ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৮ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

চেতনা অবিনশ্বর

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৬ জুন ২০২১

চেতনা অবিনশ্বর

মানবদেহের ৫০ থেকে ৭০ ট্রিলিয়ন সেলের প্রতিটিতেই রয়েছে তিন বিলিয়ন জেনেটিক বিট (Genetic Bits) এর পুরো সেট। প্রতিটি সেলের ডিএনএ-ই একটি অপরটির কার্বন কপি। ব্রেন নিউরোন এবং ত্বকের সেল জেনেটিকভাবে একই। একই ডিএনএ থেকে তৈরি হওয়া সত্ত্বেও তাদের কাজ ও আয়ুষ্কাল ভিন্ন।

একই ডিএনএ দুর্বোধ্য পন্থায় শরীরের সকল ধরনের সেল যথা হাড়, লিভার, কিডনি, হার্ট প্রভৃতির সেল নির্মাণ করছে। আর এ সেলগুলোর প্রতিটির নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল রয়েছে। শুধুমাত্র সেলের দিকে তাকিয়ে এর আয়ুষ্কাল বলা যায় না। যেমন ব্রেনের নিউরোন এবং নাকের ওলফ্যাক্টরি সেল দেখতে একই রকম। কিন্তু নিউরোনের আয়ু বহু বছর হলেও ওলফ্যাক্টরি সেল পরিবর্তিত হয় চার সপ্তাহে।

প্রতিটি সেল বিভিন্ন পরমাণু দ্বারা গঠিত, যা কার্যত উড়ে বেড়ায়। ফুসফুসে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বদল হতে লাগে এক সেকেন্ডের হাজার ভাগের কয়েকভাগ সময়। ব্রেন নিউরোন থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৩০০ বার সোডিয়াম ও পটাশিয়াম আয়ন পাম্প করে ঢোকানো ও বের করা হয়। রক্ত থেকে অক্সিজেন শোষণ করতে হার্ট মাসলের সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড মাত্র। নদীর মতো আপনার শরীরের সবকিছুই নিয়ত প্রবাহমান। দেহের সবকিছুই বদলে যাচ্ছে। পাকস্থলীর আস্তর পরিবর্তিত হয় পাঁচ দিনে, ত্বক পাঁচ সপ্তাহে, রক্তের লোহিত কণিকা ৪ মাসে, হাড়ের সেল প্রতি তিন মাসে, লিভার সেলের বদলাতে কয়েক বছর লাগে, ব্রেন সেল বদলায় না। 

আপনার শরীরের অক্সিজেন, কার্বন, হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেনের প্রবাহ এত দ্রুত যে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আপনি পুরোপুরি নতুন হয়ে যেতেন। শুধু লোহা, ম্যাগনেশিয়াম ও তামার মতো ভারী পদার্থ এই প্রক্রিয়াকে ধীর করেছে। তারপরও ক্যালিফোর্নিয়ার ওক রিজ ল্যাবরেটরিতে রেডিও আইসোটোপ পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে যে, প্রতিবছর আমাদের শরীরের শতকরা ৯৮ ভাগ এটম বা পরমাণু পরিবর্তিত হয়। কিন্তু এই ক্রমাগত বস্তুগত পরিবর্তন সত্ত্বেও আপনার দেহের কোনো অঙ্গের আকার বা পরিচয় বা আপনার আকার বা পরিচয় কোনোভাবেই নষ্ট হয় নি। লিভার লিভারই রয়ে গেছে, পাকস্থলী পাকস্থলীই, কিডনি কিডনিই রয়ে গেছে। আর আপনি লক্ষ বছর ধরে সুস্পষ্ট মানব হিসেবেই রয়ে গেছেন। দেহের বস্তু বা পদার্থ আসছে, যাচ্ছে, কিন্তু জেনেটিক স্তরে আপনি স্থায়ী। আপনার ডিএনএ-র মূল তথ্য কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

এই ডিএনএ তৈরি করেছে জৈব ঘড়ি। আর এই জৈব ঘড়িই নিয়ন্ত্রণ করছে জাগরণ, নিদ্রা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, শরীরের তাপ, রক্তচাপ, যৌনতা ও বিভিন্ন হরমোনের প্রবাহে জোয়ারভাটায় প্রাণের সকল ছন্দ। হাইপোথ্যালামাসে অবস্থিত সুপ্রাচিয়াসমেটিক নিউক্লিয়াস নামে অভিহিত এক ক্ষুদ্র নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র চাকার ভেতরের চাকাকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেহের ২৮ দিনের মাসিক ঋতুচক্র থেকে শুরু করে তিন ঘণ্টা মেয়াদী প্রবৃদ্ধি হরমোন প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয় এই ক্ষুদ্র কেন্দ্র থেকে। এমনকি প্রতিটি জীবকোষ বা সেলের অভ্যন্তরে প্রতি সেকেন্ডে কয়েক হাজার বার যে রাসায়নিক ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়, তা-ও শরীরের এই মূল ঘড়ির ছন্দ ও নির্দেশনা অনুসরণ করে।

ডিএনএ-কে আপনি আরেক অর্থে বলতে পারেন আপনার জেনেটিক স্মৃতিভাণ্ডার। আপনি এখন ঠান্ডা বা অন্য কোনো রোগ থেকে নিরাময় লাভ করতে পারছেন, কারণ লক্ষ বছর আগে থেকে যে এন্টিবডি ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস-এর সাথে যুদ্ধ করতে শিখেছে, সেই এন্টিবডির স্মৃতি ও তথ্য আপনার থাইমাস গ্ল্যান্ডে সংরক্ষিত আছে। আপনার ইমিউন সিস্টেম হচ্ছে, পূর্ব পুরুষরা যেসব রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তার প্রতিটির তথ্য সম্বলিত এক বিশ্বকোষ। জ্বর, প্রদাহ, প্লেগ ইত্যাদিতে হাজার হাজার প্রজন্মের মৃত্যুর ফলে লব্ধ তথ্যের বিশ্বকোষের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে আপনার জীবন, আপনার প্রাণ।

লেখাটি কোয়ান্টাম মেথডের প্রবক্তা মহাজাতক এর মেডিটেশন বই থেকে সংগৃহীত

গাজীপুর কথা