ঢাকা,  মঙ্গলবার  ১৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

এবার বাঁশ থেকে চাল উৎপাদন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১২ জুলাই ২০২১

এবার বাঁশ থেকে চাল উৎপাদন

বাঁশ যে শুধু বাড়িঘর বানাতেই কাজে লাগে তা কিন্তু নয়। এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে মানুষ জেনেছে বহুকাল আগে থেকেই। বাঁশ রান্না করে খাওয়া কিংবা বাঁশের ভেতর মুরগি, চাল রান্না করার প্রচলন পাহাড়ি এলাকায় বহু প্রাচীন।

তবে এই বাঁশকে আরো বেশি উন্নত করতে তৈরি হয়েছে বাঁশের বোতল। এরপর গত বছর ত্রিপুরার এক উদ্ভাবক বাঁশ কোঁড়লের বিস্কুট তৈরি করেন। সম্প্রতি এই রাজ্যেই বাঁশের বীজ থেকে চাল তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবিত হলো।

ত্রিপুরা ব্যাম্বো মিশনের ফিল্ড অফিসার সমীর জমাতিয়ার হাত ধরে বাঁশের চালের পরিচিত ঘটলো ত্রিপুরা রাজ্যে। নতুন উদ্ভাবিত এই বাঁশের চালের কথা এরইমধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত পৌঁছেছে দিয়েছেন সমীর জমাতিয়া। তিনি এই বিষয়ে সবার প্রথম কথা বলেন সমীর জমাতিয়া। তিনি জানান, বহু প্রাচীনকাল থেকে ত্রিপুরার বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ পাহাড়ের বাঁশ বাগান থেকে বীজ সংগ্রহ করতেন। এগুলো থেকে চাল বের করে নিজেরাই খেতেন। তবে এবার এই চাল বাণিজ্যিকভাবে বাজারে নিয়ে আসার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

আগে জনজাতিরা বাঁশ বীজকে চিরাচরিতভাবে ঢেঁকিতে ভেঙে চাল বের করা হতো। প্রথমবারের মতো মেশিনে এগুলোকে ভাঙানো হয়েছে এবং খুব সুন্দর চাল হয়েছে। বাঁশের মতো বাঁশের চালেও সুগার, কোলেস্টরেল এবং ফ্যাট কম থাকে এবং প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ।
বাঁশের চাল মূলত মরা বাঁশের অঙ্কুরিত বীজ, যা একটি বাঁশের জীবনকালের শেষ দিকে হয়। যেখান থেকে এই চাল সংগ্রহ করা হয় সেই বয়স্ক গাছে ফুল ধরতে অনেক বছর লাগে। তাই এই চাল সহজলভ্য নয়। মুলিবাঁশের ফল অপেক্ষাকৃত বড় এবং আপেল আকৃতির হয় তাই এই প্রজাতির বাঁশ ছাড়া বাকি সব প্রজাতির বাঁশ থেকে চাল পাওয়া যায়। ত্রিপুরা রাজ্যে মোট ২০ প্রজাতির বাঁশ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে।

প্রাথমিকভাবে প্রতি কেজি বাঁশচালের দাম ছয় হাজার রুপি করে ধার্য করা হয়েছে। এই চাল সম্পূর্ণরূপে অর্গানিক কারণ এগুলো জমিতে কেউ চাষ করেনি জঙ্গলের বাঁশ থেকে সংগ্রহ করা। বাঁশের বোতল, কোঁড়লের বিস্কুটের মতো বাঁশ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশাবাদী উদ্ভাবকরা। তবে বাঁশচাল কিছুটা দুর্লভ, কারণ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রজাতির ঘাস। তাই ঘাসের মতো একবার ফুল ও বীজ ধরার পর পুরো বাঁশ বাগান মারা যায়। আর কোঁড়ল থেকে সৃষ্টি হওয়া বাঁশ বাগানে ফুল ও ফল ধরতে সর্বোচ্চ ৪০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এসব কারণে বাঁশচাল দুর্লভ একটি সামগ্রী। তবে চাইলে আরও কম সময়ে বাঁশ বনে ফুল ও ফল ধরানো সম্ভব। সেটা হচ্ছে কাটিং পদ্ধতি।

একটি ৩৫ বছর বয়স্ক বাঁশ থেকে যদি কাটিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা হয় তবে, ৫ বছরের মাথায় বাঁশের বাগানে ফল ধরানো সম্ভব। বাঁশের চারা লাগানোর পরের বছরই একটি চারা থেকে ৬ থেকে ১০ পর্যন্ত কোঁড়ল বের হয়। একটি কোঁড়ল এক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাঁশে পরিণত হয়। ফলে ৫ বছরেই ফল ধরবে, বাঁশের আরও একটি বৈশিষ্ট হচ্ছে বাগানের সবকটি গাছে এক মৌসুমে ফুল ও ফল ধরে। তাই কাটিং করা বাঁশের চারা থেকে বাণিজ্যিকভাবে অল্প সময়ে বীজ পাওয়া সম্ভব হবে বলেও জানান সমীর জমাতিয়া। সবমিলিয়ে বাঁশকে কেন্দ্র করে আরও একটি সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক দিকের উন্মোচন হলো।

রান্নার ক্ষেত্রে এটা অন্য চালের মতোই এবং এর স্বাদ খুবই মিষ্টি। রান্নার পর যে গঠনগত উৎকর্ষতা পাওয়া যায় সেখানেই এর ভিন্নতা রয়েছে। এটা বেশি চিবাতে হয় ও ভেজাভেজা ভাব থাকে এবং এই চাল খিচুড়ি রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় বেশি।
এক গবেষণায় বলা হয়, এতে যে কোনো ধরনের চাল ও গমের চেয়েও উচ্চমাত্রায় প্রোটিন রয়েছে। একই সঙ্গে এটি হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, পিঠের ব্যথা ও বাতজনিত ব্যথার জন্য খুবই উপকারী। যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে তারা বাঁশের চাল নিয়মিত খেলে এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এটার ডায়বেটিস প্রতিরোধের গুণ আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন ওষুধি গুণ থাকার কারণে বাঁশের চাল তাদের কাছে দারুন পছন্দের হতে পারে। এই চাল গর্ভবতী মায়ের জন্য ভিটামিনের অভাব পূরণে খুবেই উপকারী এবং কফ, পিত্ত দোষের মতো সমস্যাগুলো নিরাময়ের জন্যও খুব কার্যকরী।
এটি খাবারের জগতে নতুন, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারে ভরপুর। যদিও গবেষকরা এর ব্যাপক সম্ভবনার বিষয়টি অনুভব করলেও ব্যবসায়ীরা ভাবছেন- সময়ই বলে দেবে মানুষ এটা পছন্দ করবে কিনা।

গাজীপুর কথা