ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

১৮ অক্টোবর, ব্যান্ড লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ১৭ অক্টোবর ২০২১

১৮ অক্টোবর, ব্যান্ড লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুবার্ষিকী

ব্যান্ড লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু। আধুনিক গান দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছিলেন। সফলতা পেয়েছিলেন চলচ্চিত্রের গানেও। আর এসব গানে তিনি বেঁচে থাকবেন যুগ-যুগান্তর। আজ এ গিটার জাদুকরের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৮ সালের এই দিনে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। তাকে নিয়ে লিখেছেন তারেক আনন্দ

গিটার জাদুকরহীন তিন বছর
আজ রক লিজেন্ডের চলে যাওয়ার তিন বছর। ২০১৮ সালের এই দিনে অগণিত ভক্ত-শ্রোতাকে কাঁদিয়ে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই গিটার জাদুকর। আইয়ুব বাচ্চু নেই। তিনি আর মঞ্চে উঠবেন না। গিটার হাতে বাজাবেন না; কিন্তু গিটারের মূর্ছনায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবেন যুগের পর যুগ।

স্মরণ
আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মিউজিসিয়ানস ক্লাবের উদ্যোগে রাজধানীর মগবাজারের সেলিব্রেশন কমিউনিটি পয়েন্টে আইয়ুব বাচ্চুর আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ও দূরবীন ব্যান্ডের দলনেতা সৈয়দ শহিদ জানান, আমরা প্রতিবছর আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ আয়োজন করে যাব। এ ছাড়াও পারিবারিকভাবে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার তাকে স্মরণ করবে।

শৈশব-কৈশর
স্বাধীনতা-পরবর্তীসময়ে আইয়ুব বাচ্চুর বাবা ইশহাক চৌধুরী চট্টগ্রাম শহরের জুবীলি রোড এলাকায় একটি বাড়ি কেনেন। এখানেই রক লিজেন্ডের শৈশব-কৈশর অতিবাহিত হয়। ১১তম জন্মদিনে বাবা তাকে একটি গিটার উপহার দেন। কৈশর জীবনের শুরুর দিকেই ব্যান্ডের গান শোনা শুরু করেন। ওই সময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় রক ব্যান্ড লেড জেপলিন, ডিপ পার্পল, কুইন, দ্য জিমি হেনড্রিক্স এক্সপেরিয়েন্সের গানে মুগ্ধ হন। আইয়ুব বাচ্চুকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে জিমি হেনড্রিক্সের গিটার বাজানো।

স্কুল-কলেজ
১৯৭৫ সালে আইয়ুব বাচ্চু ভর্তি হন সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলে পড়াকালে এক বন্ধুর কাছ থেকে ইলেকট্রিক গিটার ধার করে নিয়ে বাজাতেন তিনি। সেটি ছিল একটি টিস্কো গিটার। গিটারের প্রতি এত আগ্রহ দেখে ওই বন্ধু তাকে গিটারটি উপহার দেন। আইয়ুব বাচ্চু গিটার শিখেছেন জেকব ডায়াজের কাছে। কলেজ জীবনেই সহপাঠী-বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল গোল্ডেন বয়েজ। পরে নাম বদলে রাখা হয় আগলি বয়েজ। সেই ব্যান্ডের গায়ক ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ এবং বাচ্চু ছিলেন গিটারিস্ট।

সংগীত জীবন
১৯৭৭ সালে গিটার বাদক হিসেবে যোগ দেন ব্যান্ডদল ফিলিংস-এ। তিন বছর পর ১৯৮০ সালে ফিলিংস থেকে সোলসে। তাকে সোলসে নিয়েছিলেন নবীক খান ও তপন চৌধুরী। চট্টগ্রামে ফিলিংসয়ের একটি অনুষ্ঠানে সোলস ব্যান্ডের নকীব খান আইয়ুব বাচ্চুর গিটার বাজানো দেখে মুগ্ধ হন। সোলসের গায়ক তপন চৌধুরী বাচ্চুর ব্যাপারে জানান, তপন চৌধুরীও বাচ্চুর গিটারের মূর্ছনায় অভিভূত হন। পরবর্তী দশ বছর মূল গিটার বাদক এবং অনিয়মিত গায়ক হিসেবে সোলসসের সঙ্গে ছিলেন। সোলসের চারটি অ্যালবামে কাজ করেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। সুপার সোলস (১৯৮২), কলেজের করিডোরে (১৯৮৫), মানুষ মাটির কাছাকাছি (১৯৮৭) এবং ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট (১৯৮৮)।

এলআরবির পথচলা
সোলস ছেড়ে ১৯৯১ সালে এসআই টুটুল (কীবোর্ড), সাইদুল হাসান স্বপন (বেজ গিটার) এবং হাবিব আনোয়ার জয়কে (ড্রামস) সঙ্গে নিয়ে গঠন করেন লিটল রিভার ব্যান্ড, যা পরবর্তী সময়ে লাভ রানস ব্লাইন্ড। সংক্ষেপে যা এলআরবি নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৯১ সালের এপ্রিলে এলআরবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কনসার্ট করে। ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে প্রথম ডাবল অ্যালবামÑ এলআরবি-১ এবং এলআরবি-২ প্রকাশ হয়। অ্যালবাম প্রকাশের পরই শ্রোতাহৃদয়ে এলআরবি নামটা গেঁথে যায়। এর পর একে একে প্রকাশ হতে থাকে অ্যালবাম। এলআরবির গান মানেই ছিল উন্মাদনা। তাদের তৃতীয় অ্যালবাম সুখ (১৯৯৩) ছিল অন্যতম ব্যবসাসফল অ্যালবাম। ব্যান্ডের বাইরেও আইয়ুব বাচ্চুর অসংখ্য গান পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা।

অ্যালবাম
এলআরবি-১ ও এলআরবি-২ (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০১), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নাই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৭), যুদ্ধ (২০১২)। ব্যান্ডের অ্যালবাম ছাড়াও আইয়ুব বাচ্চু প্রকাশ করেছেন একক অ্যালবাম। একক অ্যালবামের গানগুলোও শ্রোতাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। একক অ্যালবামের মধ্যে রয়েছেÑ রক্ত গোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি! (২০০২) দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯) এবং জীবনের গল্প (২০১৫)।

কালজয়ী গান
অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ ‘চলো বদলে যাই’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘রুপালি গিটার’, ‘মেয়ে’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘সুখের এ পৃথিবী’, ‘ফেরারী মন’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’, ‘বাংলাদেশ’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘এক আকাশের তারা’, ‘সেই তারা ভরা রাতে’, ‘কবিতা’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘তিন পুরুষ’, ‘যেওনা চলে বন্ধু’, ‘বেলা শেষে ফিরে এসে’ প্রমুখ।

গাজীপুর কথা