুটি একত্ৰিত হয়ে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি এণ্ড ফেডারেশন অব কাৰ্ডিওলজি গঠন করে। ১৯৯৮ সালে এর নাম পরিবর্তন করে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন রাখা হয়।

এই ফেডারেশন ওয়ৰ্ল্ড কংগ্রেস অব কাৰ্ডিওলজি অনুষ্ঠিত করে। ১৯৩৩ সালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের একটি প্ৰাথমিক ও অনানুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক সভা প্ৰাগে অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল কিন্তু মেক্সিকোতে হওয়া অন্তিম অনুষ্ঠানের পর থেকে, এডভেণ্ট অব নাজিম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য এই পালনে বাধার সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৫০ সালে প্রথমবার প্ৰকৃত ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

১৯৪৬ সালে স্থাপিত ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব কাৰ্ডিওলজি ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্যারিসে প্রথম 'ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব কাৰ্ডিওলজি" অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল। পরবর্তী কংগ্রেসগুলো ২০০৬ সাল থেকে ৪ বছর অন্তর পালন করে আসা হচ্ছিল, তারপর থেকে এটি দুবছর অন্তর অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বিশ্ববাসীকে হৃদরোগ ও স্ট্রোক ইত্যাদি জীবননাশী রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ২০০০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবার বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা হতো।

এরপর ২০১১ সাল থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটি বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। বর্তমানে হৃদরোগ বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবছর প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের মৃত্যু হয় এই রোগে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ দুই কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্ব হার্ট দিবস স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পালন করতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। এ বছরের বিশ্ব হার্ট দিবসের মূল বিষয়ও তাই। এই দিন নিজের কাছে প্রতিশ্রুতি পালনের দিন। নিজেকে আরো সক্রিয় রাখা, আরো বেশি ব্যায়াম করা, আরো বেশি করে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অঙ্গীকার করা এবং ধূমপান ছাড়া আজকের দিনের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত।

স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হার্ট সুস্থ রাখাই বিশ্ব হার্ট দিবসের মূল প্রচারণা। পাশাপাশি নীতি-নির্ধারকদের জন্যও এই দিনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, যাতে নানা হৃদরোগ ও তার চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ মানুষ আরো বেশি সচেতন হয়। যদি আপনার হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তবে এর অর্থ হলো, আপনারও হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে। ধূমপান, জাঙ্ক ফুড এবং ব্যায়ামের অভাব এই ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে তোলে।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সুস্থ জীবনযাপন করে আপনি আপনার নিজের হার্টের যত্ন নিতে পারেন। হৃদরোগে ভোগা ব্যক্তিদের অবশ্যই নিয়মিতভাবে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা যাচাই করা উচিত। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খাবারের ধরন ও পরিমাণ নিয়ে সচেতন হতে হবে। খাদ্যের মধ্যে আরো বেশি সবজি এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আপনার হার্টের যত্ন নেয়ার জন্য এমন খাবার খেতে হবে, যাতে তেল-চর্বির মাত্রা কম রয়েছে।

বর্তমানে হৃদরোগ বাংলাদেশে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। তাই এ রোগ প্রতিরোধে সবার আগে হৃদ-স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যে কোনো রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। হৃদরোগের ক্ষেত্রে তা বেশি প্রযোজ্য। এ বছর বিশ্ব হার্ট দিবস পালনের মধ্য দিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধে আমাদের হার্টের যত্ন নেয়ার জন্য কয়েকটা বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। সেগুলো হলো, নিজের হার্টের যেমন যত্ন নিতে হবে, তেমনি অন্যের হার্টেরও যত্ন নিতে হবে।

প্রতিদিন টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করুন। তেল হচ্ছে আমাদের নিত্যদিনের খাবারের এক অপরিহার্য উপাদান। চর্বি আমাদের শরীরের এক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। পরিমিত চর্বিযুক্ত খাবার আমাদের শরীরে শক্তি জোগায়। কিন্তু অতিরিক্ত তেলে ভাজা বা চর্বিযুক্ত খাবার হার্টের জন্য ক্ষতিকর। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা উচিত।

৪০ বছর বয়সের পর নিয়মিত পরীক্ষা করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল আছে কিনা, দেখতে হবে এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

গাজীপুর কথা